নয়াদিল্লি, 14 মার্চ: অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশনের বর্তমান উত্তরাধিকার কোম্পানি ডাও কেমিক্যালসের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণবাবদ আরও টাকা চেয়েছিল মোদি সরকার ৷ সেই অনুযায়ী তাদের সঙ্গে নতুন করে সমোঝোতায় আসতে চেয়েছিল কেন্দ্র ৷ মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের তরফে বিচারপতি এসকে কৌল ঘোষণা এই আবেদন খারিজ করে দেন ৷ 12 জানুয়ারি এই কিউরেটিভ পিটিশনের চূড়ান্ত রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত (SC dismisses Centre's plea for additional funds from UCC's successor firms) ৷
ভোপাল গ্যাস বিপর্যয় (1984 Bhopal gas tragedy)
1984 সালের 2-3 ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশনের কারখানা থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস (methyl isocyanate gas) 3 হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ৷ ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা 1 লক্ষেরও বেশি ৷ এই সংস্থার চেয়ারম্যান ওয়ারেন অ্যান্ডারসন (UCC Chairman Warren Anderson) ঘটনার পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ৷ এই দুর্ঘটনার পরে যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই কোনও না কোনও ভাবে শারীরিক ক্ষত বয়ে চলেছেন ৷ এমনকী তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে ৷ ভোপালের প্রাকৃতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে ৷ এখনও অনেকে তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা পায়নি বলে জানা গিয়েছে ৷
আদালতে সওয়াল-জবাব:
2010 সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে সর্বোচ্চ আদালতে কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করে ৷ এদিকে বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌলের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে ডাও কেমিক্যালস (Dow Chemicals) জানায়, 1989 সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ও কোম্পানির মধ্যে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বোঝাপড়া হয়েছিল ৷ সেই সময় ভারত সরকার একবারও এই প্রশ্ন তোলেনি যে, এই ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয় ৷ ইউসিসির পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে আদালতে জানান, 1995 থেকে 2011 সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে একাধিক হলফনামা জমা পড়েছে ৷ 1989 সালে কেন্দ্র-ইউসিসির মধ্যে হওয়া সমঝোতা যথোপযুক্ত নয়- এটি প্রমাণের চেষ্টার বিরোধিতা করে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এর অংশ হিসেবে, কেন্দ্র কিউরেটিভ পিটিশনে ডাও কেমিক্যালসের কাছ থেকে অতিরিক্ত 7 হাজার 844 কোটি টাকা দাবি তুলেছিল ৷
আরও পড়ুন: 38 বছর কাটল, আজও যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা
আদালতের রায় মামলাকারীর পক্ষে না-হলে মামলাকারী তা পর্যালোচনার আবেদন জানাতে পারেন ৷ কিন্তু সেই পর্যালোচনার আবেদনও যদি খারিজ হয়, তাহলে মামলাকারী পক্ষের শেষ আশ্রয় কিউরেটিভ পিটিশন ৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্র-ইউসিসির মধ্যে হওয়া সমঝোতা বাতিল করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও রিভিউ পিটিশন দাখিল করেনি ৷ বরং সরকার জোর দিচ্ছে, ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে মানুষ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, 1989 সালে সমঝোতার সময় তার ঠিকঠাক মূল্যায়ন করা হয়নি ৷ 10 জানুয়ারি আদালত কেন্দ্রকে জানায়, 30 বছরেরও বেশি সময় আগে হওয়া সমঝোতা নিয়ে নতুন করে কোনও বোঝাপড়া হওয়া সম্ভব নয় ৷ ডাও কেমিক্যালস ইতিমধ্যে 470 মিলিয়ন মার্কিন ডলার (47 কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৷
ভোপাল গ্যাস বিপর্যের পর এ নিয়ে হওয়া মামলায় হাজির ছিলেন না অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ওয়ারেন অ্যান্ডারসন ৷ 1992 সালের 1 ফেব্রুয়ারি তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে ভোপালেনর দায়রা আদালত ৷ 2014 সালের সেপ্টেম্বরে চেয়ারম্যান অ্যান্ডারসন মারা যান ৷ এর আগে 1992 সাল এবং 2009 সালে দু'দু-বার অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল কোর্ট ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধরাই থেকে গিয়েছেন অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ৷ 2010 সালের 7 জুন ভোপালের আদালত ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর (Union Carbide India Limited, UNCL) সাত জন আধিকারিককে মাত্র দু'বছরের সাজা দিয়েছিল ৷