কলকাতা, 20 জুন : কোরোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন বাম পরিষদীয় দল নেতা সুজন চক্রবর্তী। চিঠির একটি প্রতিলিপি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও দেওয়া হয়।
তিন মাস যাবৎ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কোরোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে শিক্ষাক্ষেত্র সহ বহুবিধ কাজের ক্ষেত্রেই নানান সমস্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষ সম্প্রসারণ, অনলাইন শিক্ষা, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন কিংবা শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রভৃতি নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত এবং যথাযথ অবস্থান স্পষ্ট করা এবং নির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি বলে চিঠিতে আবেদন জানান বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, বিশেষত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহু ক্ষেত্রে ফি বৃদ্ধির চাপ অত্যন্ত বেশি। দু বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানগুলির মাসিক বেতন শুনে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বেতন কমানোর নির্দেশ দিলেও, তা এখনও কার্যকরী হয়নি। বরং লকডাউনের মধ্যেও অনেক স্কুলেই সরাসরি বেতন অথবা অন্যান্য নানা খাতে ফি বাড়ানো হচ্ছে। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে এই অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। লকডাউনের এই সময়কালে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের বেতনে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সুজন চক্রবর্তী বলেন," সরকারের বিভিন্ন স্তরে আলাপ-আলোচনায় শিক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন শিক্ষা চালু করার ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। যদিও তার অসারতাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আমাদের মতো রাজ্যে এটা যে সম্ভব নয়, তা মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই বোঝেন। শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ে তোলা সরকারের কাজ। অনলাইন শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের রাজ্যে নেই। এক্ষেত্রে কেরালা যে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তা সহজসাধ্য নয়। এই অবস্থায় অনলাইন শিক্ষার নামে বিশাল সংখ্যক পড়ুয়াকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে কার্যত বাতিল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, কোরোনার জেরে শিক্ষাবর্ষের তিন মাস ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী দেড় মাসের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে না। স্বভাবতই পাঠ্যসূচি নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থা এবং সর্বভারতীয় পরীক্ষার সমূহের উপর নির্ভর করেই শিক্ষাবর্ষ স্থির করা যেতে পারে। কিন্তু স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ সম্প্রসারণ করা এবং তা দ্রুত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা জরুরী, যাতে শিক্ষক, অভিভাবক কিংবা ছাত্রছাত্রীরা বাকি সময়ের পরিকল্পনা যতটা সম্ভব যথাযথ ভাবে করতে পারেন। এ বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠনসমূহ ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
সুজন চক্রবর্তী জানান, "এই বিষয়ে নির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়গুলির গুরুত্ব মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন। এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে।"