মালে, 9 জানুয়ারি: সাধারণ থেকে সেলেব্রিটি, একান্তে ছুটি কাটানোর অন্যতম ডেস্টিনেশন হিসাবে পছন্দের প্রথম সারিতে বরাবরই উঠে আসত মলদ্বীপের নাম ৷ সেই দেশের পর্যটন শিল্প এই সকল পর্যটকদের উপরেই নির্ভরশীল ৷ তবে বর্তমানে চলতে থাকা মলদ্বীপ-ভারতের বিবাদের জেরে বিপাকে পড়েছে সেই পর্যটন শিল্প ৷ যা নিয়ে সরব হয়েছে মলদ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুরিজম ইন্ডাষ্ট্রি ৷ ভারতের সঙ্গে এই বিবাদে আসলে যে মলদ্বীপ দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে তা একবাক্যে স্বীকার করা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে ৷
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুদেশের মধ্যে একটি। ভারত সর্বদাই আমাদের বিভিন্ন সংকটের সময় পাশে থেকেছে ৷ সরকার এবং ভারতের জনগণ আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যে সম্পর্ক বজায় রেখেছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। মলদ্বীপের পর্যটন শিল্পে প্রতিনিয়ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারত ভূমিকা রেখেছে ৷ বিশেষ করে অতিমারির সময়ে পর্যটন শিল্পে ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য ৷ তারপর থেকে মলদ্বীপের পর্যটন মানচিত্রে ভারতের গুরুত্ব এককথায় অনবদ্য ৷"
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, "এটা আমাদের কর্তব্য দুই দেশের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আগামিদিনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ৷ কোনও রকম নেতিবাচলক কথা বলা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত যা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে ৷ মলদ্বীপের উপমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য এবং সরকারী কর্মকর্তারা যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরকে অসম্মানজনক এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা করা হচ্ছে ৷ এর ফলে মলদ্বীপ পর্যটনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ৷"
2 জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয়শাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে যান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একাধিক ছবি শেয়ার করেন সোশাল মিডিয়ায় ৷ মোদি সোশাল মিডিয়ায় এই সফর ঘিরে লেখেন, "সাদা সমুদ্র সৈকত, আদিম নীল আকাশ ও নীল সমুদ্র, প্রকৃতির অপরূপ রূপ যাঁরা দেখতে চান, যাঁরা রোমাঞ্চপ্রিয়, তাঁদের অবশ্যই লাক্ষাদ্বীপে আসা উচিত৷"
প্রধানমন্ত্রী মোদির পোস্টের পরেই মলদ্বীপের যুব ক্ষমতায়ন ও চারুকলার রাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়াম শিয়ুনা এক্স হ্যান্ডেলে উপহাস করেন ও অসম্মানজনক মন্তব্য করেন ৷ তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "ভারতীয় তথা ক্রিকেটার এমনকী তারকারাও স্থানীয় সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে প্রচার করুন ৷ এমনকী তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে লাক্ষাদ্বীপের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত প্রচার করবেন ৷" বর্তমানে যদিও এই পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে ৷ ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করে এক্স হ্যান্ডেলে মলদ্বীপের ক্ষমতাসীন প্রগ্রেসিভ পার্টির কাউন্সিলর সদস্য দাবিদ রামিজ লেখেন, "মোদির এই পদক্ষেপ দুদার্ন্ত ৷ তবে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ধারণাটি বিভ্রান্তিকর ৷ তারা কীভাবে আমাদের দেওয়া পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে?"
যদিও মলদ্বীপ মন্ত্রিসভার বেশ কিছু সদস্যের বিরূপ মন্তব্যকে সমর্থন করেনি সেদেশের সরকার ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির বলেছেন যে কোনও রাষ্ট্রের নেতা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য 'গ্রহণযোগ্য নয় ৷ এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মলদ্বীপ সরকারের অবস্থান প্রতিফলিত করে না ৷ এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, "কোনও বিদেশী নেতার বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না ৷ এই ঘটনায় মলদ্বীপ সরকারের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক তাতে প্রভাব পড়া উচিত নয় ৷ আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের সমস্ত অংশীদারদের, বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক আলোচনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
ইতিমধ্যেই সোমবার মলদ্বীপে ভারতীয় দূত মুনু মহাওয়ার, মালেতে মলদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অ্যাম্বাসডর আলি নাসির মহম্মদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন ৷ ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়, "বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারত-মলদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে ৷"
অন্যদিকে রবিবার মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মহম্মদ সলিহ সোশাল মিডিয়ায় বলেন, " নয়াদিল্লি সবসময় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির ভালো বন্ধু ৷ ভারতের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিরূপ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি ৷ মলদ্বীপের কাছে ভারত খুব ভালো বন্ধু ৷ আমরা কখনই চাইব না, এই ধরনের মন্তব্য দুদেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলুক ৷"
আরও পড়ুন:
1. মোদির অপমান বরদাস্ত নয়! মলদ্বীপ যাওয়ার বিমানের সমস্ত টিকিট বাতিল করল জনপ্রিয় ভ্রমণ সংস্থা
2. 'ঘুরে দেখো নিজের দেশ', মোদির পর লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে নেট পাড়ায় সরব তারকারা
3. মলদ্বীপ বিতর্কের মাঝে ভারতীয় দ্বীপগুলি নিয়ে ব্যাট ধরলেন সচিন