উত্তরাখণ্ড, 7 ফেব্রুয়ারি: ছুটির রবিবারে প্রকৃতির এক নিদারুণ বিপর্যয়ের সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। হিমবাহ ভেঙে ব্যাপক তুষারধসে ধুলিসাত্ হয়ে গেল উত্তরাখণ্ডের চামোলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফিরে এল আজ থেকে ঠিক 8 বছর আগের কেদারনাথ বিপর্যয়ের স্মৃতি। যা কেড়ে নিয়েছিল হাজার হাজার প্রাণ।
2013 সাল। 17 জুনের ভোরটা যেন অভিশাপের মতো নেমে এসেছিল উত্তরাখণ্ডের মানুষের উপর। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল জনজীবন। হড়পা বানে প্লাবিত হয় চোরাবাড়ি লেক সংলগ্ন এলাকা। সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা, নৌসেনা, আইটিবিপি, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, এনডিআরএফ ও স্বেচ্ছাসেবী মানুষেরা উদ্ধারকাজ চালায়। উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হয় 45টি চপার। অত্যন্ত খারাপ আবহাওয়া ও দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় আটকে পড়া 33 হাজার মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
ঠিক কী হয়েছিল?
13 থেকে 17 জুন মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ভাসে উত্তরাখণ্ড। তারই জেরে চোরাবাড়ি হিমবাহ গলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটায় মন্দাকিনী নদীতে। প্লাবিত হয় উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিম নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা। রেকর্ড বৃষ্টিতে হড়পা বান ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। প্রবল জলের তোড়ে ভেসে যান বহু মানুষ। প্রাণ যায় কয়েক হাজারের। নষ্ট হয়ে যায় বহু সম্পত্তি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেদারনাথ উপত্যকার অষ্টম শতাব্দীর শিব মন্দির। একটি প্রতিবেদনে ইকোলজিস্ট চন্দ্র প্রকাশ কালা জানান, 2013 সালের কেদারনাথের বিপর্যয়ে প্রায় 285 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেতু ও রাস্তা, 30 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাঁধ প্রকল্প ও 195 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজ্য পর্যটনের ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ভেঙে ব্যাপক তুষারধস! ভাঙল বাঁধ, 150 জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
বন্যার কারণ কী ছিল?
ভূবিজ্ঞানীদের মতে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে হড়পা বান হয়েছিল। তবে বিপর্যয় এতটা ভয়াবহ আকার নেওয়াটা ম্যানমেড। অর্থাত্ প্রকৃতিকে মানুষের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাকেই এই বিপর্যয়ের জন্য দুষেছিলেন পরিবেশবিদরা। ইকোলজিস্ট চন্দ্র প্রকাশ কালার কথায়, ''অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছ নির্মাণ, ভ্রান্ত পর্যটন নীতির কারণে এই বিপর্যয়। বিধ্বংসী বিপর্যয়ের কারণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি মানুষের তৈরি।''
ওই ঘটনার পর উত্তরাখণ্ড পুনর্নির্মাণে লেগে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। প্রাথমিকভাবে 100 দিন পর 5 অক্টোবর খুলে দেওয়া হয় কেদারনাথের রুট। আবারও শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের রমরমা। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে চলতে থাকে একের পর এক সরকারি প্রকল্পের কাজ। যার ফল আবারও প্রত্যক্ষ করল নিরপরাধ মানুষগুলো। পরিবেশবিদদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে কেদারনাথ, চামোলির পর আরও কোনও বিপর্যয় অপেক্ষা করে থাকবে উত্তরাখণ্ডের জন্য।