নয়াদিল্লি, 15 নভেম্বর : লকডাউন করে দিল্লির দূষণে পাকাপাকিভাবে রাশ টানা সম্ভব নয় ৷ বিশেষজ্ঞরা অন্তত এমনটাই মনে করছেন ৷ উল্লেখ্য, সোমবারই রাজধানীতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) একটি হলফনামা জমা দিয়েছে দিল্লি সরকার ৷ তাতে বলা হয়েছে, দূষণ কমাতে আদালতের পরামর্শ মেনে রাজধানীতে লকডাউন ঘোষণা করতে রাজি আছে সরকার পক্ষ ৷ তবে শুধু দিল্লি নয়, সেক্ষেত্রে দিল্লি লাগোয়া গোটা এলাকা এবং আশপাশের রাজ্যগুলিতেও লকডাউন করার নির্দেশ দেওয়া হোক ৷ তবে দিল্লি সরকারের প্রস্তাবে দীর্ঘকালীন সমাধানসূত্র মিলবে না বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷
আরও পড়ুন : Delhi Pollution : দূষণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনে রাজি দিল্লি সরকার, পাশের রাজ্যগুলিতেও একই বিধি কার্যকরের প্রস্তাব
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিখ্যাত পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝায়ের (Vimlendu Jha) সঙ্গে কথা বলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ সেই সাক্ষাৎকারে বিমলেন্দু বলেন, ‘‘এটা (লকডাউন) একেবারেই আপতকালীন ব্যবস্থা ৷ আমাদের এই ধরনের সমাধানের উপর ভরসা করতে হচ্ছে, কারণ আমরা আর অন্য কিছু করতে পারছি না ৷ এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ৷ বাতাসে দূষণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে ৷ এই ধরনের (লকডাউন) পদক্ষেপে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় ৷ লকডাউনে দূষণ কমেছিল ৷ পরে তা ফের বেড়ে যায় ৷ যতক্ষণ না দূষণের প্রকৃত কারণগুলির উপর কাজ করা হবে, ততক্ষণ এই সমস্যা চলবেই ৷’’
বিমলেন্দু বলেন, ‘‘লম্বা সময়ের জন্য লকডাউন কোনও সমাধান নয় ৷ তবে আপতকালীন পরিস্থিতিতে এই দাওয়াই ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ এতে আপাতত দিল্লির দূষণ কিছুটা হলেও কমবে ৷ আর তাই এটা আমাদের দরকার ৷’’ এই পরিস্থিতির জন্য সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন বিমলেন্দু ৷ তাঁর মতে, ‘‘সরকার তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলেই শীর্ষ আদালতকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে ৷ বছরে পর বছর ধরে তারা বায়ুদূষণ রোধ করতে পারেনি ৷ সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের আগে পর্যন্ত সরকার এই সমস্যাকে স্রেফ বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই দেখেছে ৷ যার সঙ্গে আমজনতার স্বাস্থ্য জড়িয়ে রয়েছে, সেই বিষয়ে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার ছিল ৷’’
আরও পড়ুন : Delhi Pollution: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেদার বাজি পুড়ল রাজধানীতে, লাগামছাড়া দূষণ
প্রসঙ্গত, দিল্লির দূষণের জন্য এতদিন ফসলের গোড়া পোড়ানোকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল ৷ কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়, দূষণের আসল কারণ এটা নয় ৷ কারণ, দিল্লিতে যে পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে, আদতে তার মাত্র চার শতাংশ ফসলের গোড়া পোড়ানোর ফলে সৃষ্টি হয় ৷ এই দূষণের আসল কারণ হল, রাজধানীর পরিবহণ ব্যবস্থা এবং শিল্পকেন্দ্র ৷ মূলত, এই দু’টি জায়গা থেকেই কার্বন নির্গমন এবং দূষণের মাত্রা সবথেকে বেশি ৷
এই প্রসঙ্গে বিমলেন্দুর বক্তব্য হল, ‘‘সরকারের একাংশই দূষণের জন্য ফসলের গোড়়া পোড়ানোর রীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছিল ৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এই যুক্তি অবৈজ্ঞানিক এবং ভুয়ো ৷ যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা দূষণের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত না করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এর সমাধান সম্ভব নয় ৷’’