কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি : একদিকে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ আর অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই এই দুই রাজনৈতিক দলের দ্বৈরথ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ নির্বাচনের প্রচার কর্মসূচির দিক থেকেও ঘাসফুল ও পদ্মফুল, দুই শিবিরই একে অপরকে ক্রমাগত টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ বিজেপির রথযাত্রা ও তৃণমূলের ‘দিদির দূত’৷
সময়ের নিয়ম মেনে নির্বাচনী প্রচারেরও আঙ্গিক বদলেছে৷ এখন বাড়ি বাড়ি প্রচার, মিটিং মিছিলের সঙ্গে সাইবার-যুদ্ধও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ সেই কারণেই ‘দিদির দূত’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারের মিছিলেও ব্যবহার করা হচ্ছে দিদির দূতকে৷ যেমন দেখা গেল শনিবার৷ এদিন দক্ষিণ 24 পরগনায় কামালগাজি থেকে সোনারপুর পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি যে গাড়িটিতে দাঁড়িয়ে মিছিলে অংশ নিলেন, তাতে স্পষ্ট লেখা ‘দিদির দূত’ কথাটি৷
আরও পড়ুন : পিকের 'বুদ্ধি'তে মমতার ভোট-হাতিয়ার ‘দিদির দূত’
যা দেখে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বিজেপির রথযাত্রার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন৷ কারণ, এই ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঘুরছে বিজেপির গাড়ি৷ সেই গাড়িতে চড়েই কখনও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, কখনও দলের হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ, আবার কখনও রাজ্যস্তরের দিলীপ ঘোষ-শুভেন্দু অধিকারীরা প্রচারে অংশগ্রহণ করছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আপাতত ‘দিদির দূত’ হয়ে জনসংযোগ করেছেন শনিবার৷ হয়তো আগামিদিনে রাজ্যের অন্যান্য অংশে অন্য নেতারাও ‘দিদির দূত’ হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছবেন৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পোশাকি নাম যাই হোক, উদ্দেশ্য কিন্তু এক৷ দুই রাজনৈতিক দলই চাইছে একেবারে জনতার মাঝে পৌঁছে যেতে৷ যেখানে একেবারে জনতার সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই কমে যায়৷ কর্মীদের মধ্যে উদ্যমও বৃদ্ধি পায় এই ধরনের কর্মসূচি থেকে৷ সভা করে যেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না৷ তাছাড়া কর্মী-সমর্থকরা ছাড়া এই ধরনের মিছিলের আশপাশে যাঁরা থাকেন, যেমন রাস্তার দু’পাশের যে বাড়িগুলি থাকে সেখানে উপস্থিত মানুষের প্রতিক্রিয়া নেতারা সরাসরি পরখ করতে পারেন৷ অনেক সময় নেতাদের পালটা প্রতিক্রিয়াও ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বা নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়৷ যার প্রতিফলন ভোটবাক্সে পড়ে৷
আরও পড়ুন : অমিত-মোদি-নাড্ডা ; সাতদিনের ব্যবধানে বাংলায় বিজেপির ত্রয়ী
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই যাত্রা পথের শেষে সাফল্য কোন রাজনৈতিক দল পাবে? দিদির দূত এ চড়ে তৃণমূল নেতারা কি পারবেন তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছে দিতে? নাকি রথে চড়ে নাড্ডা-অমিত-দিলীপ-শুভেন্দুরা বাংলায় তাঁদের কাঙ্খিত পরিবর্তনের পরিবর্তন আনতে পারবেন! দিদির দূত কি পারবে বিজেপির রথকে আটকে দিতে!
এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য রয়েছে রাজ্যের ভোটারদের মনে৷ ভবিষ্যতের বাংলা গড়ার দায়িত্ব তাঁরা কাকে দেবেন, সেই উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও মাস তিনেক৷ কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায় যে সাধারণ মানুষের একেবারে নিকটে পৌঁছতে তৃণমূল বা বিজেপি, কেউই চেষ্টার কোনও কসুর করছে না৷
আরও পড়ুন : কেমন খেলছেন কেষ্ট দা !
দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে হাসেন শেষ হাসি! মমতা! নাকি মোদির দল!