চন্ডীগড়, 29 মার্চ: ছোট্ট পোস্তর কাস্টডি নিয়ে ঠাকুরদা দীনেন লাহিড়ী ও বাবা অর্ণব লাহিড়ীর মধ্যে হওয়া আইনি লড়াইয়ের গল্প মনে আছে ? পোস্ত সিনেমার সেই চিত্রনাট্যরই বাস্তব সংস্করণের সাক্ষী রইল দেশ । পঞ্জাবে 9 বছরের মেয়ের অধিকার নিয়ে আইনি টানাপোড়েন চলল মা ও দিদার মধ্যে । আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতলেন দিদা'ই । ওই রায়ে পঞ্জাব ও হরিয়ানা আদালত জানিয়ে দিল, গর্ভদাত্রী মা নয়, দিদার কাছেই থাকবে মেয়েটি (Unique Case in Punjab) ।
আইন কী বলছে ?
শুরু থেকেই আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন দিদা । আইন বলছে, কোনও শিশু বা ছোট বাচ্চার অধিকার শুধুমাত্র বাবা-মায়ের নয় । এক্ষেত্রে শিশুটির কল্যাণই একমাত্র বিচার্য বিষয় । সেক্ষেত্রে আদালত যদি মনে করে, তৃতীয় কোনও ব্যক্তির হেফাজতে থাকলে বাচ্চাটির কল্যাণ হবে, তাহলে আদালত তাঁর উপরেই সেই দায়িত্ব বর্তাতে পারে (Case between Mother and Grandmother over the custody of a Nine year old Girl) ।
ঘটনাটি ঠিক কী ?
আইনি প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল অদ্ভুদভাবে । নাবালিকার দিদা আদালতে দাবি করেছিলেন, তাঁর মেয়ে সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারছেন না । একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত । দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে বাচ্চার টিউশন ফি-সহ যাবতীয় খরচ মেটাতেও তারা আর্থিকভাবে অক্ষম । নাবালিকাটির সৎ বাবা শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করে ।
দিদার দাবি, নাবালিকা তার মাকে বিষয়টি জানালে স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে উপদেশ দেয় । তিনি আদালতকে জানিয়েছিলেন যে তিনি নাবালিকার সৎ বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে গিয়েছিলেন । যার ফলে তার বিরুদ্ধে 376 আইপিসি এবং যৌন অপরাধ, শিশুদের সুরক্ষা আইন, 2012 এর ধারা 6-এর অধীনে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: স্বামীর অফিসে গিয়ে স্ত্রীর অভব্য আচরণ নিষ্ঠুরতার সমান, রায় আদালতের
অন্যদিকে, নাবালিকার মায়ের দাবি, তার মা অর্থাৎ নাবালিকার দিদা মেয়েকে ভাল স্কুলে পড়াশুনা এবং যত্ন দেওয়ার অজুহাতে তাকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে । নাবালিকার স্বাভাবিক অভিভাবক হিসাবে, তার হেফাজত পাওয়া তার অধিকার । মায়ের বিরুদ্ধে নাবালিকার মগজ ধোলাই করার অভিযোগও করেন তিনি ।
আদালতে হেবিয়াস কর্পাসে মামলা দায়ের হয় । পঞ্জাব ও হরিয়ানা আদালত মামলা শুনতে বেঞ্চ গঠন করে । 9 বছরের ওই নাবালিকার দায়িত্ব কে পাবেন, তাই নিয়ে মামলা । বাদী এবং বিবাদী, দুই পক্ষই নাবালিকার অধিকার পেতে সচেষ্ট ছিলেন । দীর্ঘ শুনানির পর শেষ পর্যন্ত বিচারপতি কাছে গোপনে ওই নাবালিকা জানিয়ে আসে, মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না । তারপরেই রায় ঘোষণা করে বিচারপতি মঞ্জরি নেহেরু কৌল জানিয়ে দেন, মা কেবলমাত্র তাঁর আইনি অধিকারের ভিত্তিতে সন্তানের হেফাজত চাইতে পারেন না । নাবালক সন্তানের হেফাজতের বিষয়ে সর্বোত্তম বিবেচনা শিশুর কল্যাণ হওয়া উচিত ।