কলকাতা, 1 জুলাই : আজ থেকে কলকাতা সহ রাজ্যের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি বাস রাস্তায় নামার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন ৷ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত 15 মে থেকে রাজ্যে সবরকম পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল ৷ আজ থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে রাস্তায় বাস ও মিনিবাস চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৷ আর প্রশাসন বাস চলার অনুমতি দিতেই অধিকাংশ বেসরকারি সংস্থার তরফে তাঁদের কর্মীদের অফিস আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ সেই মতো অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে কার্যত বিপাকে পড়লেন বেসরকারি সংস্থার বহু কর্মী ৷ রাস্তায় দেখা নেই কোনও বেসরকারি বাসের ৷ যে কটা সরকারি বাস রয়েছে ৷ তাতেও মানুষজন বাদুর ঝোলা হয়ে যাতায়াত করছেন ৷ আর এই সুযোগে নিজেদের ইচ্ছে মতো দর হাঁকছে কলকাতার অটোচালকরা ৷
এমনই অভিজ্ঞতা হল শহরতলী থেকে কলকাতায় কাজে আসা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী অর্ঘ ঘোষ ৷ মহেশতলা সন্তোষপুরের বাসিন্দা ওই যুবক জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় আজ থেকে অফিস যেতে বলেছে আমাদের ৷ কিন্তু, রাস্তায় বেরিয়ে চূড়ান্ত হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে ৷ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্টেশনে যাই ৷ টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বললাম, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাই যদি স্টাফ স্পেশালে ওঠার বিশেষ মান্থলি করানো যায় ৷ কিন্তু, টিকিট কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়া আর কাউকে বিশেষ মান্থলি দেওয়া হবে না ৷’’
কিন্তু, অফিস তো যেতেই হবে ৷ সময়ও হাতে নেই ৷ ওই যুবক বলেন, ‘‘যা হবে দেখা যাবে, এই ভেবে বাধ্য হয়ে বিনা টিকিটেই স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে উঠে পড়ি ৷ টালিগঞ্জ স্টেশনে নেমে চারু মার্কেট বাসস্ট্যান্ডে যাই হাজরার বাস ধরার জন্য ৷ ভেবেছিলাম ওখান থেকে বাস পাব ৷ কিন্তু, একটাও বাস নেই ৷ সরকারি বাস দু’টো গেল ৷ কিন্তু, লোকজন সেখানে গেটে ঝুলছে ৷ প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনও বাস পেলাম না ৷ এর মধ্যে বারবার অফিস থেকে ফোন আসছে কতদূর পৌঁছেছি ৷ বাধ্য হয়ে ওখান থেকে হেঁটে অটো স্ট্যান্ডে যাই ৷’’
অর্ঘবাবু ভেবেছিলেন অটো ধরেই অফিস যাবেন ৷ কিন্তু, সেখানেও আরেক বিপত্তি ৷ তিনি বলেন, ‘‘স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি অটো হাতে গোনা কয়েকটা ৷ কিন্তু, সেখানেও অনেক লাইন ৷ প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জনের পিছনে লাইন দিয়ে অটো পেয়েছি ৷ সেখানেও আধঘণ্টার বেশি গেছে ৷ সকাল 7 টার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি ৷ আবার অটোয় উঠে শুনি 12 টাকার ভাড়া 20 টাকা হয়ে গেছে ৷ এরাও সুযোগ বুঝে আমাদের পকেট কাটতে শুরু করেছে ৷ কিছু বললে উল্টে বলছে নেমে যান ৷ কিন্তু, অফিস তো যেতেই হবে ৷ অগত্যা বেশি ভাড়া দিতে হল ৷ এই এখন এখান থেকে আবার হেঁটে অফিস ঢুকবো ৷’’
আরও পড়ুন : অ্যাপ নির্ভর ক্যাবে উঠলেই আজ থেকে গুনতে হবে বাড়তি কড়ি
প্রশাসন 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বাস চালানোর অনুমতি দিলেও, রাস্তায় নামেনি কোনও বেসরকারি বাস ৷ কারণ ডিজেলের বর্ধিত দাম ৷ আর পুরনো ভাড়ায় 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন গাড়ি রাস্তায় নামাতে নারাজ ৷ সরকারি বাসও হাতেগোনা কয়েকটি ৷ যেগুলিতে বাদুর ঝোলা হয়ে মানুষজন যাতায়াত করছেন ৷ আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে শহরের অধিকাংশ অটোচালকরা ৷ কোথাও 12 টাকার ভাড়া হয়ে গিয়েছে 20 টাকা ৷ তো কোথাও 15 টাকার ভাড়া 25 টাকা ৷ আর দরদামের রাস্তায় গেলে নেমে যাওয়ার পরামর্শ ৷ এই অবস্থায় চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন অফিস যাত্রীরা ৷ এমনকি অফিস পৌঁছানোর তাগিদে নিয়ম ভেঙে স্টাফ স্পেশাল ট্রেনেও উঠে পড়ছেন অর্ঘ ঘোষের মতো বহু মানুষ ৷
আরও পড়ুন : Covid-19 : পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে পরিষেবায় ক্ষতির আশঙ্কা কান্দির বাস মালিকদের
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এভাবে কোনও পরিকল্পনা ছাড়া রাস্তায় বাস নামিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করে কী লাভ হল সরকারের ৷ যদি ধরেই নেওয়া যায় সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার কথা ভেবে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ৷ তাহলে কেন সঠিক পরিকল্পনা না নিয়ে এভাবে বিধিনিষেধে শিথিলতা আনল প্রশাসন ৷ এতে সাধারণ মানুষের সুবিধার থেকে হয়রানিটাই বেশি হচ্ছে ৷