নয়াদিল্লি ও আমেদাবাদ 16 মে : বাড়ছে মৃত্যু মিছিল ৷ শ্মশানে জায়গা কুলানোটাই এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গণচিতা জ্বলছে চারিদিকে ৷ জায়গা না পেয়ে গঙ্গার ধারে দেহ পুঁতে দিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে পরিস্থিতি ৷ কিছুদিন আগে অভিযোগ উঠেছিল, উত্তরপ্রদেশ সরকার করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করার চেষ্টা করছে ৷ আবারও সেই একই অভিযোগ উঠছে গুজরাত সরকারের বিরুদ্ধে ৷
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা পি চিদম্বরম গতকাল সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন গুজরাতে এই বছর যা মৃত্যু হয়েছে তা গতবছরের তুলনায় দ্বিগুণ ৷ এক বছরের মধ্যে মৃত্যু সংখ্যায় এতটা ফারাক কোনওভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মানতে নারাজ কংগ্রেস ৷
গুজরাতের এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে চিদম্বরম দেখান, চলতি বছরে 1 মার্চ থেকে 10 মে-র মধ্যে 1 লাখ 23 হাজার জনের মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে তাদের পরিবারকে৷ গতবছর এই একই সময়ের ব্যবধানে মৃত্যু শংসাপত্রের সংখ্যাটি ছিল 58 হাজার ৷ গুজরাতের 33 টি জেলা মিলিয়ে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছিল ওই সংবাদমাধ্যমে ৷
কিন্তু 1 মার্চ থেকে 10 মে পর্যন্ত সরকারি খাতায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে 4 হাজার 218 জনের ৷
হিসেব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে এই সময়ের মধ্যে মৃত্যু শংসাপত্র ইস্যু হওয়া বেড়েছে 65 হাজার 805 টি ৷ যার মধ্যে সরকারি হিসেবে করোনায় মৃত্যু মাত্র 4 হাজার 218 ৷ বাকি এত বিশাল সংখ্যায় মৃত্যু কি শুধুই স্বাভাবিক মৃত্যু ? আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন চিদম্বরম ৷ এক বছরের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে এতটা মৃত্যু বৃদ্ধি মানতে নারাজ কংগ্রেস ৷
সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরম সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন, "আমাদের খুব সন্দেহ রয়েছে যে বর্ধিত মৃত্যুর সিংহভাগই কোভিডের কারণে ৷ গুজরাত সরকার কোভিডে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাকে লুকোচ্ছে ।"
যখন গঙ্গায় একের পর এক লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসছে ৷ যখন প্রায় হাজার দুয়ের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ গঙ্গার ধারে বালি চাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ তখন এই ধরনের অভিযোগ সত্যিই হাড় হিম করে দেওয়ার মতো ৷ চিদম্বরম আরও বলেন, "কেন্দ্র ও কিছু রাজ্য সরকার একসঙ্গে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা লুকোনোর চেষ্টা করছে ৷ এই সন্দেহ যদি সত্যি হয়, তাহলে তা জাতীয় লজ্জা ৷"
কেন্দ্র ও গুজরাত সরকারের থেকে এই ফারাকের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয় কংগ্রেসের তরফে ৷
তবে গুজরাত সরকার কিন্তু বলছে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ও মৃত্যু শংসাপত্রের মধ্যে ফারাক থাকতে পারে ৷
গুজরাতের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রদীপসিং জাদেজা বলছেন, ইস্যু হওয়া মৃত্যু শংসাপত্রগুলিকে গুণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা হিসেব করা ঠিক না । মৃত্যু শংসাপত্রের সংখ্যা এবং করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনা করাও একেবারেই অনুচিত বলে মনে করছেন তিনি ৷ তাঁর মতে, একটি মৃত্যুর একাধিকবার রেজিস্ট্রার হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ সুতরাং, প্রকৃত মৃত্যুর পরিসংখ্যান এবং মৃত্যুর শংসাপত্রের মধ্যে একটি পদ্ধতিগত ব্যবধান থাকতে পারে ৷
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন জাদেজা ৷ তাঁর মতে, অনেক সময় পরিবারের লোকেরা কারও মৃত্যু রেজিস্টার করতে দেরি করেন । তিনি স্পষ্ট করে দেন, "গুজরাত সরকার করোনায় মৃত্যুর রিপোর্ট করার জন্য প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসরণ করছে । অনেক সময় মানুষ কোভিড পরবর্তী মৃত্যুগুলিকেও করোনায় মৃত্যু হিসেবে গণনা করতে চায় । তবে অন্যান্য রাজ্যগুলি যে নিয়ম অনুসরণ করছে, গুজরাত সরকারও তাই করছে ৷ "
গুজরাত সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পঙ্কজ কুমারও এই ধরনের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন ৷ তিনি বলছেন, "মৃত্যু, মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন ও তারপর মৃত্যুর শংসাপত্র ইস্যু করা... এই গোটা প্রক্রিয়াতে অনেকটা সময় লাগে ৷ তাই মৃত্যু শংসাপত্রের বিশ্লেষণ করে এই ধরনের অভিযোগ করা অমূলক ৷"