কলকাতা, 15 জানুয়ারি : ডিসেম্বরের পুনরাবৃত্তি জানুয়ারিতেও ৷ খরচের বহর সামলাতে বছর শুরুতেও এক মাসে দু’বার ঋণ নিতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে (West Bengal Government) ৷ রিজার্ভ ব্যাংকের (Reserve Bank of India) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকেই সামনে এসেছে এই তথ্য ৷ তাতে বলা হয়েছে, আগামী 18 জানুয়ারি দেশের মোট 12টি রাজ্য সব মিলিয়ে বাজার থেকে 20 হাজার 659 কোটি টাকা ঋণ নিতে চলেছে ৷ এই 12টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ 1 হাজার কোটি টাকা ৷ উল্লেখ্য, এর আগে গত ডিসেম্বর মাসেও বাজার থেকে দু’দফায় ঋণ নিতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে ৷
আরও পড়ুন : TMC Constitutional Change : অভিষেককে মমতার ডেপুটি করতে সংবিধান বদল তৃণমূলের ?
তথ্য বলছে, গত 14 ডিসেম্বর মোট সাতটি রাজ্য বাজার থেকে 7 হাজার 53 কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল ৷ এই সাতটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ছিল সবথেকে বেশি, 2 হাজার 500 কোটি টাকা ৷ এর ঠিক 10 দিন পর গত 24 ডিসেম্বর আবার বাজারের সামনে হাত পাততে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে ৷ গত 24 ডিসেম্বর দেশের মোট 16টি রাজ্য সব মিলিয়ে 22 হাজার 984 কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল ৷ সেবারও পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ছিল সবথেকে বেশি, 4 হাজার কোটি টাকা ৷ এরপর নতুন বছর পড়তেই গত 6 জানুয়ারি ন’টি রাজ্য বাজার থেকে মোট 19 হাজার 340 কোটি টাকা ঋণ নেয় ৷ এবারও সর্বাধিক ঋণগ্রহীতা ছিল পশ্চিমবঙ্গ ৷ ঋণের পরিমাণ 2 হাজার 500 কোটি টাকা ৷ আর এবার আগামী 18 জানুয়ারি ফের বাজার থেকে টাকা ধার করবে বাংলার সরকার ৷ তবে এবার আর পশ্চিমবঙ্গ সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা নয় ৷ সেই জায়গা দখল করেছে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশ ৷ তারা ধার করছে 3 হাজার কোটি টাকা ৷
প্রসঙ্গত, 2011 সালে যখন 34 বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হয় এবং ক্ষমতায় আসীন হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, তখন রাজ্যের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ ছিল 1 লক্ষ 93 হাজার কোটি টাকা ৷ বর্তমান রাজ্য সরকারের বাজেট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2021-22 আর্থিক বছরের শেষে সেই পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ বেড়ে হবে 5 লক্ষ কোটি থেকে 5 লক্ষ 50 হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ৷ অর্থাৎ 34 বছরের ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়তে সময় নিয়েছে মাত্র 10 বছর ৷
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবণতা থেকে তিনটি বিষয় (Economic Status of West Bengal) মোটামুটি পরিষ্কার ৷ প্রথমত, গত 10 বছরে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে ৷ দ্বিতীয়ত, আবগারি শুল্ক ছাড়া রাজস্ব আদায়ের তেমন কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই এবং তৃতীয়ত, রাজ্য সরকার ঋণজালের (Debt Trap) একেবারে প্রান্তে চলে এসেছে ৷ এটা এমন একটা পরিস্থিতি, যেখানে পুরনো ঋণের সুদ ও আসল মেটাতে নতুন করে ধার করতে হচ্ছে ! অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্য়া, ইতিমধ্যেই রাজ্যের ঋণের পরিমাণ এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার অনুপাত 30 শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে ৷ এই পরিমাণ বেড়ে 50 শতাংশে পৌঁছে গেলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে ৷