কলকাতা, 4 নভেম্বর : চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে এক প্রাক্তন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে চারটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । এই ঘটনায় ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনে (ডব্লিউবিসিইআরসি) অভিযোগ দায়ের হয়েছে । আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি হাসপাতালকে জরিমানা করেছে রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশন ।
75 বছর বয়সি এই প্রাক্তন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক বেলেঘাটায় অবস্থিত আইডিঅ্যান্ডবিজি হাসপাতালের সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত ছিলেন । কিন্তু, কয়েকদিন ধরেই তাঁর শরীর ভালো ছিল না । এরপর বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে 27 জুলাই দমদমে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয় । কোরোনা পরীক্ষাও করা হয়েছিল । এরপর 29 জুলাই তাঁর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । 30 জুলাই সরকারি কোটায় হাওড়ায় অবস্থিত একটি কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে । কিন্তু, ভরতি হওয়ার একদিন পরই তাঁর মৃত্যু হয় ।
এই ঘটনায় কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এক্ষেত্রে চারটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । তবে, মূল অভিযোগ রয়েছে দমদম এবং হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল দুটির বিরুদ্ধে । অভিযোগ, দমদমের ওই বেসরকারি হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়নি । সেখানে রোগীর কোরোনা ধরা পড়ার পরও কেন তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । আরও অভিযোগ, অ্যাম্বুলেন্স আসার পর তাঁর বিল করা হয়েছিল । আর সেই কারণে হাওড়ার ওই হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যেতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল । এদিকে হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র আর ফেরত দেওয়া হয়নি ।
দমদম ও হাওড়া ছাড়াও আনন্দপুরে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং মুকুন্দপুরে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জমা পড়েছে । রোগীকে ভরতি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধে । অভিযোগ, তিন লাখ টাকা জমা দেওয়া না হলে রোগীকে হাসপাতালে ভরতি নেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছিল আনন্দপুরে অবস্থিত ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে । এদিকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বার বার ফোন করা হলেও সেখানে রোগীকে ভরতি করানোর জন্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।
এ প্রসঙ্গে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই প্রাক্তন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিকের আগে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী । তাঁকেও প্রথমে দমদমের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল । এরপরে মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভরতি করার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল । এদিকে তাঁর স্ত্রীর মেডিক্লেম রয়েছে একথা জানার পরই ওই হাসপাতাল রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ ।
এরপরই কমিশনে হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয় । পরে দমদমের বেসরকারি ওই হাসপাতালকে সতর্ক করা হয় কমিশনের তরফে । এদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে দমদমের বেসরকারি ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও রোগীর কোরোনা ধরা পড়লে তাঁকে এই হাসপাতালে রাখা যাবে না । কারণ ওই হাসপাতাল কোরোনা হাসপাতাল নয় । যদিও কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে কোভিড হাসপাতাল বলে কিছু হয় না । এক্ষেত্রে হাসপাতালের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে দমদম ও আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালকে 25 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে । সতর্ক করা হয়েছে মুকুন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালকে ।