কলকাতা,28 জুলাই : রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দপ্তর সম্প্রতি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক নির্বাচনের ভার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে নিয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশনের হাতে তুলে দিতে চায়। বিষয়টির মধ্যে স্বজনপোষণের ইঙ্গিত পেয়েছে বামেরা। তাদের অভিযোগ, নিরপেক্ষ নিয়োগ সংস্থাকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের এমন সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশন অ্যাক্ট 1979 এ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এই উদ্যোগকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। বিষয়টি নিয়ে আজ তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রীকে একবার চিঠি দিলেন।
বিগত প্রায় 100 বছর ধরে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং গ্রন্থাগারিক নিয়োগ হয়ে আসছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। এই নিয়োগের একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত রয়েছে বলে আজ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ক্যাডার সার্ভিস যুক্ত গ্রুপ - এ আধিকারিক। তারা পড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাংবিধানিক বোঝাপড়া থেকে এই ধরনের শিক্ষক আধিকারিকদের নিয়োগ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার হাতে থাকা আবশ্যিক বলে মনে করেন বাম নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীও এই বিষয়ে একমত হবেন বলে মনে করেন বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সুজন চক্রবর্তী লিখেছেন, রাজ্যের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি কলেজগুলির মান ও অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এর পিছনে সরকারি ভূমিকার মত সমান গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকদের মান ও শিক্ষণ পদ্ধতি। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে প্রায় 100 বছর ধরে এই উন্নত মানের শিক্ষক ও শিক্ষণের যোগানের পিছনে রয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কঠোর ও পরীক্ষিত নির্বাচন পদ্ধতি।
এই উদ্যোগের পিছনে উচ্চ শিক্ষা দপ্তর যে যুক্তি খাঁড়া করার চেষ্টা করছে, সেগুলি যথেষ্ট বিস্ময়কর। রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং কমিশনের তরফে দীর্ঘসূত্রিতার কথা বলা হয়েছে। যা যথার্থ নয় বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বিধানসভায় সরকারের ঘোষণার সাথে তা মিলছে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ওপর দোষ চাপিয়ে সরকারের শৈথিল্য মুছে ফেলা যায় না বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি।
সরকারি কলেজগুলোর অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক নির্বাচনের দায়িত্ব পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হাত থেকে কেড়ে কলেজ সার্ভিস কমিশনের হাতে তুলে দেওয়ার কোনও বাস্তবতা বা যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই বলে মনে করেন সুজন চক্রবর্তী। বরং সরকারি কলেজগুলোর ঐতিহ্য ও চরিত্রের পরিপন্থী এই উদ্যোগ রাজ্যের শিক্ষার স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন প্রক্রিয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিহীনতার দায় মুখ্যত রাজ্য সরকারের। কলেজ সার্ভিস কমিশনের হাতে দায়িত্ব দিলে এই সমস্যা কমবে- এটা মনে করার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। রাজ্যের দরিদ্র তথা সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যদি পাঠদানের উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে সরকারি কলেজ গুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে । তবে শিক্ষক নির্বাচনে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রায় শতাব্দী প্রাচীন দক্ষতা এবং সামর্থ্যকে ব্যবহার করতেই হবে, বলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের এই অযথা এবং অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগকে জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।