ETV Bharat / bharat

ড্রাগনের মোকাবিলায় প্রয়োজন শানিত পরিকল্পনা - ভারত-চিন সম্পর্ক

চিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, যে এলাকাকে ভারত এতদিন পর্যন্ত নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে এসেছে, সেই অঞ্চলে সেনা টহল বন্ধ রেখে সামরিক সুবিধা থেকে ভারতই বঞ্চিত হবে ।

sharpen-the-strategies-to-contain-the-dragon
sharpen-the-strategies-to-contain-the-dragon
author img

By

Published : Feb 14, 2021, 11:45 AM IST

বছর দশেক আগের কথা । ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করার সময় সেই সময়কার চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও বলেছিলেন, ‘‘গত দুই হাজার দুশো বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে শতকরা প্রায় 99.9 শতাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই থেকেছে ।’’ ওয়েন জিয়াবাও বাকি যে 0.9 শতাংশের অবন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন, তা হল 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের কথা । এই বেআইনি হামলার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে হওয়া পঞ্চশীল চুক্তি পুরোপুরি ভঙ্গ করেছিল ওয়েন জিয়াবাওয়ের দেশ ।

আবার উহান এবং মহাবলীপুরমে এই দুই দেশের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অমায়িক সম্পর্কের আবহেও দুই দেশের সীমান্ত বরাবর চিনের বিপুল সেনা সমাবেশ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যুদ্ধের ঘন মেঘের আস্তরণে ঢেকে দিয়েছে । অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হল এই যে, এর পরেও দুই দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে । কীভাবে সম্ভব হল এই সদর্থক প্রক্রিয়া? কীভাবে এড়ানো গেল হিংসা? এর জন্য গত বেশ কয়েক মাসের নিরলস পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দিতে হবে । বেজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিহত করতে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী । তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চিন কর্তৃক ছিনিয়ে নেওয়া ভারতীয় ভূখণ্ড পুনরায় দখল করতে সমর্থ হয় । ভারতীয় সেনা উঁচু পার্বত্য এলাকার দখল নিয়ে চিনা দখলদারি মুক্ত করতে সমর্থ হয় ।

সংসদকে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, চিন ও ভারত দুই দেশই নিজেদের সেনা সরাচ্ছে ধাপে ধাপে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে । কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেছেন যে, দুই দেশের এই সমঝোতার ফলে সীমান্তে মোটামুটি ভাবে মে মাসের আগের অবস্থা ফিরে আসবে । তিনি আরও দাবি করেন যে, এর ফলে ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চিনা হানাদারদের হাতে থাকবে না । প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন যে, প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্ত নিয়ে যত ক্ষণ না পর্যন্ত দুই দেশ নির্দিষ্ট সমঝোতায় পৌঁছবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দুই দেশই সেনা টহল বন্ধ রাখবে ।

যদিও চিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, যে এলাকাকে ভারত এতদিন পর্যন্ত নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে এসেছে, সেই অঞ্চলে সেনা টহল বন্ধ রেখে সামরিক সুবিধা থেকে ভারতই বঞ্চিত হবে । চিন এমন একটি দেশ যারা 18টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে রয়েছে । চিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা ৷ সে দেশের কোনও কথাকে পুরোপুরি বিশ্বাস না করার জন্য ভারতকে সাবধান করছেন । এই ধরনের সাবধানবাণীকে কখনওই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় ।

আরও খবর: কোনও ক্ষতি স্বীকার না করেই লাদাখে চিনের সঙ্গে সমস্যা মেটাল ভারত : রাজনাথ

2013 সালের মার্চ মাসে সদ্য ক্ষমতায় এসে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং একটি নতুন পঞ্চশীল চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন । সেই নতুন চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা বলেছিলেন তিনি । সেই চুক্তির প্রথম শর্তই ছিল দুই দেশের স্ট্র্যাটেজিক আলোচনা আরও বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । 1962 এবং 2020 এই দুই বছর চিনই প্রথম ভারতের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছিল । কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই ভারতের তরফ থেকে দুই দেশের মধ্যে বিরোধিতার ঘন কুয়াশা সরানোর দায়িত্ব নেওয়া হয় ।

1988 সালে ভারতের সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির চিন সফরের পর একটি যৌথ অ্যাকশন টিম তৈরি করা হয় । এই টিমের মূল কাজ ছিল দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকা দীর্ঘ দিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা । পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাওয়ের আমলে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় । তারও পরে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বেজপেয়ির আমলে একটি টিম গঠন করা হয় যার সদস্যরা সীমান্ত সম্পর্ককে মাথায় না রেখে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়ার কাজ করতেন ।

অথচ প্রতিবছর হওয়া সম্মেলনে নেওয়া বহু ‘উপদেশ’-এর পরেও কোনও দিনই অরুণাচল প্রদেশের উপর নিজেদের দাবি থেকে সরে আসেনি চিন । মায়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ এবং পাকিস্তানে নিজেদের নৌঘাঁটি তৈরি করে ইতিমধ্যেই ভারতের উপর চাপ বাড়িয়েছে চিন ।

ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিহত করতে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ চড়েছে চিনের । চিনকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের উচিত সঠিক বৈদেশিক পরিকল্পনার আশ্রয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । সামান্য হালকা মনোভাব কী করতে পারে, সে সম্পর্কে ভারত যথেষ্ট ওয়াকিবহাল । তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের উচিত ড্রাগনকে বশ করতে নিজেদের পরিকল্পনাকে আরও শানিত করা ।

বছর দশেক আগের কথা । ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করার সময় সেই সময়কার চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও বলেছিলেন, ‘‘গত দুই হাজার দুশো বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে শতকরা প্রায় 99.9 শতাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই থেকেছে ।’’ ওয়েন জিয়াবাও বাকি যে 0.9 শতাংশের অবন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন, তা হল 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের কথা । এই বেআইনি হামলার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে হওয়া পঞ্চশীল চুক্তি পুরোপুরি ভঙ্গ করেছিল ওয়েন জিয়াবাওয়ের দেশ ।

আবার উহান এবং মহাবলীপুরমে এই দুই দেশের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অমায়িক সম্পর্কের আবহেও দুই দেশের সীমান্ত বরাবর চিনের বিপুল সেনা সমাবেশ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যুদ্ধের ঘন মেঘের আস্তরণে ঢেকে দিয়েছে । অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হল এই যে, এর পরেও দুই দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে । কীভাবে সম্ভব হল এই সদর্থক প্রক্রিয়া? কীভাবে এড়ানো গেল হিংসা? এর জন্য গত বেশ কয়েক মাসের নিরলস পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দিতে হবে । বেজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিহত করতে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী । তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চিন কর্তৃক ছিনিয়ে নেওয়া ভারতীয় ভূখণ্ড পুনরায় দখল করতে সমর্থ হয় । ভারতীয় সেনা উঁচু পার্বত্য এলাকার দখল নিয়ে চিনা দখলদারি মুক্ত করতে সমর্থ হয় ।

সংসদকে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, চিন ও ভারত দুই দেশই নিজেদের সেনা সরাচ্ছে ধাপে ধাপে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে । কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেছেন যে, দুই দেশের এই সমঝোতার ফলে সীমান্তে মোটামুটি ভাবে মে মাসের আগের অবস্থা ফিরে আসবে । তিনি আরও দাবি করেন যে, এর ফলে ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চিনা হানাদারদের হাতে থাকবে না । প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন যে, প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্ত নিয়ে যত ক্ষণ না পর্যন্ত দুই দেশ নির্দিষ্ট সমঝোতায় পৌঁছবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দুই দেশই সেনা টহল বন্ধ রাখবে ।

যদিও চিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, যে এলাকাকে ভারত এতদিন পর্যন্ত নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে এসেছে, সেই অঞ্চলে সেনা টহল বন্ধ রেখে সামরিক সুবিধা থেকে ভারতই বঞ্চিত হবে । চিন এমন একটি দেশ যারা 18টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে রয়েছে । চিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা ৷ সে দেশের কোনও কথাকে পুরোপুরি বিশ্বাস না করার জন্য ভারতকে সাবধান করছেন । এই ধরনের সাবধানবাণীকে কখনওই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় ।

আরও খবর: কোনও ক্ষতি স্বীকার না করেই লাদাখে চিনের সঙ্গে সমস্যা মেটাল ভারত : রাজনাথ

2013 সালের মার্চ মাসে সদ্য ক্ষমতায় এসে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং একটি নতুন পঞ্চশীল চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন । সেই নতুন চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা বলেছিলেন তিনি । সেই চুক্তির প্রথম শর্তই ছিল দুই দেশের স্ট্র্যাটেজিক আলোচনা আরও বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । 1962 এবং 2020 এই দুই বছর চিনই প্রথম ভারতের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছিল । কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই ভারতের তরফ থেকে দুই দেশের মধ্যে বিরোধিতার ঘন কুয়াশা সরানোর দায়িত্ব নেওয়া হয় ।

1988 সালে ভারতের সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির চিন সফরের পর একটি যৌথ অ্যাকশন টিম তৈরি করা হয় । এই টিমের মূল কাজ ছিল দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকা দীর্ঘ দিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা । পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাওয়ের আমলে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় । তারও পরে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বেজপেয়ির আমলে একটি টিম গঠন করা হয় যার সদস্যরা সীমান্ত সম্পর্ককে মাথায় না রেখে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়ার কাজ করতেন ।

অথচ প্রতিবছর হওয়া সম্মেলনে নেওয়া বহু ‘উপদেশ’-এর পরেও কোনও দিনই অরুণাচল প্রদেশের উপর নিজেদের দাবি থেকে সরে আসেনি চিন । মায়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ এবং পাকিস্তানে নিজেদের নৌঘাঁটি তৈরি করে ইতিমধ্যেই ভারতের উপর চাপ বাড়িয়েছে চিন ।

ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিহত করতে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ চড়েছে চিনের । চিনকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের উচিত সঠিক বৈদেশিক পরিকল্পনার আশ্রয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । সামান্য হালকা মনোভাব কী করতে পারে, সে সম্পর্কে ভারত যথেষ্ট ওয়াকিবহাল । তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের উচিত ড্রাগনকে বশ করতে নিজেদের পরিকল্পনাকে আরও শানিত করা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.