কানপুর, 30 এপ্রিল : যে কোনও সময় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারত শত্রু বুলেট । কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলাগুলির সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন । জীবন বাজি রেখে দেশের সীমান্ত রক্ষায় নেমে এতটা অসহায় লাগেনি । যতটা অসহায়বোধ করলেন করোনা যুদ্ধে নেমে । করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সন্তান হারালেন কার্গিল যুদ্ধের নায়ক হরিরাম দুবে । 31 বছরের তরতাজা ছেলেকে হারিয়ে তাঁর আক্ষেপ, "আমি দেশের সেবা করলাম । কিন্তু দেশের সিস্টেম আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারল না ।"
সুবেদার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হরিরাম দুবে । কার্গিল যুদ্ধের নায়ক । উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বাড়ির ড্রয়িংরুমে জ্বলজ্বল করছে সেনাপ্রধানের দ্বারা সম্মানিত শংসাপত্র । সেই মানুষটির 31 বছরের ছেলে অমিতাভ করোনায় আক্রান্ত হন কিছুদিন আগে । কিন্তু বাঁচাতে পারেননি । মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর । ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হরিরাম বাবু সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে । কিন্তু যা ব্যবহার পেলেন তাতে বুকফাটা কষ্টের মাঝেও উঠে এল ক্ষোভ । ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্ত্রী ও পূত্রবধূকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী । কিন্তু চড়া রোদে পরিবার সহ দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে । কারও সাহায্য পাননি ।
আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কার হিন্দু মহিলার সৎকার করলেন ভারতের দুই মুসলিম যুবক
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হরিরাম দুবে বলেন, "1981 সাল থেকে 2011 পর্যন্ত মাতৃভূমির জন্য সেবা করেছি । কার্গিল থেকে বারামুল্লা, লাদাখ থেকে লুকুং । কার্গিল যুদ্ধের সময় বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি । কিন্তু এই দেশের ব্যবস্থাপনা আমার ছেলে অমিতাভের জীবন বাঁচাতে পারল না ।" তাঁর আক্ষেপ, "কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য লড়াই করেছি । জীবন বাজি রেখে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়েছি । আমার কাজের জন্য সেনাপ্রধান শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন । কিন্তু দেশের দুর্বল ব্যবস্থাপনা আমার ছেলেকে সাহায্য করতে পারল না । আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে । একে তো ছেলেকে খুইয়েছি । তারপর এমন ব্যবহার, চূড়ান্ত হয়রানি ।" দুঃখের সঙ্গে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন দেশের অবসরপ্রাপ্ত এই সেনাকর্মী ।