কলকাতা, 25 এপ্রিল : পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের ইন্টেলিজেন্সি নেটওয়ার্কে (Police Intelligence Network) ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা ৷ সেই জায়গা ধীরে ধীরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের (Civic Volunteer) দখলে চলে যাচ্ছে ৷ ফলে অবলুপ্তির পথে পুলিশের ‘বিট কনস্টেবল’ (Beat Constable) ধারণা ৷ এই প্রক্রিয়ায় সামগ্রিকভাবে সিঁদুরে মেঘই দেখছেন পুলিশের শীর্ষস্তরের আধিকারিকরা ৷ কারণ, চাকরি বাঁচাতে অধিকাংশ সময়ই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকতে হয় এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ৷ তাই অনেক সময়ই তাঁদের কাছে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগে খবর চলে এলেও, তা পৌঁছচ্ছে না পুলিশের কাছে৷ ফলে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা ৷
ভবানী ভবনের গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, ‘বিট কনস্টেবল’রা পুলিশি ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এই পদ্ধতির শুরু ৷ এই পদ্ধতিতে একজন কনস্টেবলকে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় পরিচিতি বাড়িয়ে খুঁটিনাটি খবর জোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ এখন সেই ব্যাপারটাই ক্রমশ অবলুপ্তির পথে ৷ এই কাজ এখন মূলত সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়েই করানো হয় ৷
এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের আইজি পদমর্যাদায় এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, আগে প্রতিটি মহকুমা এলাকায় সিআইডির একটি করে বিশেষ ইউনিট থাকত । তাদের কাছে এলাকার খুঁটিনাটি বিভিন্ন গোপন খবর থাকত । কিন্তু বর্তমানে মহকুমাগুলিতে সিআইডির একটি করে ইউনিট থাকলেও, সেই ইউনিটের গোয়েন্দাদের কাছে থাকছে না কোনও খবর ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশে নিয়োগ প্রায় বন্ধ । তার পরিবর্তে থানা চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা । পাশাপাশি নিয়োগ হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার । আর এখানেই যত গন্ডগোল ।
পুলিশের অভিযোগ, সাধারণত পুলিশকর্মীদের পোস্টিং নিজের এলাকার থেকে অনেক দূরে কোনও জেলায় হয় । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুলিশে কোনও রকমের নিয়োগ না হওয়ায় আধিপত্য বেড়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের । আর সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ সরাসরি রাজনৈতিক কর্তাদের অঙ্গুলিহেলনে এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে ।
ফলে বেশিরভাগ থানা, বিশেষ করে রাজ্য পুলিশের গ্রামে-গঞ্জে থানা চালানোর একমাত্র সম্বল হয়ে উঠেছে সিভিক ভলান্টিয়ার । এর জেরে আগে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে এলাকাভিত্তিক যে খুঁটিনাটি অপরাধের খবর আসত এবং সেই খবরের উপর ভিত্তি করে পুলিশি অভিযান চালিয়ে সাফল্য মিলত, সেই খবর খবর বর্তমানে পৌঁছে যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কানে ।
পুলিশের একাংশের দাবি, যেহেতু সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ হয় কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির কথায়, ফলে সেই সিভিক ভলান্টিয়ার এমন কোনও গোপন খবর পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দিচ্ছেন না, যে খবর দিলে তা সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে কিংবা এলাকার কোনও ছোটখাটো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ।
তাই এলাকার ছোটখাট অপরাধের খবর বা এলাকায় কোন ব্যক্তি আসছেন, তার কী পরিচয় রয়েছে, এলাকায় কতগুলি বাড়ি রয়েছে, সেই বাড়িগুলির মধ্যে কতগুলি মেস বাড়ি, ভাড়া বাড়ি, কারা কারা ভাড়ায় রয়েছেন, কোথা থেকে কোন ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র আনছেন, এই সমস্ত ছোটখাটো কথা বেমালুম চেপে যাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ারা । ফলে রাজ্যে বেড়ে চলেছে অপরাধপ্রবণতা ।
আরও পড়ুন : STF recovered explosives from bus: এবার বর্ধমানে যাত্রীবোঝাই বাসে মিলল বিস্ফোরক, বিহার থেকে এনে চলছে পাচার