ETV Bharat / city

Xylophone : একাধিক তরঙ্গে অবিরাম উঠছে সুরের ঢেউ

author img

By

Published : Jul 13, 2021, 4:33 PM IST

যন্ত্রশিল্পী নীরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার এক অংশে বেশ সাড়া ফেলেছেন ৷ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় জ়াইলোফোন বা তরঙ্গ যন্ত্রের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছেন মানুষকে ৷ বাঁশ তরঙ্গের পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে পোড়ামাটি তরঙ্গ, বোতল তরঙ্গ, সেরামিক তরঙ্গ ইত্যাদি ৷ শিল্পীর সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত ৷

বাঁশ তরঙ্গের পাশাপাশি বিভিন্ন তরঙ্গে সুর উঠছে শিল্পী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ৷
বাঁশ তরঙ্গের পাশাপাশি বিভিন্ন তরঙ্গে সুর উঠছে শিল্পী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ৷

কলকাতা, 13 জুলাই : সুরের সাক্ষী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । যন্ত্রশিল্পী নীরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে । বাস হুগলির শ্রীরামপুরে । বাবা ছিলেন তাঁর সময়ের নামজাদা মানুষ । দেশে-বিদেশে তদানীন্তন গুণী শিল্পীদের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল তাঁর । ত্রিপুরার ব্রজেন বিশ্বাসের ব্রজতরঙ্গের কথা সুরকার শচিন দেব বর্মনের সৌজন্যে বিখ্যাত । বাংলাতেও নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গ সেই সময় একইভাবে সাড়া ফেলেছিল । আসলে তিনি পাশ্চাত্যের জ়াইলোফোনের (Xylophone) ভারতীয় সংস্করণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন । সেটা যে ব্যর্থ ছিল না তা নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গে প্রমাণিত । তাঁর দীর্ঘ সফল সাঙ্গীতিক জীবনে তা ধরা পড়ে ।

1948 সালে সরোদ শিল্পী তিমিরবরণ ভট্টাচার্যের (Timir Baran) সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করা ছাড়াও নীরদবরণ পণ্ডিত রবিশংকরের (Ravi Shankar) সফরসঙ্গী হয়েছিলেন একাধিকবার । বাবার সাড়া ফেলা দেওয়া যন্ত্রটি ছোটবেলায় নাড়াচড়া করতেন সোমনাথ এবং তাঁর দাদা নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় । উত্তরপুরুষের আগ্রহী মন দেখে তাঁদের জন্য বাঁশ দিয়ে বাঁশতরঙ্গ তৈরি করেছিলেন নীরদবরণ । "বাজার থেকে বিশেষ ধরনের তলতা বাঁশ জোগাড় করে তা মাস ছয়েক রোদে জলে পোক্ত করে যন্ত্রটি বানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা । কীভাবে বাজাতে হবে তার তালিম দিয়েছিলেন", স্মৃতিচারণ সোমনাথের । এই পর্যন্ত দেখে মনে হতে পারে বাবার দেখানো পথে ছেলেরা পা বাড়াবে । ঢেউ উঠবে বাঁশতরঙ্গে । কিন্তু জীবন অঙ্ক মেপে চলে না । মাঝের সময়ে পারিবারিক ঝড়ঝাপটায় কাষ্ঠ এবং বাঁশতরঙ্গ দু'টো যন্ত্রই বাড়ির এক কোণে পড়েছিল ।

সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কলেজ জীবনে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এই যন্ত্র বাজিয়েছিলেন । স্বাভাবিক ভাবেই কাঠ এবং বাঁশের তৈরি যন্ত্রের সুরেলা শব্দ শ্রোতাদের আগ্রহী করেছিল । শ্রোতারা আগ্রহী হলেও সোমনাথ নিজে আর বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী হননি । বরং জীবন সংগ্রামে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই চেয়েছিলেন । কিন্তু সুরের সাক্ষী যে একবার হয়েছে সে আটকে থাকে কীভাবে ? এই কাজে সোমনাথবাবুর সূত্রধর স্ত্রী গীতা । পেশায় স্কুল শিক্ষিকা গীতা 2010 সালে নীরদবরণের সম্মানে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা দেন সোমনাথবাবুকে । সেখানে বাঁশতরঙ্গ বাজিয়ে সোমনাথ ফের চমকে দেন শ্রোতাদের । এরপর থেকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে, যা শ্রীরামপুরের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানও বটে ।

বাঁশ তরঙ্গের পাশাপাশি বিভিন্ন তরঙ্গে সুর উঠছে শিল্পী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ৷

সোমনাথের মতে, সুর লুকিয়ে থাকে দৈনন্দিন জীবনে । সংসারে ব্যবহৃত জিনিস যা সাধারণত নাড়াচাড়া করা হয় সেখানেও সুর খেলা করে ৷ কান দিয়ে চিনে নিতে হয় । 2015 সালে বাড়ি সংস্কারের সময় মিস্ত্রির হাত থেকে পড়া সেরামিক টাইলসের আওয়াজেও তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছিলেন সোমনাথ ৷ বলেন, "মিস্ত্রির হাত থেকে সেরামিকের টালি পড়ার আওয়াজ শুনে চমকে গিয়েছিলাম । মিস্ত্রিকে ফের টালি ফেলতে বলেছিলাম । তার তখন কাঁচুমাঁচু অবস্থা । তাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বলায় ফের সেরামিক টাইলসটা ফেলেছিল । এবং একই সুরেলা শব্দ কানে এল । এরপর আমি সেরামিক টাইলস কাটিয়ে তৈরি করেছি সেরামিক তরঙ্গ ৷"

সুরের নেশায় এরপর কান খাড়া করে ছুটে বেড়ান । এভাবেই তৈরি করেছেন অতি পুরানো টালি দিয়ে পোড়ামাটি তরঙ্গ । "এটা হাঁড়ি বাজানো দেখে আমার মাথায় এসেছিল । পুরানো টালি খুঁজতে আমি বনগাঁ অবধি গিয়েছি", হাসতে হাসতে বলছিলেন সোমনাথবাবু । এভাবেই সসের বোতল দিয়ে তৈরি করেছেন বোতল তরঙ্গ । "আস্তাকুঁড়ে থেকে বিভিন্ন ধরনের বোতল নিয়ে এসেছিলাম । কিন্তু প্রত্যাশিত আওয়াজটা পাচ্ছিলাম না । শেষ পর্যন্ত বাড়ির সসের বোতলে পেয়েছিলাম প্রার্থিত আওয়াজ । এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে", বলছিলেন সুরের নেশায় মেতে থাকা মানুষটি ।

সুরের খোঁজে মত্ত সোমনাথের দেখানো পথে পা বাড়িয়েছে ছেলে সপ্তর্ষিও । নীরদবরণের দেখানো রাস্তায় এগিয়ে চলেছেন তাঁর উত্তরসুরীরা । বাঁশ তরঙ্গ ঢেউয়ের সুর এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে ।

আরও পড়ুন : দিলীপ কুমারের স্মৃতিচারণায় এখন শুধু মন খারাপের সুর তিনধারিয়ায়

কলকাতা, 13 জুলাই : সুরের সাক্ষী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । যন্ত্রশিল্পী নীরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে । বাস হুগলির শ্রীরামপুরে । বাবা ছিলেন তাঁর সময়ের নামজাদা মানুষ । দেশে-বিদেশে তদানীন্তন গুণী শিল্পীদের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল তাঁর । ত্রিপুরার ব্রজেন বিশ্বাসের ব্রজতরঙ্গের কথা সুরকার শচিন দেব বর্মনের সৌজন্যে বিখ্যাত । বাংলাতেও নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গ সেই সময় একইভাবে সাড়া ফেলেছিল । আসলে তিনি পাশ্চাত্যের জ়াইলোফোনের (Xylophone) ভারতীয় সংস্করণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন । সেটা যে ব্যর্থ ছিল না তা নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গে প্রমাণিত । তাঁর দীর্ঘ সফল সাঙ্গীতিক জীবনে তা ধরা পড়ে ।

1948 সালে সরোদ শিল্পী তিমিরবরণ ভট্টাচার্যের (Timir Baran) সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করা ছাড়াও নীরদবরণ পণ্ডিত রবিশংকরের (Ravi Shankar) সফরসঙ্গী হয়েছিলেন একাধিকবার । বাবার সাড়া ফেলা দেওয়া যন্ত্রটি ছোটবেলায় নাড়াচড়া করতেন সোমনাথ এবং তাঁর দাদা নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় । উত্তরপুরুষের আগ্রহী মন দেখে তাঁদের জন্য বাঁশ দিয়ে বাঁশতরঙ্গ তৈরি করেছিলেন নীরদবরণ । "বাজার থেকে বিশেষ ধরনের তলতা বাঁশ জোগাড় করে তা মাস ছয়েক রোদে জলে পোক্ত করে যন্ত্রটি বানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা । কীভাবে বাজাতে হবে তার তালিম দিয়েছিলেন", স্মৃতিচারণ সোমনাথের । এই পর্যন্ত দেখে মনে হতে পারে বাবার দেখানো পথে ছেলেরা পা বাড়াবে । ঢেউ উঠবে বাঁশতরঙ্গে । কিন্তু জীবন অঙ্ক মেপে চলে না । মাঝের সময়ে পারিবারিক ঝড়ঝাপটায় কাষ্ঠ এবং বাঁশতরঙ্গ দু'টো যন্ত্রই বাড়ির এক কোণে পড়েছিল ।

সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কলেজ জীবনে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এই যন্ত্র বাজিয়েছিলেন । স্বাভাবিক ভাবেই কাঠ এবং বাঁশের তৈরি যন্ত্রের সুরেলা শব্দ শ্রোতাদের আগ্রহী করেছিল । শ্রোতারা আগ্রহী হলেও সোমনাথ নিজে আর বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী হননি । বরং জীবন সংগ্রামে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই চেয়েছিলেন । কিন্তু সুরের সাক্ষী যে একবার হয়েছে সে আটকে থাকে কীভাবে ? এই কাজে সোমনাথবাবুর সূত্রধর স্ত্রী গীতা । পেশায় স্কুল শিক্ষিকা গীতা 2010 সালে নীরদবরণের সম্মানে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা দেন সোমনাথবাবুকে । সেখানে বাঁশতরঙ্গ বাজিয়ে সোমনাথ ফের চমকে দেন শ্রোতাদের । এরপর থেকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে, যা শ্রীরামপুরের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানও বটে ।

বাঁশ তরঙ্গের পাশাপাশি বিভিন্ন তরঙ্গে সুর উঠছে শিল্পী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ৷

সোমনাথের মতে, সুর লুকিয়ে থাকে দৈনন্দিন জীবনে । সংসারে ব্যবহৃত জিনিস যা সাধারণত নাড়াচাড়া করা হয় সেখানেও সুর খেলা করে ৷ কান দিয়ে চিনে নিতে হয় । 2015 সালে বাড়ি সংস্কারের সময় মিস্ত্রির হাত থেকে পড়া সেরামিক টাইলসের আওয়াজেও তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছিলেন সোমনাথ ৷ বলেন, "মিস্ত্রির হাত থেকে সেরামিকের টালি পড়ার আওয়াজ শুনে চমকে গিয়েছিলাম । মিস্ত্রিকে ফের টালি ফেলতে বলেছিলাম । তার তখন কাঁচুমাঁচু অবস্থা । তাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বলায় ফের সেরামিক টাইলসটা ফেলেছিল । এবং একই সুরেলা শব্দ কানে এল । এরপর আমি সেরামিক টাইলস কাটিয়ে তৈরি করেছি সেরামিক তরঙ্গ ৷"

সুরের নেশায় এরপর কান খাড়া করে ছুটে বেড়ান । এভাবেই তৈরি করেছেন অতি পুরানো টালি দিয়ে পোড়ামাটি তরঙ্গ । "এটা হাঁড়ি বাজানো দেখে আমার মাথায় এসেছিল । পুরানো টালি খুঁজতে আমি বনগাঁ অবধি গিয়েছি", হাসতে হাসতে বলছিলেন সোমনাথবাবু । এভাবেই সসের বোতল দিয়ে তৈরি করেছেন বোতল তরঙ্গ । "আস্তাকুঁড়ে থেকে বিভিন্ন ধরনের বোতল নিয়ে এসেছিলাম । কিন্তু প্রত্যাশিত আওয়াজটা পাচ্ছিলাম না । শেষ পর্যন্ত বাড়ির সসের বোতলে পেয়েছিলাম প্রার্থিত আওয়াজ । এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে", বলছিলেন সুরের নেশায় মেতে থাকা মানুষটি ।

সুরের খোঁজে মত্ত সোমনাথের দেখানো পথে পা বাড়িয়েছে ছেলে সপ্তর্ষিও । নীরদবরণের দেখানো রাস্তায় এগিয়ে চলেছেন তাঁর উত্তরসুরীরা । বাঁশ তরঙ্গ ঢেউয়ের সুর এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে ।

আরও পড়ুন : দিলীপ কুমারের স্মৃতিচারণায় এখন শুধু মন খারাপের সুর তিনধারিয়ায়

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.