কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি : যেন ভূতুড়ে কাণ্ড ৷ লকারের চাবি আছে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের কাছে । অথচ শহরের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার লকার থেকে উধাও প্রায় এক কোটি টাকার সোনার গয়না । ব্যাঙ্কের লকার খুলতেই মাথায় হাত গ্রাহকদের ৷ এই ঘটনা কে বা কারা ঘটাল ? তিনটি আলাদা ব্যাঙ্ক, শাখাও আলাদা, তিনটি আলাদা লকার, স্বাভাবিক ভাবে গ্রাহকরাও একে অপরের পরিচিত নন ৷ কিন্তু কোনও একটি অদৃশ্য কারণে তিন গ্রাহকেরই লকার থেকে উধাও প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের সোনার গয়না ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে মাথায় হাত পড়েছে গোয়েন্দাদের ৷
এই ঘটনায় প্রথম অভিযোগ দায়ের হয় হেয়ার স্ট্রিট থানায় 4 ফেব্রুয়ারি ৷ অভিযোগকারী হলেন হাসমুখ রাই ডি প্যাটেল ৷ নাগতলা লেনের বাসিন্দা ৷ তবে দীর্ঘদিন ধরেই সস্ত্রীক মুম্বইয়ে থাকতেন ৷ হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকারা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লকার ছিল তাঁর ৷ 3 ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কে গিয়ে লকার খুলতেই চোখ কপালে ওঠে বছর 70-এর ওই বৃদ্ধের ৷ লকার খুলতেই দেখতে পান লকার খালি ৷ ওই লকারে প্রায় 25 লাখ টাকার সোনার গয়না ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন হাসমুখ ডি প্যাটেল ৷ কিন্তু ওই দিন লকার খুলতেই দেখেন সোনার গয়না উধাও ৷ ওই শাখায় প্রায় 40 থেকে 50 বছর ধরে লকার আছে বলেও পুলিশকে জানান ওই বৃদ্ধ ৷
ওই ঘটনার আট দিনের মাথায় জানা গেল দ্বিতীয় ঘটনা ৷ দিনটা ছিল 13 ফেব্রুয়ারি ৷ দমদম রোডের বাসিন্দা স্বণালি দত্ত ৷ নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় একটি লকার ছিল স্বণালির ৷ ওই দিন সকালে ওই ব্যাঙ্কে গিয়ে লকার খুলতেই দেখেন লকারে থেকে উধাও সোনার গয়না৷ 14 ফেব্রুয়ারি লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা ৷ পুলিশকে জানান, তাঁর পাশাপাশি আরও দুই আত্মীয়ের গয়না ছিল ওই লকারে ৷ সব মিলে প্রায় 42 লাখ টাকার গয়না ৷ কিন্তু ওই দিন সকালে লকার খুলতেই দেখেন দুটি সোনার আঙটি ছাড়া আর কিছুই ছিল না ৷
পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুয়ায়ি তিন নম্বর অভিযোগটি দায়ের হয়েছে 16 ফেব্রুয়ারি ৷ স্বণালি দত্তের অভিযোগ দায়ের করার ঠিক একদিন বাদে ৷ কড়েয়া থানা এলাকায় ব্রড স্ট্রিটের বাসিন্দা ভীমচন্দ্র মাইতি ৷ পেশায় চিকিৎসক ৷ ভীমচন্দ্র মাইতি ও তাঁর স্ত্রী রেবা মাইতির একটি যৌথ লকার রয়েছে গড়িয়াহাট থানা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে । সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ওই দম্পতি । দেশে ফিরেই 15 ফেব্রুয়ারি গড়িয়াহাটের ওই ব্যাঙ্কে গিয়ে লকার খুলতেই দেখেন সেই একই দৃশ্য ৷ লকার খালি ৷ 16 ফেব্রুয়ারি গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি ৷ পুলিশকে ভীমচন্দ্র মাইতি জানান, লকারটি শেষবার খোলা হয়েছিল 2019 সালের মে মাসে । তারপরই তাঁরা বিদেশে চলে যান । পুলিশের কাছে দাবি করেন, ওই লকারের ভেতরে একটি স্টিলের বাক্স ছিল ৷ তাতেই রাখা ছিল প্রায় 300 গ্রাম সোনার গয়না । লকার খোলার সময় নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্ককর্মীর সামনে মাস্টার চাবি দিয়ে সেটি খোলা হয় লকার । প্রথমে মাস্টার চাবিও কাজ করছিল না বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন ভীমচন্দ্র ।
শহরে পর পর তিনটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তিনটি আলাদা লকার থেকে কোটি টাকার গয়না খোয়া যাওয়ায় উদ্বিগ্ন কলকাতাবাসী ৷ তিনটি আলাদা FIR হয়েছে তিনটি থানায় ৷ তার মধ্যে দুটি FIR-এ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যাঙ্ককর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ৷ খতিয়ে দেখা হচ্ছে CCTV ফুটেজ ।