কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর : উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের গ্রামে ডাক্তারি করত জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার মডিউলের অন্যতম পান্ডা নিজামউদ্দিন । এলাকায় ডাক্তারবাবু বলেই পরিচিত সে । কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সূত্রে খবর, ইউনানি চিকিৎসার পিছনে নিজামউদ্দিন চালাত জঙ্গি রিক্রুটমেন্টের কাজ । তার লিখে দেওয়া প্রেসক্রিপশনে শারীরিক পরীক্ষার আড়ালে আবদুল বারি করত মগজ ধোলাই । তার একটি ল্যাবরেটরিও ছিল । কিন্তু সেই ল্যাবের আড়ালে বিস্ফোরক তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হত না তো? গোয়েন্দাদের মনে এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে ।
এমনিতে সাদামাটা চেহারা । আদালতে কোনও কথা ছিল না বারির মুখে । রোগা চেহারার এই জামাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গির মুখে ছিল কুলুপ আঁটা । ঠান্ডা চোখে শুধুই পরখ করে যাচ্ছিল সবটা । তুলনায় অনেক বেশি কথা বলছিল নিজামউদ্দিন খান । কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স গতকাল মালদার সামসি এলাকা থেকে এই দু'জনকে গ্রেপ্তার করে । ধৃতদের মধ্যে নিজামউদ্দিন ETV ভারতকে বলে, "আমি ডাক্তারি করি । ইউনানি চিকিৎসায় আমার নামডাক আছে গ্রামে ।" তারপরই বোকাবোকা মুখ করে প্রশ্ন, "আমাদের কেন ধরে নিয়ে এল বলতে পারেন?"
গোয়েন্দাদের কথায়, জঙ্গিরা সাধারণভাবে একটু কম কথা বলে । অনেকটা ধৃত আবদুল বারির মতো । তাদের প্রশিক্ষণের সময় এই বিষয়টি শেখানো হয় । আবার অনেকেই নিজেকে লুকোতে বোকা সাজার অভিনয় করে । সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন, ইউনানি চিকিৎসাকে ব্যবহার করে অনেককেই জঙ্গি হতে উদ্বুদ্ধ করত নিজামউদ্দিন । যাদের দেখে মনে হত যে কিছু হতে পারে, তাদের ফের ডাকা হত ৷ তার পরই দেওয়া হত দাওয়াত । সেখানেই বারি এবং নিজামউদ্দিন চালাত মগজ ধোলাই । গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এই সময় রক্ত পরীক্ষা কিংবা অন্য কোনও বাহানায় ল্যাবের আড়ালে দেওয়া হত জঙ্গি প্রশিক্ষণ ।
গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন, বারি এবং নিজামউদ্দিন এই পুরো কাজটাই করত জামাত-উল-মুজাহিদিনের মাথা সালাউদ্দিন এবং জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার আমের ইজাজের নির্দেশে । তারা দিনাজপুর মডিউলের সক্রিয় জঙ্গি বলেই জানতে পেরেছে স্পেশাল টাস্কফোর্স । এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ধৃত বর্ধমান মডিউলের আব্দুল কাসেমের । এই কাসেমই গতকাল লালবাজারে চিহ্নিত করেছে তাদের । গোয়েন্দাদের দাবি, জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়া কিংবা জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা উত্তর দিনাজপুরে এলে তাদের শেল্টারের ব্যবস্থা করত নিজামউদ্দিন এবং বারি । তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । তদন্তের প্রয়োজনে আজই গোয়েন্দারা ইটাহার যেতে পারেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর ।