কলকাতা, 4 জুন : বাংলা সিনেমায় একটা যুগ ছিল যখন 'মা' আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভাল ব্যবসা করত ইন্ডাস্ট্রি । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মাতৃসমা' মুকুল-জায়া কৃষ্ণ রায়কে দেখতে যাওয়ার পর থেকেই এই 'মা' আবেগ বাংলার রাজনীতির অলিন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে । একদিকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মুকুলের 'দূরত্ব' বাড়ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের একাংশের তাঁকে আক্রমণ, অন্যদিকে মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের দলকে বিপাকে ফেলা একের পর এক ফেসবুক পোস্ট, সবটাই এখন আতসকাঁচের তলায় । এসবের মধ্যে অমোঘ 'মা' শব্দ বাংলার রাজনীতিতে নয়া মাত্রা অবশ্যই ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার রাজাগোপাল চক্রবর্তী বলছেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জল্পনায় আমি অবাক নই । বরং বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মুকুল রায়ের দূরত্ব অনেকাংশেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী । যদিও এই মুহূর্তে যতটুকু ঘটনাপ্রবাহ তাতে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয় । তবে যেভাবে একের পর ঘটনা ঘটছে, তা কৌতূহল জাগাবার মতোই ।"
আসলে গত 48 ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহে এক সময়কার 'অহি-নকুল' সম্পর্ক অন্য মোড় নিচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ মুকুল-অভিষেক সম্পর্কের আশ্চর্য উন্নতি লক্ষ্য করছে রাজনৈতিক মহল । তাঁদের মতে, কোনও সন্দেহ নেই এই উন্নতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মুকুল-জায়া কৃষ্ণা রায় । একদিকে বিজেপির সঙ্গে মুকুল রায়ের সম্পর্কের শীতলতা, অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণা রায়কে 'মাতৃসমা' বলায় রাজনীতির কারবারিরা অন্য সমীকরণ দেখছেন ।এই ঘটনাক্রমকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যতে মুকুল রায়ের তৃণমূলের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনাই দেখছেন । যদিও বঙ্গ রাজনীতিতে 'চাণক্য' মুকুল এই মুহূর্তে মুখ খুলতে নারাজ । তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, তাঁর কৃষ্ণা রায়কে দেখতে যাওয়ায় যেন রাজনীতি খোঁজা না হয় । অন্যদিকে মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু অভিষেকের এই পদক্ষেপকে সৌজন্যের নিদর্শন হিসেবেই উল্লেখ করেছেন ।
আরও পড়ুন: দুই দলের তৎপরতায় ফের মুকুলকে নিয়ে মুকুলিত জল্পনা
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু সান্যাল বলছেন, "এই বিষয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি । যদিও রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু হয় না । তবে আমার মনে হচ্ছে মুকুল রায় এবং তাঁর পুত্রকে নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো সময় আসেনি । শুভ্রাংশু রায়ের ক্ষেত্রে যদিও বা এখনই দল বদল করা সম্ভব ৷ মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে কিন্তু তা সম্ভব নয় ।"
শান্তনুবাবু আরও বলেন, "ভুলে গেলে চলবে না, এই মুহূর্তে শাসকদল তৃণমূলের পাওয়ার হাউজ় অভিষেক কেন্দ্রিক । পুরোনো দলে ফিরলে আদৌ মুকুলের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে কি না সন্দেহ । সবচেয়ে বড় কথা বিজেপির মতো একটা সর্বভারতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন মুকুল । আমার মনে হয়, কোনওভাবেই তিনি সেটা ছেড়ে আসতে চাইবেন না ।"
যদিও শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে অন্য মত শান্তনু সান্যালের । তাঁর কথায়, "মুকুল রায়ের অনেক পরে শুভ্রাংশু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন । তাঁর পক্ষে তৃণমূলে ফেরা যতটা সহজ মুকুল রায়ের পক্ষে ততটা নয় ।"