কলকাতা, 14 অক্টোবর : শিক্ষায় ইঁদুর দৌড়ের কথাটা আজকাল পুজো আয়োজনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দল সেই ইঁদুর দৌড়ে সামিল ৷ এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। আজ নবমী ভাঙাহাটের মেলা। রাত পোহালেই দুর্গা ফিরবেন শ্বশুরবাড়ি ৷ আবার এক বছরের অপেক্ষা। তাই শেষ প্রহরে এবার হিসেব মেলানোর পালা। শহর কলকাতায় শাসক-বিরোধী দুর্গাপুজোর বাজি মারল কে ?
যদিও শাসক দলের ব্যানারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও দুর্গাপুজো এই বঙ্গে হয় না। সেদিক থেকে শাসকদলের ধ্বজাধারী পুজো আসলে নেতা মন্ত্রীদের। খোদ কলকাতার বুকে, চেতলা অগ্রণী, নাকতলা উদয়ন সংঘ, সুরুচি সংঘ, একডালিয়া এভারগ্রিন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব-একের পর এক বড় পুজোর পৃষ্ঠপোষক শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী। বারো মাস দলের কাজে সহোদরের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চললেও পুজোর ক'দিন একে অপরের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী ৷ একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইয়ে মাতেন ৷ তবে বিরোধী দল বিজেপি ইজেডসিসি-তে গত দু'বছর ধরে দুর্গাপুজো করছে ৷
এছাড়া উত্তর কলকাতার প্রখ্যাত পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার। যদিও এই পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা সজল ঘোষ এই পুজোয় রাজনীতির রং লাগতে দিতে চান না। তবে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের পুজো যেমন উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইভাবে এই দুই পুজোর উদ্বোধন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কাজেই সজল ঘোষ মানুন অথবা না-মানুন। এই পুজোতেও রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। প্রশ্ন হল, শাসক বনাম বিরোধীদের মধ্যে পুজোর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে কারা।
প্রবীণ মন্ত্রী তথা একডালিয়া এভারগ্রিনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা সারা বছরের রাজনৈতিক। তিনি বলেন, "এই পুজোর কটা দিন রাজনীতির পরিধি থেকে বেরিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের মতই একজন উদ্যোক্তা হয়ে পুজো সামলানোর সুযোগ পাই। তবে শাসক-বিরোধী ইঁদুর দৌড় যুক্ত হতে আমি রাজি নই। বরাবরই সাবেকিয়ানায় বিশ্বাসী আমি। তাই একডালিয়া এভারগ্রিন সর্বদাই সেই সাবেকিয়ানা ভর করেই পুজো করেছে মানুষকে আনন্দ দিতে। সেখানে আমরা-ওরার লড়াই অহেতুক ৷" রাজ্যের আরেক মন্ত্রী সুজিত বোস বলেন, "মানুষ এখানে মন্ত্রীর পুজো বলে আসেন না। আসেন ভাল পুজো দেখার জন্য ৷ শাসক-বিরোধী লড়াই সেটা আপনাদের মতো মিডিয়ার তৈরি। আমরা সেই লড়াইয়ে মাততে চাই না ৷"
আরও পড়ুন : নবমী থেকে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ শ্রীভূমির বুর্জ খলিফা
যদিও বিজেপি নেতা সজল ঘোষের বক্তব্য, "এই পুজো সকলের। এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আর যে সব পুজোর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে তার সঙ্গে তুলনায় যেতে চাই না। ক্ষমতায় না-থাকলে এ সব পুজো আর থাকবে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের পুজোর চুল রোদে পাকেনি। পেকেছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ৷"
রাজনৈতিক দলগুলোর স্বীকার না-করলেও ওয়াকিবহাল মহল বলছে, শাসক হোক বা বিরোধী পুজো সবার জন্যই নিজেদের অনন্য হিসাবে দেখানোর একটা জায়গা। সেখানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। তাই বছর বছর থিম বদলে নজর কাড়েন পুজো উদ্যোক্তারা।