বসিরহাট (উত্তর 24 পরগনা), 7 সেপ্টেম্বর : বাগুইআটির অপহৃত দুই স্কুল পড়ুয়া অতনু দে এবং অভিষেক নস্করকে খুনের (Baguiati Double Murder) পর ব্যবহৃত ভাড়া গাড়িটি ফের গাড়ি সংস্থার অফিসে ফিরিয়ে দিয়েছিল আততায়ীরা । এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, কর্নাটকের (Karnataka) নম্বর প্লেট লাগানো লাল রঙের ওই ভাড়া করা গাড়িতেই গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয় অপহৃত ওই দুই ছাত্রকে । খুনের পর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে গাড়ির মধ্যে রক্তের দাগ মুছে ছিল ভাড়াটে খুনিরা । অর্থাৎ ভাড়া করা গাড়িটি নেওয়ার আগে যেভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল, সেভাবেই গাড়িটি সংস্থার অফিসে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ।
যদিও, তদন্তকারীরা অফিসারেরা উত্তর 24 পরগনার মিনাখার ওই ভাড়া গাড়ির সংস্থার অফিস থেকে ইতিমধ্যেই খুনে ব্যবহৃত গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে । সেটির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাগুইআটি থানাতে। এমনটাই জানা গিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট (Bidhannagar Police Commissionerate) সূত্রে ।
বাগুইআটি কাণ্ডে ধৃত চার সুপারি কিলারকে (Supari Killer) জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অপহরণের দিন অর্থাৎ 22 অগস্ট অতনুর প্রতিবেশী সত্যেন্দ্র চৌধুরী গাড়িটি একটি অনলাইন সংস্থা থেকে ভাড়া নেয় । যার অফিস রয়েছে মিনাখার বাসন্তী হাইওয়ের পাশে ।ভাড়া করা গাড়িটি 'সেলফ ড্রাইভ সার্ভিস'-মুডে নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্র মারফত ।
সূত্রের খবর, এইভাবে গাড়ি নেওয়ার অর্থ হল চালক নিজে গাড়ি চালাতে জানলেই গাড়ির সঙ্গে আর কোনও চালকের যাওয়ার প্রয়োজন হয় না । অনলাইন পদ্ধতিতে লাল রঙের ওই গাড়িটি ভাড়া নেওয়ার পর সেদিনই দুই মাধ্যমিক পড়ুয়া অতনু এবং অভিষেককে বাইক কেনার নাম করে ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন ব্যবসায়ী সত্যেন্দ্র চৌধুরী । এরপর জগৎপুরের বাড়ির অনতিদূরে অপেক্ষারত ওই গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় দুই স্কুল পড়ুয়াকে ।
ওই সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, গাড়িতে আগে থেকেই বসেছিল সত্যেন্দ্র-সহ পাঁচ ভাড়াটে খুনি । গাড়ির সামনের স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন খোদ সত্যেন্দ্র নিজেই । প্রথমে সে গাড়িটি নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ চক্কর কাটে রাজারহাটে । এরপর, রাজারহাট-বিষ্ণুপুরের একটি শোরুমে যায় সকলে । কিন্তু, সেখানে বাইক না কিনে সোজা তারা দুই ছাত্রকে নিয়ে বাসন্তী হাইওয়ের দিকে চলে যায় । দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে তাদের গাড়ি । চলন্ত গাড়িতেই শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয় দুই পড়ুয়াকে ।
ওই সূত্রের আরও দাবি, রাতের দিকে বসিরহাটের ন্যাজাট ও হাড়োয়ার দু’টি নিঝুম এলাকার নয়ানজুলিতে দেহ ফেলে দিয়ে চম্পট দেয় আততায়ীরা । 23 ও 25 অগস্ট দেহ দু’টি নয়ানজুলি থেকে পুলিশ উদ্ধার করলেও প্রায় 13 দিন ধরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে অপহৃত দুই ছাত্রের দেহ পড়েছিল বসিরহাট জেলা হাসপাতালের মর্গে । আর এখানেই পুলিশ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নিহত ছাত্রদের পরিবার । অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরও কেন 14 দিন পর ওই দুই ছাত্রের দেহ শনাক্ত হল, তা নিয়েও উঠেছে ভুরি ভুরি প্রশ্ন !
এদিকে, খুন ও দেহ লোপাটের পর বেশ কিছুক্ষণ লাল রঙের ওই ভাড়া করা গাড়িটি বাসন্তী হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বলে খবর স্থানীয় সূত্রে । তাহলে কি বাসন্তী হাইওয়েতে রাতের দিকে কোনও পুলিশি টহলের ব্যবস্থা ছিল না ? এটা কি প্রতিদিনের চিত্র, নাকি খুনের দিনই কোনও নিরাপত্তা ছিল না হাইওয়েতে ? তাহলে তো পুলিশের নজর এড়িয়ে যে কেউ যে কোনও অপরাধ করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে ? এমনই সব প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
অন্যদিকে, নিঝুম বাসন্তী হাইওয়েতে আগে এসে পুলিশের ফাঁক ফোকরের রেকি খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী সত্যেন্দ্র চৌধুরী করে গিয়েছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের ।
আরও পড়ুন : সমন্বয়ের অভাবের মাশুল আগেও দিয়েছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট !