ETV Bharat / city

NRC, CAA বিরোধিতা নিয়ে পড়ুয়াদের পাশে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীরা

প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । সেখানে NRC, NPR, CAA-র বিরোধিতা করার পোস্টার টাঙানো হয় । অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা ।

author img

By

Published : Jan 20, 2020, 11:19 PM IST

Updated : Jan 20, 2020, 11:33 PM IST

Presidency University
প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠা দিবসে NRC CAA-র প্রতিবাদ

কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আজ প্রেসিডেন্সি কলেজের 203 তম প্রতিষ্ঠা দিবস । এই উপলক্ষ্যে একদিকে যখন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠান চলছিল, তখনই অন্যদিকে NRC, NPR, CAA-র বিরোধিতায় পোস্টার টাঙিয়ে স্লোগান তোলেন পড়ুয়ারা । তাঁরা একটি NRC, NPR, CAA বিরোধী সাক্ষর প্রচার শুরু করেন । সেখানে যেমন বর্তমান পড়ুয়ারা সাক্ষর করেন, তেমনই স্বতস্ফুর্তভাবে সাক্ষর করেন বহু প্রাক্তনীও । নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, প্রসাদরঞ্জন রায়, প্রশান্ত রায়ের মতো প্রেসিডেন্সির একাধিক খ্যাতনামা প্রথিতযশা প্রাক্তনীরা স্বাক্ষর করেন ।

At the University's Dirozio Auditorium
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামে

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী কৌশিকী দত্তচৌধুরি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে বলেন, "আমরা সই সংগ্রহ করছি NRC, NPR , CAA-র বিরুদ্ধে । প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল বোঝাচ্ছে । সবাই ভালভাবে নিচ্ছে না । বিরোধিতা করছে ।" রবিবার ডার্বির স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও দেখা গেছিল NRC, CAA-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসেও সেই একই প্রতিবাদ । তা নিয়ে কৌশিকী বলেন, "রাস্তা-ঘাটে, খেলার মাঠে, প্রেসিডেন্সির মধ্যেও NRC, NPR ও CAA-র মতো আইনের বিরোধিতা করছে । আজ প্রেসিডেন্সির একটি বড়দিনেও প্রাক্তনী সংসদের সবাই আমাদের পাশে রয়েছেন । অনেক বয়স্ক মানুষরা এসেও সই করে যাচ্ছেন । ভারতের সব মানুষ এক হয়ে বিরোধিতা করছে ।"

At the University's Dirozio Auditorium
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামের ভিতরে প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান চলছিল । বাইরে প্রাক্তনী থেকে বর্তমান পড়ুয়ারা সকলে জমজমাট আড্ডার মেজাজে ছিল । আর তারই মধ্যে হঠাৎ স্লোগান ওঠে । প্রেসিডেন্সির খেলার মাঠে ঢোকার মুখেই পোস্টার টাঙানো ছিল 'নো NRC, NPR, CAA' লেখা । তারপাশেই ছিল একটি সাদা কাগজে মোড়া বোর্ড । যাতে NRC, NPR, CAA-র বিরুদ্ধে সাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছিল‌ । পড়ুয়াদের সঙ্গে স্বতস্ফুর্তভাবে সামিল হতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তনীদেরও ।

বিভাস চক্রবর্তী বলেন, "আমরা নাট্যকর্মীরা একটা মিছিল বের করেছিলাম, সমবেতভাবে একটা প্রতিবাদী অনুষ্ঠানও করেছিলাম । পাবলিককে কনফিডেন্সে নিয়ে তারপরে আইনটা প্রণয়ন করা উচিত ছিল । এটা গণতন্ত্র নয় । 38 শতাংশ ভোট নিয়ে চিরকালের জন্য আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারে না । দেশভাগের সময় ঠিক যেমনটা হয়েছিল । আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ দিল্লিতে বসে করে ফেলল এটা ঠিক করেনি । গণভোট হোক, হয়ে ঠিক হোক এই আইন গ্রহণীয় কিনা । কিন্তু ভোটাধিকারের দোহাই দিয়ে এইরকম মারাত্মক আইন পাশ করা যায় না ।"

আবার প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র প্রসাদরঞ্জন রায় ছিলেন আজ । পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি সাক্ষরের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "এই NRC, CAA ব্যাপারটা অদ্ভুত রকম তাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের উপরে । রাজনৈতিক দলগুলো যারা এর পক্ষে অথবা বিপক্ষে তারা কেউ-ই এটা ঠিকমতো বোঝেনি । আজও এটার ইম্প্লিকেশন লোকে পুরোপুরি বুঝতে পারছে কিনা জানি না । আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কথা বলিনি । কাজ করেছি সরকারের জন্য । এখন বাধ্য হয়েছি । এর ফল কতটা ক্ষতিকারক তা আমি নিজেও নিশ্চিত নই । আমাদের জেনারেশনের লোকেদের বার্থ সার্টিফিকেট নেই । অথচ এখানে স্কুলে এসেছি, পড়েছি, স্কুলের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকরি করেছি এতো বছর । এরপরে যদি কেউ এখন বলে, তোমার পূর্বপুরুষের জমিজমার দলিল দেখাও, দেখাতে কিন্তু পারব না । আমি সবথেকে দুঃখিত, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে হয়ে এটা প্রতিরোধ করতে পারছে না ।"

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে প্রাক্তনী থেকে বর্তমান

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাক্তন অধ্যাপক তথা সমাজতত্ববিদ প্রশান্ত রায় বলেন, "আমার নিজের মনে হয় সভ্যতায় একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে চলেছে । এই অবস্থাটাকে একটা নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেটা ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে ছিল না । ভারতীয় সভ্যতার পরিবর্তনের একটা দিক আছে, যেটা রাষ্ট্র আনতে চাইছে । এটা যতটা খোলামেলাভাবে বলা হয়েছে তার মধ্যেও একটা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে । যেন লোককে দিয়ে সইয়ে নেওয়া হল একভাবে । এর অনেকগুলো ফলাফল আমরা বুঝতে পারছি না । যারা এটার সমর্থন করছেন তারাও হয়তো বুঝতে পারছেন না । অনেকের ভয় এটা কুফল হতে পারে । সেটা প্রিজুডিস হতে পারে । কিন্তু, দেখা গেছে যখনই সভ্যতাকে একটা অন্য কোনও মাত্রায় সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে তখনই অসম্ভব রক্তপাত হয়েছে । সেগুলো আমরা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি না । তাই এই প্রতিবাদ ।"

প্রেসিডেন্সি কলেজের পথচলা শুরু হয়েছিল 1817 সালের 20 জানুয়ারি । প্রতিষ্ঠা দিবসের উপলক্ষ্যে আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংসদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানের । সেখানে প্রতিবছরের মতো এবছরও কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানিত করা হয় বিভিন্ন পুরস্কার, মেডেল দিয়ে । এদিনই প্রাক্তনী সংসদের তরফ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে অতুলচন্দ্র গুপ্ত বিশেষ প্রাক্তনী পুরস্কার । সেরা প্রাক্তনী হিসাবে এই সম্মান এই বছর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবীদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল । আজ বিশেষ কারণে প্রেসিডেন্সিতে না আসায় তাঁকে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা করা হবে বলে জানালেন প্রাক্তনী সংসদ ।

কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আজ প্রেসিডেন্সি কলেজের 203 তম প্রতিষ্ঠা দিবস । এই উপলক্ষ্যে একদিকে যখন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠান চলছিল, তখনই অন্যদিকে NRC, NPR, CAA-র বিরোধিতায় পোস্টার টাঙিয়ে স্লোগান তোলেন পড়ুয়ারা । তাঁরা একটি NRC, NPR, CAA বিরোধী সাক্ষর প্রচার শুরু করেন । সেখানে যেমন বর্তমান পড়ুয়ারা সাক্ষর করেন, তেমনই স্বতস্ফুর্তভাবে সাক্ষর করেন বহু প্রাক্তনীও । নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, প্রসাদরঞ্জন রায়, প্রশান্ত রায়ের মতো প্রেসিডেন্সির একাধিক খ্যাতনামা প্রথিতযশা প্রাক্তনীরা স্বাক্ষর করেন ।

At the University's Dirozio Auditorium
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামে

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী কৌশিকী দত্তচৌধুরি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে বলেন, "আমরা সই সংগ্রহ করছি NRC, NPR , CAA-র বিরুদ্ধে । প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল বোঝাচ্ছে । সবাই ভালভাবে নিচ্ছে না । বিরোধিতা করছে ।" রবিবার ডার্বির স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও দেখা গেছিল NRC, CAA-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসেও সেই একই প্রতিবাদ । তা নিয়ে কৌশিকী বলেন, "রাস্তা-ঘাটে, খেলার মাঠে, প্রেসিডেন্সির মধ্যেও NRC, NPR ও CAA-র মতো আইনের বিরোধিতা করছে । আজ প্রেসিডেন্সির একটি বড়দিনেও প্রাক্তনী সংসদের সবাই আমাদের পাশে রয়েছেন । অনেক বয়স্ক মানুষরা এসেও সই করে যাচ্ছেন । ভারতের সব মানুষ এক হয়ে বিরোধিতা করছে ।"

At the University's Dirozio Auditorium
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামের ভিতরে প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান চলছিল । বাইরে প্রাক্তনী থেকে বর্তমান পড়ুয়ারা সকলে জমজমাট আড্ডার মেজাজে ছিল । আর তারই মধ্যে হঠাৎ স্লোগান ওঠে । প্রেসিডেন্সির খেলার মাঠে ঢোকার মুখেই পোস্টার টাঙানো ছিল 'নো NRC, NPR, CAA' লেখা । তারপাশেই ছিল একটি সাদা কাগজে মোড়া বোর্ড । যাতে NRC, NPR, CAA-র বিরুদ্ধে সাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছিল‌ । পড়ুয়াদের সঙ্গে স্বতস্ফুর্তভাবে সামিল হতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তনীদেরও ।

বিভাস চক্রবর্তী বলেন, "আমরা নাট্যকর্মীরা একটা মিছিল বের করেছিলাম, সমবেতভাবে একটা প্রতিবাদী অনুষ্ঠানও করেছিলাম । পাবলিককে কনফিডেন্সে নিয়ে তারপরে আইনটা প্রণয়ন করা উচিত ছিল । এটা গণতন্ত্র নয় । 38 শতাংশ ভোট নিয়ে চিরকালের জন্য আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারে না । দেশভাগের সময় ঠিক যেমনটা হয়েছিল । আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ দিল্লিতে বসে করে ফেলল এটা ঠিক করেনি । গণভোট হোক, হয়ে ঠিক হোক এই আইন গ্রহণীয় কিনা । কিন্তু ভোটাধিকারের দোহাই দিয়ে এইরকম মারাত্মক আইন পাশ করা যায় না ।"

আবার প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র প্রসাদরঞ্জন রায় ছিলেন আজ । পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি সাক্ষরের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "এই NRC, CAA ব্যাপারটা অদ্ভুত রকম তাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের উপরে । রাজনৈতিক দলগুলো যারা এর পক্ষে অথবা বিপক্ষে তারা কেউ-ই এটা ঠিকমতো বোঝেনি । আজও এটার ইম্প্লিকেশন লোকে পুরোপুরি বুঝতে পারছে কিনা জানি না । আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কথা বলিনি । কাজ করেছি সরকারের জন্য । এখন বাধ্য হয়েছি । এর ফল কতটা ক্ষতিকারক তা আমি নিজেও নিশ্চিত নই । আমাদের জেনারেশনের লোকেদের বার্থ সার্টিফিকেট নেই । অথচ এখানে স্কুলে এসেছি, পড়েছি, স্কুলের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকরি করেছি এতো বছর । এরপরে যদি কেউ এখন বলে, তোমার পূর্বপুরুষের জমিজমার দলিল দেখাও, দেখাতে কিন্তু পারব না । আমি সবথেকে দুঃখিত, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে হয়ে এটা প্রতিরোধ করতে পারছে না ।"

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে প্রাক্তনী থেকে বর্তমান

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাক্তন অধ্যাপক তথা সমাজতত্ববিদ প্রশান্ত রায় বলেন, "আমার নিজের মনে হয় সভ্যতায় একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে চলেছে । এই অবস্থাটাকে একটা নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেটা ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে ছিল না । ভারতীয় সভ্যতার পরিবর্তনের একটা দিক আছে, যেটা রাষ্ট্র আনতে চাইছে । এটা যতটা খোলামেলাভাবে বলা হয়েছে তার মধ্যেও একটা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে । যেন লোককে দিয়ে সইয়ে নেওয়া হল একভাবে । এর অনেকগুলো ফলাফল আমরা বুঝতে পারছি না । যারা এটার সমর্থন করছেন তারাও হয়তো বুঝতে পারছেন না । অনেকের ভয় এটা কুফল হতে পারে । সেটা প্রিজুডিস হতে পারে । কিন্তু, দেখা গেছে যখনই সভ্যতাকে একটা অন্য কোনও মাত্রায় সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে তখনই অসম্ভব রক্তপাত হয়েছে । সেগুলো আমরা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি না । তাই এই প্রতিবাদ ।"

প্রেসিডেন্সি কলেজের পথচলা শুরু হয়েছিল 1817 সালের 20 জানুয়ারি । প্রতিষ্ঠা দিবসের উপলক্ষ্যে আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংসদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানের । সেখানে প্রতিবছরের মতো এবছরও কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানিত করা হয় বিভিন্ন পুরস্কার, মেডেল দিয়ে । এদিনই প্রাক্তনী সংসদের তরফ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে অতুলচন্দ্র গুপ্ত বিশেষ প্রাক্তনী পুরস্কার । সেরা প্রাক্তনী হিসাবে এই সম্মান এই বছর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবীদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল । আজ বিশেষ কারণে প্রেসিডেন্সিতে না আসায় তাঁকে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা করা হবে বলে জানালেন প্রাক্তনী সংসদ ।

Intro:কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আজ প্রেসিডেন্সি কলেজ তথা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের 203তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই দিবস উপলক্ষে একদিকে যখন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠান চলছিল, প্রাক্তনীরা একে অপরের সঙ্গে বহু বছর পর দেখা করে পুরনো বন্ধুত্বের বাঁধন আরও মজবুত করছিলেন, তখনই অন্যদিকে NRC, NPR, CAA-র বিরোধিতায় পোস্টার টাঙিয়ে আজাদির স্লোগান তোলেন পড়ুয়ারা। তাঁরা একটি NRC, NPR, CAA বিরোধী সাক্ষর ক্যাম্পেইনও শুরু করেন। সেখানে যেমন বর্তমান পড়ুয়ারা সাক্ষর করেন, তেমনই স্বতস্ফুর্তভাবে সাক্ষর করেন বহু প্রাক্তনীও। নাট‍্যব‍্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, প্রসাদ রায়, প্রশান্ত রায়ের মতো প্রেসিডেন্সির একাধিক খ‍্যাতনামা প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তনী সাক্ষর করেন।


Body:প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী কৌশিকি দত্তচৌধুরি আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসে NRC, NPR, CAA বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে বলেন, "আমরা সই সংগ্রহ করছি NRC, NPR , CAA-র বিরুদ্ধে। যাতে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, NRC, NPR সবাই ভালভাবে নিয়ে নিচ্ছে, সেটা সবাই ভালোভাবে নিচ্ছে না। সবাই বিরোধিতা করছে। সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।" গতকাল ডার্বির স্টেডিয়ামের গ‍্যালারিতে দেখা NRC, CAA-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসেও প্রতিবাদ। তা নিয়ে কৌশিকি বলেন, "যতো রকম জায়গায় দেখানো যায়, রাস্তা-ঘাটে, খেলার মাঠে, প্রেসিডেন্সির মধ্যেও যেভাবে দেখানো যায় যে, প্রেসিডেন্সির মানুষ এবং সাধারন মানুষ NRC, NPR ও CAA-র মতো আইনের বিরোধিতা করছে, সবাই রাস্তায় নেমেছে এটার বিরুদ্ধে। আজ প্রেসিডেন্সির একটি বড়ো দিনে প্রাক্তনী সংসদের সবাই আমাদের পাশে রয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, অনেক বয়স্ক মানুষরা এসেও সই করে যাচ্ছেন। বোঝা যাচ্ছে, ভারতবর্ষের সব মানুষ এর বিরোধিতা করছে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও অডিটোরিয়ামের ভিতরে চলছিল প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান। বাইরে প্রাক্তনী থেকে বর্তমান পড়ুয়ারা জমজমাট আড্ডার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। তারমধ‍্যেই হঠাৎ স্লোগান উঠে আজাদির। প্রেসিডেন্সির খেলার মাঠে ঢোকার মুখেই টাঙানো নো NRC, NPR, CAA লেখা পোস্টার। তারপাশেই রাখা একটি সাদা কাগজে মোড়া বোর্ড। যাতে NRC, NPR, CAA-র বিরুদ্ধে সাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছিল‌। পড়ুয়াদের এই উদ‍্যোগে স্বতস্ফুর্তভাবে সামিল হতে দেখা যায় প্রাক্তনীদেরও।

সাক্ষর করার পরে নাট‍্যব‍্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী বলেন, "No NRC, no NPR, no CAA-র সাপোর্টে লিখলাম। আমরা নাট্যকর্মীরা একটা মিছিল বের করেছিলাম, আমরা সমবেতভাবে একটা প্রতিবাদ অনুষ্ঠানও করেছিলাম। এটার মধ‍্যে অনেক কিছু আছে যেগুলো পাবলিককে কনফিডেন্সে নিয়ে তারপরে আইনটা করা উচিত ছিল। এরা বলছে 38 শতাংশ ভোটে জিতেছি আমরা। ভোটে জেতার পর কী হয় না? গণতন্ত্র এটা নয়। 38 শতাংশ ভোট নিয়ে চিরকালের জন্য আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে? ঠিক যেমন দেশভাগের সময় হয়েছিল, আমাদের পালিয়ে আসতে হয়েছিল আমাদের দেশ থেকে। আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ অন্যরা কোথায় বসে করে ফেলল, দিল্লিতে বসে, ইংরেজদের সঙ্গে বৈঠকে বসে, এটাও ঠিক তেমনি। ওইভাবে হয় না। 38 শতাংশ কিছুই নয়। গণভোট হোক, হয়ে ঠিক হোক এই আইন গ্রহণীয় কিনা। কিন্তু ভোটাধিক‍্যের দোহাই দিয়ে এইরকম মারাত্মক আইন পাশ করা যায় না।" বিভাস চক্রবর্তী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী।

কেন স্বাক্ষর করলেন? প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে 1968 সালে ফিজিক্সে স্নাতক পাশ ও পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তণ অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি প্রসাদরঞ্জন রায় বলেন, "কেন সই মানে এই NRC, CAA ব্যাপারটাই একটা অদ্ভুত রকম তাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের উপরে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যারা এর পক্ষে, বিপক্ষে তারা কেউই তখন এটা ঠিক মতো বোঝেনি। আজও এটার ইম্প্লিকেশন লোকে পুরোপুরি বুঝতে পারছে কিনা জানি না। আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কথা বলিনি। কাজ করেছি সরকারের জন্য, কোনো দলের হয়ে নয়। যার জন্য এরমধ্যেও আমি থাকতে চাইনি। এখন বাধ্য হয়েছি কারণ, এই জিনিসটা হলে শেষ পর্যন্ত এর ফল কী সেটা আমি নিজেও নিশ্চিত নই। আমাদের জেনারেশনের লোকেরা, যাদের বার্থ সার্টিফিকেট নেই, অথচ এখানে স্কুলে এসেছি, পড়েছি, স্কুলের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকরি করেছি এতো বছর। এরপরে যদি কেউ এখন বলে, তোমার পূর্বপুরুষের জমিজমার দলিল দেখাও, দেখাতে কিন্তু পারব না। এই জিনিসটা এইরকম ভাবে মানা যায় না। আমি সবথেকে দুঃখিত, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে হয়ে এটা প্রতিরোধ করতে পারছে না।"

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ অধ‍্যাপক ও বর্তমানে সমাজতত্ববিদ প্রশান্ত রায় বলেন, "আমার নিজের মনে হয় যে, সভ‍্যতায় একটা বিরাট পরিবর্তন হতে পারে। এই অবস্থাটাকে একটা নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেটা ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে ছিল না। ভারতীয় সভ্যতার পরিবর্তনের একটা দিক আছে, যেটা রাষ্ট্র আনতে চাইছে। এটা যতটা ওপেন টু ডিসকাশন বলা হয়েছে তার মধ্যে একটা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে। যেন লোককে দিয়ে সইয়ে নেওয়া হল একভাবে। এর অনেকগুলো ফলাফল আমরা বুঝতে পারছি না। যারা এটার সমর্থন করছেন তারাও হয়তো বুঝতে পারছেন না। অনেকের ভয় এটা কুফল হতে পারে। সেটা প্রিজুডিস হতে পারে। কিন্তু, দেখা গেছে যখনই সভ্যতাকে একটা অন্য কোনো মাত্রায় সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে তখনই অসম্ভব রক্তপাত হয়েছে। সেগুলো আমরা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি না। তাই প্রতিবাদ।"


Conclusion:
Last Updated : Jan 20, 2020, 11:33 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.