কলকাতা, 9 জুন : ফের কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে । সন্দেশখালি নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ রাজ্য সরকারের ।
গতকাল সন্দেশখালি তৃণমূল-BJP সংঘর্ষে তপ্ত হয়ে ওঠে । প্রাণ হারান 4 জন । বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে ওঠে । দাবি-পালটা দাবি, দোষারোপ-পালটা দোষারোপে উত্তপ্ত থাকল রাজ্য-রাজনীতি । বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক । রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র । সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টার কসুর করেনি BJP ।
কিছুটা চাপে পড়ে পালটা কেন্দ্রকে আক্রমণ করার পথে তৃণমূল সরকার । কেন্দ্র রাজ্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে , চক্রান্ত করে রাজ্যের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের । দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন । সন্দেশখালি প্রসঙ্গে যেভাবে রাজ্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক উপদেশ দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা করেন পার্থ । বাংলায় BJP-র চক্রান্তে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি । বাংলায় শান্তির পরিবেশ বজায় রয়েছে বলেও দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী । পার্থর দাবি, BJP-র অঙ্গুলি হেলনেই চলছে কেন্দ্রীয় সরকার ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : মমতার স্মৃতি কমেছে, নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ তুললেন মুকুল
উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যের উদাহরণ টেনে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে পিছপা হননি পার্থ । তৃণমূল মহাসচিবের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ-গুজরাতের মতো রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । সম্প্রতি একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা সামনেও এসেছে এই সব রাজ্যে । সেইসব রাজ্যের বিষয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা আর বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ভূমিকা একরকম নয় ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : পিছু হটল BJP, সন্দেশখালিতেই দেহ সৎকারের সিদ্ধান্ত
এদিকে আজই সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক । গোটা ঘটনার রিপোর্ট চায় । সেইমতো আজই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সন্দেশখালির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠিয়েছে রাজ্য । পাশাপাশি গতকালের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও যে ক্ষোভ শোনা গেছিল, তা উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য । গাফিলতির কোনও অভিযোগ নেই বলেই দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে । দুষ্কৃতী তাণ্ডবেই সন্দেশখালি তপ্ত হয় বলেও রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে । একইসঙ্গে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবরকম ব্যবস্থাই নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : সন্দেশখালি ইশু : রাজ্যপালের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা
রাজ্য সরকার যখন সন্দেশখালির ঘটনায় কেন্দ্র তথা BJP-কে কাঠগড়ায় তুলছে তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হত্যা করার অভিযোগ আনল গেরুয়া শিবির । একসময় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায় সরাসরি নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রীকে । নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গকে সামনে এনে মমতাকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি মুকুল । তাঁর দাবি, নন্দীগ্রাম গণহত্যার সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যে ভূমিকায় দেখা গেছিল, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে সেভাবেই দেখা যাচ্ছে । নন্দীগ্রামের স্মৃতি মমতা ভুলে গেছেন বলেও কটাক্ষ করতে শোনা গেছে মুকুলকে ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : একরাতেই সন্দেশখালিতে শ্মশানের নিস্তব্ধতা !
আজ সকাল থেকেই সন্দেশখালি ইশুতে তৃণমূল-BJP তরজা চরমে ওঠে । পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দুই দলের প্রতিনিধি দলই ঘটনাস্থানে যায় । নিহত BJP কর্মী-সমর্থকদের দেহ নিয়ে কলকাতায় আসার চেষ্টা করেন দিলীপ ঘোষেরা । মাঝপথে তাঁদের আটকায় পুলিশ । আর তারপরেই রাস্তায় চিতা সাজিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা শুরু করে BJP কর্মীরা । পুলিশের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো BJP নেতারা । যদিও পরিস্থিতির চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে তাঁরা । সন্দেশখালিতে রাতেই সৎকার করা হয় নিহত BJP কর্মীদের ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : দেহ সৎকার নিয়ে ধুন্ধুমার, রাজ্যজুড়ে কালা দিবস পালন আগামিকাল
রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে সোমবার কালা দিবসের ডাক দিয়েছে BJP । তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী । সন্দেহ নেই সোমবারের এই বৈঠকে অন্যতম ইশু হতে চলেছে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ । রাজ্যপাল প্রধানমন্ত্রীকে কী রিপোর্ট দেন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী দিনে কোন পথে এগোবে রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্ক ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদে লালবাজার অভিযান BJP-র
লোকসভা ভোটের পর যখন মনে করা হচ্ছিল রাজ্যে কিছুটা হলেও কোণঠাসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী । প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান বাতিল করা, তারপর নীতি আয়োগের বৈঠকে না গিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধই তাঁর একমাত্র রণকৌশল । এরই মধ্যে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে চাপ তৈরি করে BJP । ফের কেন্দ্র বিরোধিতার পথেই তৃণমূল ।