নয়াদিল্লি, 3 জানুয়ারি: সরকারি অধিকর্তা, মন্ত্রী, সাংসদ এবং বিধায়কদের বাক স্বাধীনতার (freedom of speech) উপর কোনও অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না । মঙ্গলবার এমনই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ৷ এস আব্দুল নাজির, বিআর গাভাই, এএস বোপান্না, ভি রামাসুব্রমানিয়ান এবং বিভি নাগারথনার পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ (five judge Constitution bench of Justices) এই রায় দিয়েছে ৷
সংবিধানের 19(2) অনুচ্ছেদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের (freedom of speech and expression) অধীনে নির্ধারিত ছাড়া অন্য কোনও অতিরিক্ত বিধিনিষেধ একজন নাগরিকের উপর আরোপ করা যাবে না । শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতির জন্য সরকারকে দায়ী করা যায় না ৷ মন্ত্রী নিজেই তাঁর বিবৃতির জন্য দায়ী ।
বিচারপতি নাগারথনা (Justice Nagarathna) একটি পৃথক রায় লিখেছেন ৷ যেখানে তিনি কিছু বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, "আমাদের মতো একটি দেশে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অধিকার, যাতে নাগরিকরা শাসন সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত এবং শিক্ষিত হয় ৷ সরকারি অধিকর্তা এবং সেলিব্রিটিদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে ৷ বক্তৃতায় দেওয়ার সময় আরও সংযত হতে হবে, কারণ এটি ব্যাপকভাবে নাগরিকদের প্রভাবিত করে ৷"
তিনি আরও বলেছেন, "ঘৃণা ছড়ায় এমন বক্তৃতা এক অর্থে সমাজকে অসম করে মৌলিক মূল্যবোধের উপর আঘাত করে এবং বিভিন্ন পটভূমির নাগরিকদেরও আক্রমণ করে, বিশেষ করে আমাদের দেশে । ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা বজায় রাখা এবং মহিলাদের মর্যাদা বজায় রাখা প্রত্যেক ভারতীয়ের কর্তব্য ৷ 19(1)(a) এবং 19(2) এর কথা মাথায় রেখে সহ-নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা থেকে পাবলিক অধিকর্তাদের বিরত করার জন্য সংসদের তরফে একটি আইন প্রণয়ন করা বুদ্ধিমানের কাজ ।
বিচারপতি নাগারথনা বলেছেন, "রাজনৈতিক দলের পক্ষে আচরণবিধি তৈরি করে তাদের মন্ত্রীদের ঘৃণামূলক বক্তৃতা দেওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । যদি কোনও নাগরিকের এই জাতীয় বক্তৃতা বা সরকারি অধিকর্তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য বিদ্বেষপূর্ণ মনে হয়, তবে সেই নাগরিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন ৷"
আরও পড়ুন: প্রতারণার আড়ালে ধর্মান্তকরণ কখনই ধর্মীয় স্বাধীনতা হতে পারে না, জানাল কেন্দ্র
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির সিনিয়র নেতা আজম খান বুলন্দশহর গণধর্ষণ মামলাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং সমাজবাদী পার্টির বদনাম করার জন্য করা হয়েছে বলে কিছু বিবৃতি দেন ৷ তাঁর এই বিবৃতি দেওয়ার পরেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল । সেই মামলায় একজন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ এবং বিধায়কদের মতো উচ্চ সরকারি অধিকর্তাদের বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের সীমা সংক্রান্ত আবেদনে শীর্ষ আদালত এই রায় দিয়েছে । সংবিধানের অনুচ্ছেদ 19(2) এর অধীনে উল্লিখিতগুলির চেয়ে সরকারি অধিকর্তাদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের উপর আর কোন বৃহত্তর বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে কি না, তা নিয়েই শীর্ষ আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো । কোনও মন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ও নীতির বিপরীতে কথা বলার জন্য বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের অধীনে দাবি করতে পারেন কি না, তা এই মামলায় জড়িত ।