ETV Bharat / city

বাড়ছে রহস্য, ভুয়ো আইএসএস-এর টুইটার হ্যান্ডেলে একাধিক প্রভাবশালীর নাম - দেবাঞ্জন দেব

ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন দেবের নেটওয়ার্ক কতদূর বিস্তৃত, তার তদন্ত করতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দাদের ৷ ভুয়ো টিকাকরণ কাণ্ডে উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷

বাড়ছে রহস্য, ভুয়ো আইএসএস-এর টুইটার হ্যান্ডেলে একাধিক প্রভাবশালীর নাম
বাড়ছে রহস্য, ভুয়ো আইএসএস-এর টুইটার হ্যান্ডেলে একাধিক প্রভাবশালীর নাম
author img

By

Published : Jun 24, 2021, 7:08 PM IST

Updated : Jun 24, 2021, 8:20 PM IST

কলকাতা, 24 জুন: কসবায় ভুয়ো টিকাকেন্দ্র কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব আদতে কে ? তা জেনে চক্ষু চড়কগাছ গোয়েন্দাদের । দেবাঞ্জনের টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ারদের তালিকায় রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ৷ এ দিকে, দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় আর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।

জানা গিয়েছে, কলকাতার মাদুরদহ হুসেনপুরের বাসিন্দা দেবাঞ্জন দেব। কসবা থানা এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল মাদুরদহে তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় । তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক জাল নথিপত্র । পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে দেবাঞ্জনের স্কুল এবং এমএসসি সার্টিফিকেট । দেবাঞ্জন জেনেটিক্সে এমএসসি করেছিল । স্কুল থেকে তার কলেজের সমস্ত রেজাল্ট খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন বেশ মেধাবী ছাত্র ছিল দেবাঞ্জন ।

তার বাবা মনোরঞ্জন দেব ছিলেন আবগারি দফতরের ডেপুটি কালেক্টর । তিনি ছেলেকে আইএএস আধিকারিক হওয়ার জন্য নাকি চাপ দিতেন। ফলে এক সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাসখানেক পর বাড়িতে এসে সে পরিবারকে জানিয়েছিল সে আইএএস আধিকারিক হয়ে গিয়েছে । ইতিমধ্যেই তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। সেই রক্ষী আবার প্রাক্তন বিএসএফ আধিকারিক ।

আরও পড়ুন: কথা রাখলেন মমতা, 30 জুন থেকে ক্রেডিট কার্ডে 10 লাখ ঋণ পাবে পড়ুয়ারা

এ দিন সকালে মাদুরদহের বাড়িতে তল্লাশি করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক টিকাল ভায়াল । পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে একাধিক ভুয়ো ভ্যাকসিনের বোতলও । ইতিমধ্যেই সমস্ত বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে । এ দিন বিকালে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, দেবাঞ্জন দেবের কাছ থেকে একাধিক কেমিস্টের খোঁজ মিলেছে । নিজেকে কলকাতা পুরসভার আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে একাধিক কেমিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করত দেবাঞ্জন ।

দেবাঞ্জন প্রায় 12 থেকে 15 জন ব্যক্তিকে তার কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিল । তাদেরকে প্রতিমাসে 23 থেকে 25 হাজার টাকা বেতন দিত দেবাঞ্জন । বেতনের সমস্ত পে-স্লিপ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে লালবাজারে । জেবাঞ্জনের এই লাইফস্টাইল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । এটা বজায় রাখতে গেলে মাসে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয় । প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে তার কাছে এত বিপুল পরিমাণ টাকা আসত ? গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বড়সড় কেউ ।

আরও পড়ুন : আমি গেলে মানুষ উৎসাহ পাবেন, তাই গিয়েছিলাম, অকপট মিমি

জানা গিয়েছে, 2007 সালে আনন্দপুর থানা এলাকার মাদুরদহ 218 নম্বর হোসেনপুরে একটি বাড়িতে বাবা এবং তার বোনকে নিয়ে থাকতে শুরু করে দেবাঞ্জন । জানা গিয়েছে, দেবাঞ্জনের বাড়ির বাইরে নেমপ্লেটে লেখা থাকতো - দেবাঞ্জন দেব (আইএএস অফিসার) । অভিযোগ, সব সময় তার গ্যারেজেই রাখা থাকে নীল বাতি লাগানো একটি ইনোভা গাড়ি । যেটি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ।

নিজেকে আইএএস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল ধৃত দেবাঞ্জন। একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি দেবাঞ্জনের টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ার । লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তার টুইটার হ্যান্ডেলটি নিজেদের দখলে নিয়েছেন গোয়েন্দারা । সাইবার সেলের অধীনে একটি দল ইতিমধ্যেই টুইটার হ্যান্ডেলের যতজন ফলোয়ার্স রয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা বানিয়েছেন । কীভাবে তাঁদের সঙ্গে দেবাঞ্জনের আলাপ হল? তাঁদের সঙ্গে কীভাবে কথাবার্তা হত ? কী কী বিষয়ে কথাবার্তা হত ? যাবতীয় প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তদন্তকারী আধিকারিকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । তার টুইটার হ্যান্ডেলের পেজে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক ব্যক্তিত্ব, যেমন ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি রয়েছেন রাজ্য পুলিশের একাধিক ডিআইজি পদমর্যাদার অধিকারিক । প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে এই রাজ্য সরকারি ব্যক্তিরা এবং মন্ত্রীদের একাংশ বুঝতেই পারলেন না যে, দেবাঞ্জন আদতে ভুয়ো আইএএস আধিকারিক । লালবাজার সূত্রে খবর, প্রয়োজনে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলা হতে পারে ।

ভুয়ো টিকাকরণ নিয়ে বাড়ছে রহস্য

ধৃত দেবাঞ্জন দেবের কাছ থেকে এবং কসবার রাজডাঙার ভুয়ো টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক করোনা টিকা । আদতে কোথা থেকে এল এই টিকাগুলি ? কীভাবে তার কাছে পৌঁছল এত ভ্যাকসিন ? গোয়েন্দাদের মতে, যখন রাজ্য সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এ রাজ্যে টিকার অভাব রয়েছে, এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ এ রাজ্যে টিকা পাননি, ঠিক সেই সময়ে কোথা থেকে এত বিপুল পরিমাণে টিকা পৌঁছে গেল এই যুবকের কাছে ? এই ঘটনার নেপথ্যে বড়সড় কোনও মাদক পাচারের যোগ থাকতে পারে, এমনই সন্দেহ গোয়েন্দাদের ।

আরও পড়ুন : ভুয়ো টিকাকরণ শিবির থেকে ধৃত ভুয়ো আইএএস আধিকারিক

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত জুন মাসে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয় । তদন্তে নেমে সেই অভিযোগের সমস্ত রেকর্ড খতিয়ে দেখছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা । 15 জুন নিউমার্কেট থানায় যে অভিযোগটি হয়েছিল, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথকভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া টিকাগুলি ভুয়ো নাকি সঠিক, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে । গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, বাগড়ি মার্কেট থেকে এই টিকাগুলো আনা হয়েছে । ফলে এই ঘটনার নেপথ্যে একাধিক মেডিক্যাল মাফিয়া যুক্ত থাকতে পারে । ফলে এ দিন বাগড়ি মার্কেটে একাধিক ওষুধ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন গোয়েন্দারা ।

ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জাভেদ খানের সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত । কীভাবে তিনি গোটা ঘটনাটি জানলেন ? পরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন তিনি ? এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, "আমরা একাধিক পোগ্রামে আমন্ত্রিত থাকি । অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী আর আমি ঘটনার সত্যতা যাচাই করার পর মনে হয় গোটা ব্যপারটি জাল । নকল । এরপরেই আমি আইএএস মহলে জানার চেষ্টা করি যে, দেবাঞ্জন দেব নামে কোনও আইএএস আধিকারিক আছেন কি না ? সেখান থেকে উত্তর আসে, না, এই নামে কোনও আইএএস আধিকারিক নেই । ফলে সন্দেহ আরওও বেড়ে যাওয়াতে পুলিশকে বলি গোটা ঘটনার তদন্তে নামতে । পরে আসল ঘটনাটি সামনে আসে । জানা যায় গোটা ক্যাম্পটি ভুয়ো । এ ছাড়াও দেবাঞ্জন দেব নিজেও ভুয়ো আইএএস ।

আরও পড়ুন : ভুয়ো আইএএস কাণ্ডে তদন্তে নামল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ

ইতিমধ্যেই দেবাঞ্জনের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, একাধিক ফোন । উদ্ধার হওয়া যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের এক শীর্ষ অধিকারিক । দেবাঞ্জন দেবের বেশকিছু ভুয়ো ইমেইল আইডি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা । পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া দেবাঞ্জনের একাধিক ফোন থেকে বেশকিছু কল রেকর্ডও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের । দেবাঞ্জন শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিল ? কী কথা হয়েছিল ? যাবতীয় তথ্য জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা ।

পাশাপাশি ফোন থেকে উদ্ধার হয়েছে দেবাঞ্জনের সঙ্গে একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কথোপকথনের রেকর্ড । সেই রেকর্ডগুলির সত্যতা যাচাই করতে ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো হবে । কল রেকর্ড থেকে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন সরকারি আমলার সঙ্গে দেবাঞ্জনের কথোপকথন । যদিও কোন কোন আমলার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল? সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা । পাশাপাশি দেবাঞ্জনের ফোন ঘেঁটে গোয়েন্দারা বেশ কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম এবং ঠিকানা পেয়েছেন । তাঁদেরকে একে একে লালবাজারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ।

কলকাতা, 24 জুন: কসবায় ভুয়ো টিকাকেন্দ্র কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব আদতে কে ? তা জেনে চক্ষু চড়কগাছ গোয়েন্দাদের । দেবাঞ্জনের টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ারদের তালিকায় রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ৷ এ দিকে, দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় আর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।

জানা গিয়েছে, কলকাতার মাদুরদহ হুসেনপুরের বাসিন্দা দেবাঞ্জন দেব। কসবা থানা এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল মাদুরদহে তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় । তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক জাল নথিপত্র । পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে দেবাঞ্জনের স্কুল এবং এমএসসি সার্টিফিকেট । দেবাঞ্জন জেনেটিক্সে এমএসসি করেছিল । স্কুল থেকে তার কলেজের সমস্ত রেজাল্ট খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন বেশ মেধাবী ছাত্র ছিল দেবাঞ্জন ।

তার বাবা মনোরঞ্জন দেব ছিলেন আবগারি দফতরের ডেপুটি কালেক্টর । তিনি ছেলেকে আইএএস আধিকারিক হওয়ার জন্য নাকি চাপ দিতেন। ফলে এক সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাসখানেক পর বাড়িতে এসে সে পরিবারকে জানিয়েছিল সে আইএএস আধিকারিক হয়ে গিয়েছে । ইতিমধ্যেই তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। সেই রক্ষী আবার প্রাক্তন বিএসএফ আধিকারিক ।

আরও পড়ুন: কথা রাখলেন মমতা, 30 জুন থেকে ক্রেডিট কার্ডে 10 লাখ ঋণ পাবে পড়ুয়ারা

এ দিন সকালে মাদুরদহের বাড়িতে তল্লাশি করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক টিকাল ভায়াল । পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে একাধিক ভুয়ো ভ্যাকসিনের বোতলও । ইতিমধ্যেই সমস্ত বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে । এ দিন বিকালে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, দেবাঞ্জন দেবের কাছ থেকে একাধিক কেমিস্টের খোঁজ মিলেছে । নিজেকে কলকাতা পুরসভার আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে একাধিক কেমিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করত দেবাঞ্জন ।

দেবাঞ্জন প্রায় 12 থেকে 15 জন ব্যক্তিকে তার কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিল । তাদেরকে প্রতিমাসে 23 থেকে 25 হাজার টাকা বেতন দিত দেবাঞ্জন । বেতনের সমস্ত পে-স্লিপ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে লালবাজারে । জেবাঞ্জনের এই লাইফস্টাইল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । এটা বজায় রাখতে গেলে মাসে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয় । প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে তার কাছে এত বিপুল পরিমাণ টাকা আসত ? গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বড়সড় কেউ ।

আরও পড়ুন : আমি গেলে মানুষ উৎসাহ পাবেন, তাই গিয়েছিলাম, অকপট মিমি

জানা গিয়েছে, 2007 সালে আনন্দপুর থানা এলাকার মাদুরদহ 218 নম্বর হোসেনপুরে একটি বাড়িতে বাবা এবং তার বোনকে নিয়ে থাকতে শুরু করে দেবাঞ্জন । জানা গিয়েছে, দেবাঞ্জনের বাড়ির বাইরে নেমপ্লেটে লেখা থাকতো - দেবাঞ্জন দেব (আইএএস অফিসার) । অভিযোগ, সব সময় তার গ্যারেজেই রাখা থাকে নীল বাতি লাগানো একটি ইনোভা গাড়ি । যেটি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ।

নিজেকে আইএএস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল ধৃত দেবাঞ্জন। একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি দেবাঞ্জনের টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ার । লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তার টুইটার হ্যান্ডেলটি নিজেদের দখলে নিয়েছেন গোয়েন্দারা । সাইবার সেলের অধীনে একটি দল ইতিমধ্যেই টুইটার হ্যান্ডেলের যতজন ফলোয়ার্স রয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা বানিয়েছেন । কীভাবে তাঁদের সঙ্গে দেবাঞ্জনের আলাপ হল? তাঁদের সঙ্গে কীভাবে কথাবার্তা হত ? কী কী বিষয়ে কথাবার্তা হত ? যাবতীয় প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তদন্তকারী আধিকারিকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । তার টুইটার হ্যান্ডেলের পেজে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক ব্যক্তিত্ব, যেমন ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি রয়েছেন রাজ্য পুলিশের একাধিক ডিআইজি পদমর্যাদার অধিকারিক । প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে এই রাজ্য সরকারি ব্যক্তিরা এবং মন্ত্রীদের একাংশ বুঝতেই পারলেন না যে, দেবাঞ্জন আদতে ভুয়ো আইএএস আধিকারিক । লালবাজার সূত্রে খবর, প্রয়োজনে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলা হতে পারে ।

ভুয়ো টিকাকরণ নিয়ে বাড়ছে রহস্য

ধৃত দেবাঞ্জন দেবের কাছ থেকে এবং কসবার রাজডাঙার ভুয়ো টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক করোনা টিকা । আদতে কোথা থেকে এল এই টিকাগুলি ? কীভাবে তার কাছে পৌঁছল এত ভ্যাকসিন ? গোয়েন্দাদের মতে, যখন রাজ্য সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এ রাজ্যে টিকার অভাব রয়েছে, এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ এ রাজ্যে টিকা পাননি, ঠিক সেই সময়ে কোথা থেকে এত বিপুল পরিমাণে টিকা পৌঁছে গেল এই যুবকের কাছে ? এই ঘটনার নেপথ্যে বড়সড় কোনও মাদক পাচারের যোগ থাকতে পারে, এমনই সন্দেহ গোয়েন্দাদের ।

আরও পড়ুন : ভুয়ো টিকাকরণ শিবির থেকে ধৃত ভুয়ো আইএএস আধিকারিক

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত জুন মাসে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয় । তদন্তে নেমে সেই অভিযোগের সমস্ত রেকর্ড খতিয়ে দেখছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা । 15 জুন নিউমার্কেট থানায় যে অভিযোগটি হয়েছিল, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথকভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া টিকাগুলি ভুয়ো নাকি সঠিক, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে । গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, বাগড়ি মার্কেট থেকে এই টিকাগুলো আনা হয়েছে । ফলে এই ঘটনার নেপথ্যে একাধিক মেডিক্যাল মাফিয়া যুক্ত থাকতে পারে । ফলে এ দিন বাগড়ি মার্কেটে একাধিক ওষুধ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন গোয়েন্দারা ।

ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জাভেদ খানের সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত । কীভাবে তিনি গোটা ঘটনাটি জানলেন ? পরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন তিনি ? এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, "আমরা একাধিক পোগ্রামে আমন্ত্রিত থাকি । অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী আর আমি ঘটনার সত্যতা যাচাই করার পর মনে হয় গোটা ব্যপারটি জাল । নকল । এরপরেই আমি আইএএস মহলে জানার চেষ্টা করি যে, দেবাঞ্জন দেব নামে কোনও আইএএস আধিকারিক আছেন কি না ? সেখান থেকে উত্তর আসে, না, এই নামে কোনও আইএএস আধিকারিক নেই । ফলে সন্দেহ আরওও বেড়ে যাওয়াতে পুলিশকে বলি গোটা ঘটনার তদন্তে নামতে । পরে আসল ঘটনাটি সামনে আসে । জানা যায় গোটা ক্যাম্পটি ভুয়ো । এ ছাড়াও দেবাঞ্জন দেব নিজেও ভুয়ো আইএএস ।

আরও পড়ুন : ভুয়ো আইএএস কাণ্ডে তদন্তে নামল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ

ইতিমধ্যেই দেবাঞ্জনের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, একাধিক ফোন । উদ্ধার হওয়া যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের এক শীর্ষ অধিকারিক । দেবাঞ্জন দেবের বেশকিছু ভুয়ো ইমেইল আইডি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা । পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া দেবাঞ্জনের একাধিক ফোন থেকে বেশকিছু কল রেকর্ডও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের । দেবাঞ্জন শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিল ? কী কথা হয়েছিল ? যাবতীয় তথ্য জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা ।

পাশাপাশি ফোন থেকে উদ্ধার হয়েছে দেবাঞ্জনের সঙ্গে একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কথোপকথনের রেকর্ড । সেই রেকর্ডগুলির সত্যতা যাচাই করতে ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো হবে । কল রেকর্ড থেকে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন সরকারি আমলার সঙ্গে দেবাঞ্জনের কথোপকথন । যদিও কোন কোন আমলার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল? সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা । পাশাপাশি দেবাঞ্জনের ফোন ঘেঁটে গোয়েন্দারা বেশ কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম এবং ঠিকানা পেয়েছেন । তাঁদেরকে একে একে লালবাজারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ।

Last Updated : Jun 24, 2021, 8:20 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.