কলকাতা, 1 অগস্ট: তাঁর পরিচয়, তিনি দলবদলু ! বিধানসভার খাতায় তাঁর নামের পাশে এখনও জ্বলজ্বল করছে 'বিজেপি বিধায়ক'-এর পরিচয় ৷ অথচ, সেই তিনিই কিনা পেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির দায়িত্ব ! এ নিয়ে বিজেপি সরব হলেও যাঁকে নিয়ে এত হইচই সেই বিশ্বজিৎ দাস (Biswajit Das) কিন্তু রা কাড়ছেন না মোটেও ৷ ইটিভি ভারতের তরফ থেকে বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও মন্তব্য করেননি 'বিজেপি বিধায়ক' ! নাকি 'তৃণমূল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি' ?
বিষয়টি একটু খোলসা করা যাক ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে তখন 'গেরুয়া হাওয়া'র দাপট ! দলে দলে নেতা, কর্মীরা তৃণমূলের সঙ্গে ত্যাগ করে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন ৷ সেই তালিকায় নাম তোলেন বিশ্বজিৎও ৷ বিজেপি-ও তাঁকে যোগ্য সম্মান দেয় ৷ উত্তর 24 পরগনার বাগদা কেন্দ্র (Bagdah Assembly Constituency) থেকে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয় ৷ ভোট যুদ্ধে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করে পরিতোষ কুমার সাহাকে ৷ ইভিএম-এ পরিতোষকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বিশ্বজিৎ ৷ কিন্তু, নির্বাচনের ফলে তৃণমূল 200 পার করতেই রাজ্য রাজনীতির হাওয়া ফের উলটো দিকে বইতে শুরু করে ৷ দলছাড়ারা এবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেন ৷ সেই স্রোতেও গা ভাসান বিশ্বজিৎ ৷ জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র আর কোনও সম্পর্ক নেই ৷ তিনি এবার থেকে তৃণমূলেরই সদস্য ৷
আরও পড়ুন: BJP : বিধায়ক-সাংসদদের দলবদল আটকাতে শুভেন্দু-সুকান্তকে বিশেষ দায়িত্ব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের
কিন্তু, পুরনো দলে ফেরার পরও নিজের বিধায়ক পদ ছাড়েননি বিশ্বজিৎ ৷ এই বিষয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Biman Banerjee) কাছে অভিযোগও জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ কিন্তু, অধ্যক্ষ সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন ! গেরুয়া শিবিরের অন্তত এমনটাই দাবি ৷ বিজেপি অবশ্য এখানেই ক্ষান্ত হয়নি ৷ তারা বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রুজু করে ৷ কিন্তু, সেখানে বিশ্বজিৎ জানান, তৃণমূল কংগ্রেস নয়, তিনি আদতে বিজেপি-র সদস্য এবং বিজেপি-র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি !
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের (All India Trinamool Congress) তরফ থেকে জেলা সভাপতিদের নামের নতুন তালিকা প্রকাশ (TMC Leadership Reshuffle) করা হয় ৷ তাতে বিশ্বজিৎ দাসের নামও রয়েছে ! উত্তর 24 পরগনার বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে তাঁকে ! এ নিয়ে বিজেপি-র মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের জামানায় সবই হয় ৷ এই সত্যিটা আপনি জানেন ৷ আমিও জানি ৷ কিন্তু, অধ্যক্ষ জানেন না ৷ এমনকী, তাঁকে জানালেও তিনি মানেন না ৷ এর ফল যা হওয়ার, তাই হচ্ছে ৷ একজন ব্যক্তি বিজেপি বিধায়কের পদে থেকেও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হচ্ছেন ! এই জন্যই তো বলে, সত্য সেলুকাস ! কী বিচিত্র এই দেশ !"
এই বিষয়ে বিশ্বজিতের কোনও বক্তব্য আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করেছিলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ কিন্তু, 'বিজেপি বিধায়ক' তথা 'তৃণমূল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি'-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি ৷