কলকাতা, 10 জুন : সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই এখন সবচেয়ে ট্রেন্ডিং যে বিষয়গুলি, তার মধ্যে উপরের সারিতে চোখ পড়বে হ্যাশট্যাগ নুসরত জাহানে (Nusrat Jahan)৷ গত কয়েকদিন ধরেই তাঁর সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছিল ৷ খবরটা সত্যি হলে সেই সন্তান কার ? তাঁর স্বামী নিখিল জৈন (Nikhil Jain) নাকি বর্তমান চর্চিত বয়ফ্রেন্ড যশ দাশগুপ্তের ? তাহলে কি শিগগিরই নিখিলের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে যশের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন তৃণমূল সাংসদ ? এমনই নানা প্রশ্ন চালাচালি শুরু হয়েছিল নানা মহলে ৷ এই অবস্থায় নীরবতা ভেঙে অভিনেত্রী বিবৃতি দেওয়ার পরই সেই জল্পনার আগুনে যেন ঘি পড়ে ৷ তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, নিখিলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে বৈধ নয় ৷ তিনি শুধু নিখিলের সঙ্গে লিভ-ইন করেন ৷ কাজেই বিবাহবিচ্ছেদের কোনও প্রশ্নই ওঠে না ৷ নুসরত জাহানের এই বিবৃতির পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটেছে ৷ নুসরতের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা ৷ তাঁদের বক্তব্যের কিছু যুক্তিও রয়েছে ৷
নুসরত বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, "তুরস্কের বিয়ের আইন অনুযায়ী বিদেশের ওই অনুষ্ঠান অবৈধ ৷ আর যেহেতু এটা দুই ধর্মে বিয়ে, সে জন্য এটি বৈধতা পেতে স্পেশ্য়াল ম্যারেজ অ্যাক্টের স্বীকৃতি প্রয়োজন, যেটা ঘটেনি ৷ আইন অনুযায়ী এটা কোনও বিয়ে নয় ৷ এটা একটা সম্পর্ক অথবা একটা লিভ-ইন সম্পর্ক ৷" নুসরতের এই বক্তব্যে নেটিজেনদের প্রশ্ন, তাহলে কি শুধু লিভ-ইন করার জন্য এত খরচ করে তুরস্কে গিয়ে আচার অনুষ্ঠান পালন করা হল ? যদি এটা বিয়ে না-ই হয়, তাহলে কেন কলকাতায় এসে রিসেপশন পার্টির আয়োজন করেছিলেন নিখিল ও নুসরত ? সেই রিসেপশনে টলিউডের সেলিব্রিটিরা উপস্থিত থেকে নবদম্পতিকে আশীর্বাদও করেছিলেন ৷ হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ সেই সব ছবিই নেটমাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ট্রোল করা হচ্ছে তৃণমূল সাংসদকে ৷ তারপরেও নানা অনুষ্ঠানে শাঁখা-সিঁদুর পরে বধূ বেশেই দেখা গিয়েছে অভিনেত্রীকে ৷ তুরস্ক থেকে ফিরে সাংসদ হিসেবে লোকসভায় তিনি যখন শপথ নিতে গিয়েছিলেন, তখনও তাঁর হাত থেকে বিয়ের মেহেন্দি ওঠেনি ৷ তিনি যে সেই বিয়েতে মান্যতা দিয়েছিলেন, এমন নানা ঘটনাই তার প্রমাণ - দাবি নেটিজেনদের ৷
আরও পড়ুন: Nusrat Jahan: লোকসভার ওয়েবসাইটে বিবাহিত নুসরত, আইনও বলছে বিয়ে বৈধ
শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিজের প্রোফাইলে নিখিলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ও নানা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেছিলেন অভিনেত্রী ৷ ইনস্টাগ্রাম থেকে সব ছবি সরিয়ে নিলেও এখনও ফেসবুকের পাতায় রয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি ৷ নিখিলের বস্ত্র বিপণির বিজ্ঞাপনে তাঁর ও নুসরতের ছবি দিয়ে ক্যাচলাইনে লেখা রয়েছে, "আমি আসছি, সঙ্গে জামাই ৷ জমাতে আসর শালিদের চাই ৷" সেই ছবিও এখনও দেখা যাচ্ছে নুসরতের ফেসবুকের পাতায় ৷ এতকিছুর পরও কীভাবে নুসরত তাঁর বিয়েকে অস্বীকার করেন, তা নিয়ে অভিনেত্রীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন নেটিজেনরা ৷
আরও পড়ুন: নিখিলের সঙ্গে লিভ-ইন করেছি, বিয়ে হয়নি, বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না : নুসরত
আইনগত দিক থেকে দেখা গেলেও নুসরতের বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই ৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অরুণাংশ চক্রবর্তীর কথায়, "নুসরত জাহান তাঁর বিয়েটা এড়াতে পারবেন না ৷ এই বিয়ে বৈধ ৷ কারণ তিনি বিয়ের আগেই ধর্মান্তরিত হয়েছেন ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মান্তরিত না হলেও, তিনি যে প্রথা মেনে বিয়ে করেছেন, তাতেই আইন মেনে নেবে যে তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন ৷ হিন্দু আইনে বলা আছে, হিন্দু অনুষ্ঠান ও প্রথা মেনে অর্থাত্ শাঁখা-সিঁদুর পরে, মালাবদল করে, সিঁদুরদান করে, আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে যদি কোনও নারী স্বেচ্ছায় বিয়ে করেন, কেউ যদি সেই বিয়েতে আপত্তি না করেন, হিন্দু সমাজ যদি তাঁকে হিন্দু বধূ হিসেবে মেনে নেয়, তাহলে এটাই বুঝতে হবে যে হিন্দু বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং হিন্দু ধর্মে বিয়ে করেছেন ৷ হিন্দু মতে বিশ্বাস রাখতে গেলে কোনও অনুষ্ঠান করে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, আচরণ থেকে পরিলক্ষিত হয় যে তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন ৷ বিয়ের পর দুর্গা পুজোর উদ্বোধন করতে ও অষ্টমীর অঞ্জলিও দিতে দেখা গিয়েছে নুসরতকে ৷ কাজেই এই বিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন না নুসরত জাহান ৷ তাঁর নামটাই এখনও মুসলিম ৷ কিন্তু তিনি হিন্দুই ৷"
আরও পড়ুন: আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে নিখিল, অভিযোগ নুসরতের
অতএব নীরবতা ভেঙেছেন ঠিকই, তবে নয়া বিবৃতি নুসরতকে কিছুটা বিপাকেই ফেলে দিয়েছে বলে অনেকের মত ৷ এখনও লোকসভার ওয়েবসাইটে তাঁর নামের পাশে লেখা বিবাহিতা ৷ কাজেই ভবিষ্যতে এই অধ্যায় ব্যক্তিগত জীবন পেরিয়ে রাজনীতির আঙিনায় গড়ায় কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে ৷