ETV Bharat / bharat

Murmu and Malala: সাঁওতাল ও পাশতুন, 2 উপজাতির উজ্জ্বল অধ্যায়ের মুখ মুর্মু-মালালা

দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) ও মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai)৷ একে-অপরের থেকে যোজন দূরে থাকলেও এই দুই মহিলার মধ্যে একটি বিষয় এক (Santhal and Pashtun)৷ একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মুখ, এবং দ্বিতীয় জন অবিচ্ছিন্ন অধ্যবশায়ের দ্বারা অকল্পনীয় জিনিসের পিছু ধাওয়া করে তাকে অর্জন করার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ৷ লিখছেন ইটিভি ভারতের বিলাল ভাট ৷

Santhal and Pashtun: two tribes, one represented by Indian President and another by Pak Nobel laureate have divergent narratives
সাঁওতাল ও পাশতুন, 2 উপজাতির উজ্জ্বল অধ্যায়ের মুখ মুর্মু-মালালা
author img

By

Published : Jul 28, 2022, 4:06 PM IST

Updated : Jul 29, 2022, 10:29 AM IST

হায়দরাবাদ, 28 জুলাই: ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) ও নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai) এমন দুই মহিলা, যাঁরা নিজেদের অধ্যাবশায় ও যোগ্যতার বলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সর্বক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণের পরিচায়ক ৷ যে পরিস্থিতি ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাঁরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সেই পরিস্থিতিই অনেক ক্ষেত্রে সমাজের অপ্রীতিকর কিছু বিষয়কে নগ্নরূপে তুলে ধরে ৷ যদিও এটাই বিবর্তন ও উন্নয়নের নিদর্শনও ৷

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া রিজিয়নের পাশতুন কন্যা মালালা ইউসুফজাই ৷ ইসলামিক আইনের দোহাই দিয়ে পাশতুন প্রজাতির মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল জঙ্গিরা ৷ এই 'অপরাধে'ই জঙ্গিদের বুলেট নিশানা করে কিশোরী মালালাকে ৷ সেই ঘটনা এখন অতীত ৷ এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে ৷ তবে সেই ঘটনা দমিয়ে দিতে পারেনি মালালার পড়াশোনার ইচ্ছেকে ৷ প্রাণনাশের হুমকি সত্ত্বেও মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে তীব্র লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর একাগ্রতা ও সাহসিকতা তাঁকে এনে দিয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার ৷ পাকিস্তানের এফএটিএ (Federally Administered Tribal Areas) এলাকায় নারীদের উপর চরমপন্থী উপজাতিদের বর্বরতার স্মারক হিসাবে কাজ করেন মালালা ৷

অপরদিকে, আদিবাসী গ্রামের কন্যা মুর্মুর দেশের সর্বোচ্চ পদে উত্থান ভারতের উপজাতি বিবর্তনের জ্বলন্ত উদাহরণ ৷ তিনি সাঁওতাল উপজাতির সদস্য ৷ পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম ও ঝাড়খণ্ডের মতো দেশের কয়েকটি রাজ্যে এই উপজাতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷ ভারত এর আগেও মহিলা রাষ্ট্রপতি পেয়েছে ৷ তবে সদ্য রাষ্ট্রপতির পদে অভিষিক্ত দ্রৌপদী মুর্মু একজন সাঁওতাল হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রটা একেবারেই অনন্য ৷ স্কুলের শিক্ষিকার থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, মুর্মুর কেরিয়ারের এই সফর যে দেশের উপজাতি উন্নয়নের প্রতীক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷

যে দিন থেকে শাসক দল বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছে, সে দিন থেকেই গোটা দেশে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সাঁওতালদের নিয়ে ৷ মুর্মু যেন তাঁদের কাছে এক গৌরবের অধ্যায় ৷ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর শিকড়ের খোঁজ নিতে সাঁওতালদের প্রতি কৌতূহল বেড়েছে মানুষের ৷ দেশের মোট 8 শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বৃহত্তম হল সাঁওতালরা ৷ মুর্মুকে ঘিরেই মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ বেড়েছে তাঁদেরও জীবনযাপন ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ৷

সাহসিকতা ও সংগ্রামের বিচারে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়ার পাশতুনদের সঙ্গে তুলনা টানা হয় সাঁওতালদের ৷ আগের নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স যা এখন কেপিকে হিসেবে পরিচিত, সেখানে খান গফর খানের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম দিয়েছে পাশতুনরা ৷ একই রকম ভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন সাঁওতাল বিপ্লবীরাও ৷ অন্যতম সাঁওতাল স্বাধীনতা সংগ্রামী থালাকাল চান্দু কেরালায় তীব্র সংগ্রাম চালিয়ে ব্রিটিশ দুর্গ দখল করেছিলেন ৷ যদিও পরে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয় ৷

আরও পড়ুন: অধীরের 'রাষ্ট্রপত্নী' মন্তব্যের কড়া সমালোচনায় স্মৃতি

অপর এক প্রখ্যাত সাঁওতাল স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেন বিরসা মুণ্ডা ৷ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি ৷ তাঁর দৌলতেই সমাজে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবন ধারণের অধিকার লাভ করেন সাঁওতালরা ৷

পাশতুনরাও খান গফর খানের মতো বিপ্লবীদের জন্ম দিয়েছে ৷ এই উপজাতিরই অবদান মালালা ইউসুফজাই ৷ নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গান্ধি ও নেহরুকে স্মরণ করিয়ে দেন গফর খান ৷ একইরকম ভাবে মালালা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মহিলাদের উপর অত্যাচার ও মহিলাদের শিক্ষার অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার কাহিনি ৷

মালালা এবং মুর্মু দুটি উপজাতির ভিন্ন ভিন্ন আখ্যানের প্রতিনিধি । পুরুষতান্ত্রিক উপজাতি সমাজে নৃশংসতার চরিত্র তুলে ধরেছেন মালালা ৷ যে সমাজ কোনও গঠনমূলক পরিবর্তনের বিরোধী ৷ অন্যদিকে মুর্মু দেশ গঠনে উন্মুক্ত মানসিকতার প্রতিভূ ৷

পাশতুন এবং সাঁওতাল উভয়ের ব্যুৎপত্তি অনুসারে, পূর্ববর্তীরা সর্বদাই একটি মুক্ত, স্বায়ত্তশাসিত এবং স্বাধীন সত্ত্বা যেখানে সহজে সম্পদের প্রবেশাধিকার ছিল ৷ তবে পরবর্তীদের সম্পদের সহজলভ্যতা ছিল না এবং তাঁরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন । অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সাঁওতালরা আগে ক্ষমতার অলিন্দে কম প্রতিনিধিত্ব করতেন, তবে বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁরা স্বীকৃতি পেয়েছেন ও খ্যাতি অর্জন করেছেন ৷ অপরদিকে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী পাশতুন সম্প্রদায় তাদের শক্তি ও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি এবং যত দিন গিয়েছে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷

পাশতুনরা আলোচনার কৌশলে হিংসার আশ্রয় নেয় বলে তাঁদের সেই অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে ৷ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জারব-ই-আজব এবং রাদ্দুল ফাসাদের মতো অভিযান পরিচালনা করায় বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয় । আশির দশকে পাকিস্তান রুশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগানদের সঙ্গ দেয় ৷ তারা ভারত ও অন্যান্য প্রতিপক্ষ দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেনাবাহিনীতে পাশতুনদের নিয়োগ করে ৷ পাশতুনরা নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অস্ত্রের সাহায্য নিলেও সাঁওতালরা তাঁদের সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে ভরসা রাখত তীর-ধনুকের উপরই ৷ এ ছাড়াও খেলাধূলা, শিল্পকর্ম, কবিতা, সাহিত্য ও রাজনীতির আঙিনাতেও নিজেদের কৃতিত্বের পরিচয় রাখে সাঁওতালরা ৷ সফল উপজাতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, ক্রীড়াবিদ পূর্ণিমা হেমব্রম ও চলচ্চিত্রকার দিব্যা হাঁসদা ৷ প্রথম সাঁওতাল হিসেবে এভারেস্ট জয় করে পরিচিত হয়েছেন বিনিতা সোরেন ৷

সর্বোপরি, সংবিধানের ধারক হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন দ্রৌপদী মুর্মু ৷ দেশের সমস্ত সশস্ত্র শক্তি-সহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি ৷ তাঁর মাধ্যমেই নিজেদের যাবতীয় দাবিদাওয়া পূরণের স্বপ্ন দেখছেন মুর্মুর উপজাতি-বন্ধুরা ৷

হায়দরাবাদ, 28 জুলাই: ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) ও নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai) এমন দুই মহিলা, যাঁরা নিজেদের অধ্যাবশায় ও যোগ্যতার বলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সর্বক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণের পরিচায়ক ৷ যে পরিস্থিতি ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাঁরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সেই পরিস্থিতিই অনেক ক্ষেত্রে সমাজের অপ্রীতিকর কিছু বিষয়কে নগ্নরূপে তুলে ধরে ৷ যদিও এটাই বিবর্তন ও উন্নয়নের নিদর্শনও ৷

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া রিজিয়নের পাশতুন কন্যা মালালা ইউসুফজাই ৷ ইসলামিক আইনের দোহাই দিয়ে পাশতুন প্রজাতির মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল জঙ্গিরা ৷ এই 'অপরাধে'ই জঙ্গিদের বুলেট নিশানা করে কিশোরী মালালাকে ৷ সেই ঘটনা এখন অতীত ৷ এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে ৷ তবে সেই ঘটনা দমিয়ে দিতে পারেনি মালালার পড়াশোনার ইচ্ছেকে ৷ প্রাণনাশের হুমকি সত্ত্বেও মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে তীব্র লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর একাগ্রতা ও সাহসিকতা তাঁকে এনে দিয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার ৷ পাকিস্তানের এফএটিএ (Federally Administered Tribal Areas) এলাকায় নারীদের উপর চরমপন্থী উপজাতিদের বর্বরতার স্মারক হিসাবে কাজ করেন মালালা ৷

অপরদিকে, আদিবাসী গ্রামের কন্যা মুর্মুর দেশের সর্বোচ্চ পদে উত্থান ভারতের উপজাতি বিবর্তনের জ্বলন্ত উদাহরণ ৷ তিনি সাঁওতাল উপজাতির সদস্য ৷ পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম ও ঝাড়খণ্ডের মতো দেশের কয়েকটি রাজ্যে এই উপজাতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷ ভারত এর আগেও মহিলা রাষ্ট্রপতি পেয়েছে ৷ তবে সদ্য রাষ্ট্রপতির পদে অভিষিক্ত দ্রৌপদী মুর্মু একজন সাঁওতাল হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রটা একেবারেই অনন্য ৷ স্কুলের শিক্ষিকার থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, মুর্মুর কেরিয়ারের এই সফর যে দেশের উপজাতি উন্নয়নের প্রতীক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷

যে দিন থেকে শাসক দল বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছে, সে দিন থেকেই গোটা দেশে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সাঁওতালদের নিয়ে ৷ মুর্মু যেন তাঁদের কাছে এক গৌরবের অধ্যায় ৷ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর শিকড়ের খোঁজ নিতে সাঁওতালদের প্রতি কৌতূহল বেড়েছে মানুষের ৷ দেশের মোট 8 শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বৃহত্তম হল সাঁওতালরা ৷ মুর্মুকে ঘিরেই মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ বেড়েছে তাঁদেরও জীবনযাপন ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ৷

সাহসিকতা ও সংগ্রামের বিচারে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়ার পাশতুনদের সঙ্গে তুলনা টানা হয় সাঁওতালদের ৷ আগের নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স যা এখন কেপিকে হিসেবে পরিচিত, সেখানে খান গফর খানের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম দিয়েছে পাশতুনরা ৷ একই রকম ভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন সাঁওতাল বিপ্লবীরাও ৷ অন্যতম সাঁওতাল স্বাধীনতা সংগ্রামী থালাকাল চান্দু কেরালায় তীব্র সংগ্রাম চালিয়ে ব্রিটিশ দুর্গ দখল করেছিলেন ৷ যদিও পরে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয় ৷

আরও পড়ুন: অধীরের 'রাষ্ট্রপত্নী' মন্তব্যের কড়া সমালোচনায় স্মৃতি

অপর এক প্রখ্যাত সাঁওতাল স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেন বিরসা মুণ্ডা ৷ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি ৷ তাঁর দৌলতেই সমাজে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবন ধারণের অধিকার লাভ করেন সাঁওতালরা ৷

পাশতুনরাও খান গফর খানের মতো বিপ্লবীদের জন্ম দিয়েছে ৷ এই উপজাতিরই অবদান মালালা ইউসুফজাই ৷ নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গান্ধি ও নেহরুকে স্মরণ করিয়ে দেন গফর খান ৷ একইরকম ভাবে মালালা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মহিলাদের উপর অত্যাচার ও মহিলাদের শিক্ষার অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার কাহিনি ৷

মালালা এবং মুর্মু দুটি উপজাতির ভিন্ন ভিন্ন আখ্যানের প্রতিনিধি । পুরুষতান্ত্রিক উপজাতি সমাজে নৃশংসতার চরিত্র তুলে ধরেছেন মালালা ৷ যে সমাজ কোনও গঠনমূলক পরিবর্তনের বিরোধী ৷ অন্যদিকে মুর্মু দেশ গঠনে উন্মুক্ত মানসিকতার প্রতিভূ ৷

পাশতুন এবং সাঁওতাল উভয়ের ব্যুৎপত্তি অনুসারে, পূর্ববর্তীরা সর্বদাই একটি মুক্ত, স্বায়ত্তশাসিত এবং স্বাধীন সত্ত্বা যেখানে সহজে সম্পদের প্রবেশাধিকার ছিল ৷ তবে পরবর্তীদের সম্পদের সহজলভ্যতা ছিল না এবং তাঁরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন । অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সাঁওতালরা আগে ক্ষমতার অলিন্দে কম প্রতিনিধিত্ব করতেন, তবে বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁরা স্বীকৃতি পেয়েছেন ও খ্যাতি অর্জন করেছেন ৷ অপরদিকে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী পাশতুন সম্প্রদায় তাদের শক্তি ও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি এবং যত দিন গিয়েছে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷

পাশতুনরা আলোচনার কৌশলে হিংসার আশ্রয় নেয় বলে তাঁদের সেই অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে ৷ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জারব-ই-আজব এবং রাদ্দুল ফাসাদের মতো অভিযান পরিচালনা করায় বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয় । আশির দশকে পাকিস্তান রুশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগানদের সঙ্গ দেয় ৷ তারা ভারত ও অন্যান্য প্রতিপক্ষ দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেনাবাহিনীতে পাশতুনদের নিয়োগ করে ৷ পাশতুনরা নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অস্ত্রের সাহায্য নিলেও সাঁওতালরা তাঁদের সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে ভরসা রাখত তীর-ধনুকের উপরই ৷ এ ছাড়াও খেলাধূলা, শিল্পকর্ম, কবিতা, সাহিত্য ও রাজনীতির আঙিনাতেও নিজেদের কৃতিত্বের পরিচয় রাখে সাঁওতালরা ৷ সফল উপজাতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, ক্রীড়াবিদ পূর্ণিমা হেমব্রম ও চলচ্চিত্রকার দিব্যা হাঁসদা ৷ প্রথম সাঁওতাল হিসেবে এভারেস্ট জয় করে পরিচিত হয়েছেন বিনিতা সোরেন ৷

সর্বোপরি, সংবিধানের ধারক হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন দ্রৌপদী মুর্মু ৷ দেশের সমস্ত সশস্ত্র শক্তি-সহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি ৷ তাঁর মাধ্যমেই নিজেদের যাবতীয় দাবিদাওয়া পূরণের স্বপ্ন দেখছেন মুর্মুর উপজাতি-বন্ধুরা ৷

Last Updated : Jul 29, 2022, 10:29 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.