ETV Bharat / briefs

সায়ানাইড খেয়ে জীবন উৎসর্গ প্রীতিলতার, ভুলতে বসেছে দেশ? - Masterda Surja Sen

প্রীতিলতা বলেছিলেন, "আমার আশা, আমার বোনেরা আর নিজেদের দুর্বল ভাববে না । তারা হাজারে হাজারে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবে । যে কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে নিজেদের তৈরি করবে । "

প্রীতিলতা
author img

By

Published : May 5, 2019, 11:31 PM IST

Updated : May 6, 2019, 9:16 PM IST

কলকাতা, 5 মে : 1932 সালের 23 সেপ্টেম্বর । রাত 10টা 45 মিনিট নাগাদ এক পঞ্জাবি ব্যক্তির সঙ্গে লুঙ্গি ও শার্ট পরিহিত একটি দল চট্টগ্রামের পাহাড়তালি ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে জড়ো হলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । ক্লাবে ছিল বেশ কয়েকজন পুলিশ । তারা পালটা গুলি চালায় । গুরুতর জখম হন পঞ্জাবি ব্যক্তি । পুলিশের হাতে ধরার পড়ার আগে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেন । কিন্তু, কে তিনি ? উত্তরটা পেতে আজ থেকে পিছিয়ে যেতে হবে ঠিক 108 বছর ।

1911 সালের 5 মে । চট্টগ্রাম পৌরসভার করণিক জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার (দাশগুপ্ত) ও প্রতিভাময়ী দেবীর দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে । নাম রাখা হল প্রীতিলতা । ডাকনাম রানি । ডাক্তার খাস্তাগির গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে ভরতি হন প্রীতিলতা । ছোটো থেকেই প্রখর বুদ্ধিমতী, কল্পনাবিলাসী ছিলেন । ভালোবাসতেন সাহিত্য । ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকা বোর্ড থেকে প্রথম হন । তারপর কলকাতার বেথুন কলেজে। ডিসটিংশন সমেত দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক হন । কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর শংসাপত্র আটকে দেয় । তারপর চট্টগ্রামে ফিরে আসেন । নন্দনকানন অপর্ণাচরণ নামে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । কিছুদিন পর প্রধান শিক্ষিকা হন । আরও পাঁচজনের মতো জীবনযাপন করলেও স্বাধীনতা আন্দোলনে বরাবর অনুপ্রাণিত ছিলেন প্রীতিলতা । তাঁর প্রমাণও মেলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়িকা কল্পনা দত্তর জীবনীতে । যিনি প্রীতিলতার সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন । কল্পনা লেখেন, "স্কুলে পড়ার সময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের কোনও স্বচ্ছ ধারণা ছিল না । তারপর ঝাঁসির রানির আমাদের চিন্তাকে বাড়ায় । মাঝেমধ্যে আমরা নিজেদের ভয়ডরহীন ভাবতাম । " তখন থেকেই হয়ত প্রীতিলতার মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার বাসনা আরও তীব্র হতে থাকে ।

1930-র দশকে প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রীতিলতা । তখন চট্টগ্রামে বিপ্লবী হিসেবে আদর্শ হয়ে উঠেছেন সূর্য সেন । ধলঘাটের ক্যাম্পে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে দেখা করেন প্রীতিলতা । সঙ্গে ছিলেন অপর এক বিপ্লবী নির্মল সেন । সূর্য সেন চাইতেন, প্রীতিলতা তাঁদের দলে যোগ দেন । কিন্তু, বিরোধিতা করেন বিনোদবিহারী চৌধুরি । তিনি যুক্তি দেন, তাঁদের সশস্ত্র সংগ্রামী দলে মহিলারা যোগদান করেন না । যদিও পরে নিজের অবস্থান পালটান তিনি । দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রীতিলতার দৃঢ় মনোভাব ও দেশের প্রতি ভালোবাসা আকর্ষণ করে মাস্টারদাকে । প্রীতিলতাকে নিজের দলের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন । তাঁর যোগদানের স্বপক্ষে যুক্তি ছিল, মেয়েরা অস্ত্র পাচার করলে তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখা হবে না ।

ব্রিটিশদের ধাক্কা দিতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন মাস্টারদা । 1930 সালের 18 এপ্রিল মাস্টারদা, প্রীতিলতা ও 60-র অধিক বিপ্লবীর সঙ্গে চট্টগ্রামের দুটি প্রধান অস্ত্রাগার লুট করে । কলকাতার সঙ্গে টেলিগ্রাম, টেলিফোন ও রেল ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় । রিজ়ার্ভ পুলিশ লাইনও দখল করে নেয় বিপ্লবীরা । পরবর্তী দু'বছরে বিস্ফোরক সরবরাহ করতে থাকেন প্রীতিলতা । জাতীয়তাবাদী পুস্তিকা লিখতে থাকেন । তখন মাস্টারদার অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস জেলে ছিলেন । প্রীতিলতার মাধ্যমে রামকৃষ্ণর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মাস্টারদা ।

তারপর আসে 1932 সালের সেপ্টেম্বর মাস । চট্টগ্রামের পাহাড়তালি ইউরোপিয়ান ক্লাবের দরজায় টাঙানো বোর্ডে লেখা ছিল, "কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশের অনুমতি নেই (Dogs and Indians are not allowed )" । সেখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন মাস্টারদা । সেই দলের দায়িত্ব পান প্রীতিলতা । সেই মতো পঞ্জাবি ছদ্মবেশে যান । পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় । কিন্তু, আত্মসমর্পণ করেননি প্রীতিলতা । নিজেকে অত্যাচারিত হতে দেননি ইংরেজদের হাতে । মাত্র 21 বছর বয়সে দেশের স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন । মৃত্যুর আগে প্রীতিলতা বলেছিলেন, "আমার আশা, আমার বোনেরা আর নিজেদের দুর্বল ভাববে না । তারা হাজারে হাজারে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবে । যে কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে নিজেদের তৈরি করবে । " প্রীতিলতার ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন আরও প্রীতিলতারা । তাঁর জীবনকে বৃথা যেতে দেননি । প্রীতিলতার মৃত্যুর 15 বছর পর ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় ভারত । কিন্তু,

প্রীতিলতার সংগ্রাম বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে । আজ তাঁর 108 তম জন্মদিনেও কোথাও যেন চাপা পড়ে গেছে তাঁর স্মৃতিকথা । তাতে কী ? যে প্রীতিলতা নিজের পরোয়া না করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, দেশের মানুষ তাঁকে কী সম্মান দিলেন বা নাই দিলেন তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না । কারণ তিনি দেশের অসংখ্য মানুষের মধ্যে বিপ্লবের যে বীজ রোপণ করছিলেন , তা অচিরেই দেশকে স্বাধীনতার পথে দিশা দেখিয়েছিল ।

কলকাতা, 5 মে : 1932 সালের 23 সেপ্টেম্বর । রাত 10টা 45 মিনিট নাগাদ এক পঞ্জাবি ব্যক্তির সঙ্গে লুঙ্গি ও শার্ট পরিহিত একটি দল চট্টগ্রামের পাহাড়তালি ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে জড়ো হলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । ক্লাবে ছিল বেশ কয়েকজন পুলিশ । তারা পালটা গুলি চালায় । গুরুতর জখম হন পঞ্জাবি ব্যক্তি । পুলিশের হাতে ধরার পড়ার আগে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেন । কিন্তু, কে তিনি ? উত্তরটা পেতে আজ থেকে পিছিয়ে যেতে হবে ঠিক 108 বছর ।

1911 সালের 5 মে । চট্টগ্রাম পৌরসভার করণিক জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার (দাশগুপ্ত) ও প্রতিভাময়ী দেবীর দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে । নাম রাখা হল প্রীতিলতা । ডাকনাম রানি । ডাক্তার খাস্তাগির গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে ভরতি হন প্রীতিলতা । ছোটো থেকেই প্রখর বুদ্ধিমতী, কল্পনাবিলাসী ছিলেন । ভালোবাসতেন সাহিত্য । ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকা বোর্ড থেকে প্রথম হন । তারপর কলকাতার বেথুন কলেজে। ডিসটিংশন সমেত দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক হন । কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর শংসাপত্র আটকে দেয় । তারপর চট্টগ্রামে ফিরে আসেন । নন্দনকানন অপর্ণাচরণ নামে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । কিছুদিন পর প্রধান শিক্ষিকা হন । আরও পাঁচজনের মতো জীবনযাপন করলেও স্বাধীনতা আন্দোলনে বরাবর অনুপ্রাণিত ছিলেন প্রীতিলতা । তাঁর প্রমাণও মেলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়িকা কল্পনা দত্তর জীবনীতে । যিনি প্রীতিলতার সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন । কল্পনা লেখেন, "স্কুলে পড়ার সময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের কোনও স্বচ্ছ ধারণা ছিল না । তারপর ঝাঁসির রানির আমাদের চিন্তাকে বাড়ায় । মাঝেমধ্যে আমরা নিজেদের ভয়ডরহীন ভাবতাম । " তখন থেকেই হয়ত প্রীতিলতার মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার বাসনা আরও তীব্র হতে থাকে ।

1930-র দশকে প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রীতিলতা । তখন চট্টগ্রামে বিপ্লবী হিসেবে আদর্শ হয়ে উঠেছেন সূর্য সেন । ধলঘাটের ক্যাম্পে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে দেখা করেন প্রীতিলতা । সঙ্গে ছিলেন অপর এক বিপ্লবী নির্মল সেন । সূর্য সেন চাইতেন, প্রীতিলতা তাঁদের দলে যোগ দেন । কিন্তু, বিরোধিতা করেন বিনোদবিহারী চৌধুরি । তিনি যুক্তি দেন, তাঁদের সশস্ত্র সংগ্রামী দলে মহিলারা যোগদান করেন না । যদিও পরে নিজের অবস্থান পালটান তিনি । দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রীতিলতার দৃঢ় মনোভাব ও দেশের প্রতি ভালোবাসা আকর্ষণ করে মাস্টারদাকে । প্রীতিলতাকে নিজের দলের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন । তাঁর যোগদানের স্বপক্ষে যুক্তি ছিল, মেয়েরা অস্ত্র পাচার করলে তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখা হবে না ।

ব্রিটিশদের ধাক্কা দিতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন মাস্টারদা । 1930 সালের 18 এপ্রিল মাস্টারদা, প্রীতিলতা ও 60-র অধিক বিপ্লবীর সঙ্গে চট্টগ্রামের দুটি প্রধান অস্ত্রাগার লুট করে । কলকাতার সঙ্গে টেলিগ্রাম, টেলিফোন ও রেল ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় । রিজ়ার্ভ পুলিশ লাইনও দখল করে নেয় বিপ্লবীরা । পরবর্তী দু'বছরে বিস্ফোরক সরবরাহ করতে থাকেন প্রীতিলতা । জাতীয়তাবাদী পুস্তিকা লিখতে থাকেন । তখন মাস্টারদার অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস জেলে ছিলেন । প্রীতিলতার মাধ্যমে রামকৃষ্ণর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মাস্টারদা ।

তারপর আসে 1932 সালের সেপ্টেম্বর মাস । চট্টগ্রামের পাহাড়তালি ইউরোপিয়ান ক্লাবের দরজায় টাঙানো বোর্ডে লেখা ছিল, "কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশের অনুমতি নেই (Dogs and Indians are not allowed )" । সেখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন মাস্টারদা । সেই দলের দায়িত্ব পান প্রীতিলতা । সেই মতো পঞ্জাবি ছদ্মবেশে যান । পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় । কিন্তু, আত্মসমর্পণ করেননি প্রীতিলতা । নিজেকে অত্যাচারিত হতে দেননি ইংরেজদের হাতে । মাত্র 21 বছর বয়সে দেশের স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন । মৃত্যুর আগে প্রীতিলতা বলেছিলেন, "আমার আশা, আমার বোনেরা আর নিজেদের দুর্বল ভাববে না । তারা হাজারে হাজারে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবে । যে কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে নিজেদের তৈরি করবে । " প্রীতিলতার ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন আরও প্রীতিলতারা । তাঁর জীবনকে বৃথা যেতে দেননি । প্রীতিলতার মৃত্যুর 15 বছর পর ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় ভারত । কিন্তু,

প্রীতিলতার সংগ্রাম বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে । আজ তাঁর 108 তম জন্মদিনেও কোথাও যেন চাপা পড়ে গেছে তাঁর স্মৃতিকথা । তাতে কী ? যে প্রীতিলতা নিজের পরোয়া না করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, দেশের মানুষ তাঁকে কী সম্মান দিলেন বা নাই দিলেন তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না । কারণ তিনি দেশের অসংখ্য মানুষের মধ্যে বিপ্লবের যে বীজ রোপণ করছিলেন , তা অচিরেই দেশকে স্বাধীনতার পথে দিশা দেখিয়েছিল ।

New Delhi, May 05 (ANI): Salman Khan starrer 'Dabangg 3' has been in the news ever since its inception. The fans of the actor are eagerly waiting to see what's in store for them. Joining Salman for the third instalment of the 'Dabangg' franchise is Kannada superstar Sudeep.Salman has already completed the first schedule of the film. The actor is now shooting in Mumbai, where he was joined by Sudeep.The Kannada star wrapped up the first day of the shoot recently and posted a picture on his Twitter handle from the film's sets with none other than Dabangg Khan! Sudeep also thanked the 53-year-old actor for welcoming him with warmth.

Last Updated : May 6, 2019, 9:16 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.