মালদা, 9 জানুয়ারি : মালদার সুজাপুরের ঘটনায় CID তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল ৷ আজই মালদা রওনা হয়ে গেছে CID-র দল ৷ সূত্রের খবর, নবান্নের তরফে নির্দেশ, গন্ডগোলে জড়িতদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না ।
অন্যদিকে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুরে অভিযুক্ত এক পুলিশকর্মী ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ ৷ আজ এ'কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ তিনি জানিয়েছেন, গতকালের ঘটনায় ধৃতদের আজ জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ৷
উল্লেখ্য, বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ভারত বনধকে কেন্দ্র করে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালিয়াচক থানার সুজাপুর ৷ পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার সংঘর্ষ রণক্ষেত্রের আকার নেয় ৷ পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ৷ মোট নয়টি গাড়ি আগুনে পুড়ে যায় ৷ একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় ৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-কাচের বোতলের সঙ্গে বোমাও ছোড়া হয় ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট, এমনকী শূন্যে গুলিও চালায় পুলিশ ৷ এরই মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার সেখানে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছে এই রকম একটি ভিডিয়ো ফুটেজ় প্রকাশ্যে আসে ৷ যা নিয়ে গতকালই দুঃখপ্রকাশ করেন পুলিশ সুপার ৷ ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তাকর্মীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেন ৷ গতকাল বিকেল থেকেই শুরু হয় ধরপাকড় ৷
পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাসহ একাধিক অভিযোগে এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷ আটক করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে ৷ পুলিশ সুপার বলেন," গতকালের ঘটনায় আমরা বেশ কিছু ভিডিয়ো ফুটেজ় সংগ্রহ করেছি ৷ সেই ফুটেজ়গুলি খতিয়ে দেখে ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি ৷ সে ঘটনায় আরও যারা জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে৷ শুধু তাই নয়, গতকাল যারা মানুষকে উত্তেজনায় প্ররোচনা দিয়েছিল, তাদেরও আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি ৷ তাদের বিরুদ্ধেও আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ আর গতকাল যে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিয়ো ফুটেজ় আমাদের হাতে এসেছে, তা খতিয়ে দেখে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে ৷ তাদের বিরুদ্ধেও আমরা বিভাগীয় পদক্ষেপ নেব ৷"
পুলিশ সুপার এই নিয়ে বিশদে কিছু না বললেও জানা গিয়েছে, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত এক পুলিশকর্মী ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ আরও কয়েকজন পুলিশ ও সিভিককর্মী এই ঘটনায় জড়িত ছিল বলে জানতে পেরেছেন পুলিশকর্তারা ৷ তাদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে ৷ প্রাথমিকভাবে তাদের সাসপেন্ড করা হতে পারে বলেই জানা যাচ্ছে ৷ তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের নজরে রয়েছে ধর্মঘটের আহ্বায়করাও ৷ পুলিশের বক্তব্য, যে ভাবে নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার দায় জেলা পুলিশকে নিতে হয়েছে, একইভাবে গতকালের ঘটনায় দায় ধর্মঘটের আহ্বায়করা এড়িয়ে যেতে পারে না ৷
অভিযুক্তদের নাম আমিনুল হক, আবু সুফিয়ান, ইমরান আলি, আসরাফুল শেখ, মহম্মদ সানাউল্লা হক, মহম্মদ মকিম শেখ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৷ সাতদিনের পুলিশি হেপাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতদের আজই জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারক তাদের পাঁচদিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ এদিকে আদালতে যাওয়ার পথে ধৃতরা দাবি করে, পুলিশ তাদের মিথ্যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ৷ তারা এই ঘটনায় জড়িত নয় ৷