পানাজি, 28 অক্টোবর : হবে হবে করেও এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসে যোগ দেওয়া হয়নি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের । যত সময় যাচ্ছে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে । তাতে ফের একটি পেরেক পুঁতে দিলেন প্রশান্ত নিজেই । জানিয়ে দিলেন, আগামী কয়েক দশক বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না । সমস্যা হল, রাহুল গান্ধি এটা কিছুতেই তা বুঝে উঠতে পারছেন না । বাংলা-সহ একাধিক রাজ্যে গেরুয়া ঝড় আটকানো প্রশান্তর মন্তব্যে স্বভাবতই চাঙ্গা বোধ করছে বিজেপি ।
এই মুহূর্তে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বৈতরণী পার করে দেওয়ার দায়িত্ব প্রশান্তের কাঁধে । বুধবার সেখানে একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্নত্তোর পর্বে যোগ দিয়েছিলেন তিনি, যার একটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে । তাতে 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে কোণঠাসা করার যে পরিকল্পনা বিরোধী শিবির করছে, তা নিয়ে প্রশান্তর মতামত চাওয়া হয় । জবাবে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-র মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেস, বিশেষত রাহুলকে কার্যত আয়না দেখান প্রশান্ত ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee : যে কেউ আসতে পারেন, কোনও প্রভাব পড়বে না; মমতাকে চ্যালেঞ্জ গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রশান্ত বলেন, ‘‘ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে বিজেপি ৷ হারুক অথবা জিতুক, স্বাধীনতার পর প্রথম 40 বছর কংগ্রেস যেমন অপ্রতিরোধ্য ছিল, তেমনই জায়গায় পৌঁছতে চলেছে বিজেপি ৷ বিজেপি কোত্থাও যাচ্ছে না ৷ দেশের 30 শতাংশের বেশি ভোট যেখানে পকেটে, এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই ৷ তাই মানুষ ক্ষুব্ধ, মোদী ক্ষমতাচ্যুত হতে চলেছেন, এমন ধারণার ফাঁদে পা না দেওয়াই উচিত ৷ হতে পারে মোদীকে মানুষ ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলেন, কিন্তু বিজেপি কোত্থাও যাচ্ছে না ৷ বরং এ ভাবেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং আগামী কয়েক দশক লড়াই চালিয়ে যাবে ৷ খুব শীঘ্র বিজেপি-র চলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ৷’’
2024-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে কোণঠাসা করতে বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই ৷ তাতে কংগ্রেস চালকের আসন ধরে রাখতে চাইলেও, গত কয়েক বছরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাদের ফলাফল তাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ৷ বরং সাম্প্রতিক কালে বিজেপি-কে মাত দেওয়া তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন এবং আরজেডি-র তেজস্বী অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে । যদিও তাতেও হাল ছাড়ছে না কংগ্রেস । বরং আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে নেহরু-গান্ধি পরিবারের উত্তরসূরি প্রিয়াঙ্কা এবং রাহুলের নেতৃত্বেই ফের চালকের আসনে প্রত্যাবর্তন করতে চাইছে তারা ।
-
Eventually, Prashant Kishor acknowledged that BJP will continue to be a force to reckon with in Indian politics for decades to come.
— Ajay Sehrawat (@IamAjaySehrawat) October 28, 2021 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
That's what @amitshai Ji declared way too earlier. pic.twitter.com/wqrqC3xzaZ
">Eventually, Prashant Kishor acknowledged that BJP will continue to be a force to reckon with in Indian politics for decades to come.
— Ajay Sehrawat (@IamAjaySehrawat) October 28, 2021
That's what @amitshai Ji declared way too earlier. pic.twitter.com/wqrqC3xzaZEventually, Prashant Kishor acknowledged that BJP will continue to be a force to reckon with in Indian politics for decades to come.
— Ajay Sehrawat (@IamAjaySehrawat) October 28, 2021
That's what @amitshai Ji declared way too earlier. pic.twitter.com/wqrqC3xzaZ
আরও পড়ুন: Narendra Modi : জি-20 সম্মেলনের আগেই পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করতে পারেন মোদি
কিন্তু রাহুলের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এবং রাজনীতির প্রতি তাঁর মনোযোগ নিয়ে ধন্দ নতুন কিছু নয় । প্রশান্ত নিজেও এ নিয়ে আগে সরব হয়েছেন । বুধবার ফের গোয়ায় সে কথাই শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে । প্রশান্ত বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধির সমস্যা এখানেই ৷ উনি ভাবছেন, মোদির ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সময়ের অপেক্ষামাত্র ৷ মানুষই ওঁকে ছুড়ে ফেলে দেবেন ৷ তা কিন্তু হচ্ছে না ৷ মোদির ক্ষমতা বুঝতে না পারলে, পরখ করে না দেখলে এবং তার সত্যতা স্বীকার না করলে, ওঁর বিরুদ্ধে প্রতিরোধই গড়ে তোলা সম্ভব নয় । ’’
প্রশান্তর এই মন্তব্য সামনে আসতেই গেরুয়া শিবিরে কার্যত স্বস্তির হাওয়া বইছে । অর্থনৈতিক সঙ্কট, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অতিমারি সামাল দেওয়া, কৃষক আন্দোলন ঠেকানো লাগাতার সমালোচনার মুখে প্রশান্তর মন্তব্য একপ্রকার তাদের মনোবলই জোগাচ্ছে । তাই দলের সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চার মিডিয়া প্রধান তথা দিল্লি বিজেপি-র মুখপাত্র অজয় শেরাওয়াত-সহ একাধিক বিজেপি নেতা প্রশান্তর ওই ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে তুলে ধরেছেন । টুইটারে অজয়ের বক্তব্য, ‘শেষমেশ প্রশান্ত কিশোরও স্বীকার করলেন যে, আগামী কয়েক দশক ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-র সমকক্ষ কেউ হতে পারবে না ৷ যদিও অমিত শাহজি অনেক আগেই তা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ৷’
আরও পড়ুন: Yogi Adityanath: পাকিস্তানের জয়ে উচ্ছ্বসিত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হবে, জানালেন যোগী
প্রশান্তর এই মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ৷ তবে মোদি-শাহ জুটিকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান বিরোধী শিবিরের অধিকাংশই ৷ বিধানসভা নির্বাচন মিটতেই জোটের বার্তা নিয়ে দিল্লি ছুটে গিয়েছিলেন মমতা ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত নিজেও ৷ সেখানে সোনিয়া গান্ধি এবং রাহুলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয় তাঁদের ৷ সেই সময় মমতা সাফ জানিয়েছিলেন, তিনি ‘স্ট্রিট ফাইটার’ ৷ লোকসভায় সে ভাবেই মোদি-শাহর বিরুদ্ধে লড়তে চান ৷ কিন্তু তৃণমূলের তরফে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে যতটা, তৎপরতা ছিল, ততটা গরজ দেখা যায়নি কংগ্রেসের তরফে ৷ আঞ্চলিক দলগুলিকে একছাতার তলায় নিয়ে আসায় জোর দেওয়ার বদলে, জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা ধরে রাখতেই বেশি আগ্রহী দেখায় তাদের ৷
তার পর থেকে যত সময় এগিয়েছে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গা ছাড়া মনোভাবের অভিযোগই তুলেছে তৃণমূল ৷ লখিমপুর খেরি কাণ্ডে প্রিয়ঙ্কা-রাহুল যখন উত্তরুপ্রদেশে ঢুকতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেই সময় হাঙ্গামা করার বদলে নজরদারি এড়িয়ে পীড়তদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ কংগ্রেসের উপর ভরসা করে না থেকে অসম, গোয়ায় বিজেপি-র বিরুদ্ধে নিজেদের শিকড় মজবুত করায় বেশি জোর দিচ্ছে তৃণমূল ৷ আর এই কাজে ছায়াসঙ্গীর মতো তাদের পাশে রয়েছেন প্রশান্ত ৷ তিনি নিজেও বরাবর কংগ্রেস এবং রাহুলের সমালোচনা করে আসছেন ৷ চাইলে 2017-তেই যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করে বিজেপি-কে কড়া টক্কর দেওয়া যেত, কিন্তু রাহুলের আপত্তিতেই তা হয়নি বলেও সম্প্রতি মন্তব্য করেন তিনি ৷ বুধবার গোয়াতেও একই কথা শোনা গেল তাঁর গলায় ৷