ETV Bharat / bharat

No Confidence Motion: লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার নিয়ম কী, কীভাবে হয় আলোচনা; জেনে নিন বিস্তারিত

No Confidence Motion in Lok Sabha: লোকসভায় নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে বিরোধীরা ৷ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে আলোচনা ৷ কিন্তু কীভাবে আনতে হয় এই প্রস্তাব, কী কী নিয়ম রয়েছে আলোচনা নিয়ে, সেই সব নিয়েই লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, রাজ্যসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল বিবেক কে অগ্নিহোত্রী ৷

No Confidence Motion
No Confidence Motion
author img

By

Published : Aug 8, 2023, 8:11 PM IST

Updated : Aug 8, 2023, 10:57 PM IST

26 জুলাই 2023 দুপুরে লোকসভায় অধ্যক্ষ ওম বিড়লা জানান যে সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের উপ দলনেতা গৌরব গগৈ মন্ত্রী পরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে নোটিশ দিয়েছেন ৷ অধ্যক্ষ তখন এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার অনুমতি নিতে কংগ্রেসের ওই সাংসদকে নির্দেশ দেন ৷

এটা কীভাবে গৃহীত হল: গগৈ এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার কাছে অনুমতি চান ৷ তখন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা এই প্রস্তাবের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উঠে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন ৷ যাতে বোঝা যায় ক’জন এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছেন ৷ সেই সময় কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা, ডিএমকে-এর টি আর বালু এবং এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে-সহ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংসদরা উঠে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন । এরপর অনাস্থা প্রস্তাব স্বীকার করেন ওম বিড়লা । এই প্রস্তাবের উপর বিতর্কের জন্য 8 ও 9 অগস্টের দিন ধার্য করা হয় ৷ 10 অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে ।

কেন অনাস্থা প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ: সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি সরকার তখনই ক্ষমতায় থাকতে পারে, যখন এটি সরাসরি নির্বাচিত সদনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । তাই মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে নিম্নকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ । অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক দায়বদ্ধতা দু‘টি নীতির প্রয়োগের দ্বারা নিশ্চিত করা হয় ৷ প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া মন্ত্রী পরিষদে কাউকে মনোনীত করা হয় না ৷ আর দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর বরখাস্তের দাবিতে কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কোনও ব্যক্তিকে বহাল রাখা হয় না । সম্মিলিত দায়িত্বের সারমর্ম হল যে কোনও নীতি আলোচনার পর্যায়ে থাকাকালীন মন্ত্রীকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয় ৷ তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রতিটি মন্ত্রী কোনও দ্বিধা ছাড়াই সেই সিদ্ধান্তের পাশে থাকবেন বলে আশা করা হয় ।

PM Narendra Modi
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী মোদি (ফাইল)৷ এপি

পরাজয় মানে কি: ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 75(3) এই নীতির উপর ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয় যে মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে জনগণের (লোকসভা) কাছে দায়বদ্ধ থাকবে । এটি বোঝায় যে সরকার যদি সদনের আস্থা হারিয়ে ফেলে, তবে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বা লোকসভা ভেঙে দিতে হবে । যাই হোক, পদত্যাগ বা বিলুপ্তি শুধুমাত্র তখনই অনুসরণ করা হবে, যখন অনাস্থার কারণে হার হবে ৷

পদত্যাগ করা বা সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকার কী বিবেচনা করছে ৷ আর তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে । তাই বিরোধীরা চাইলে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট চেয়ে লোকসভার মতামত পরীক্ষা করতে পারে ।

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য সদস্যদের সমর্থন: অধ্যক্ষ যদি মনে করেন যে প্রস্তাবটি ঠিক আছে, তবে তিনি সেটি লোকসভায় পড়ে শোনাবেন ৷ আর যে সদস্যরা এই প্রস্তাবের পক্ষে, তাঁদের উঠে দাঁড়িয়ে সমর্থন করতে বলবেন ৷ যদি 50 জনের বেশি সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে উঠে দাঁড়ান, তাহলে তা অধ্যক্ষ মঞ্জুর করবেন ৷ আর তিনি লোকসভার কাজের উপর ভিত্তি করে একটি দিন ধার্য করবেন আলোচনার জন্য ৷ কতটা সময় বরাদ্দ করবেন, সেটাও অধ্যক্ষের উপর নির্ভর করছে ৷ আর যেদিন প্রস্তাব পেশ হচ্ছে, তার থেকে দশদিনের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে ৷

প্রয়োজনীয়তা: সাংবিধানিক বিধান অনুসরণ করে, লোকসভার কার্যপ্রণালী ও কার্যপদ্ধতি পরিচালনার বিধিতে বলা হয়েছে যে মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে আস্থা প্রস্তাব কয়েকটি শর্তের উপর নির্ভর করে পেশ করা যেতে পারে ৷ সেগুলি হল - অধ্যক্ষ চাইলে কোনও সদস্যের উপর এই প্রস্তাব পেশের বিষয়টি ছাড়তে পারেন ৷ দ্বিতীয়ত যে সদস্য এই প্রস্তাব পেশ করতে চাইছেন তাঁকে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলকে 10 ঘণ্টা আগে এই নিয়ে নোটিশ দিতে হয় ৷

PM Narendra Modi
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ফাইল ছবি)

অনাস্থা প্রস্তাবে বিতর্ক উল্লিখিত বিষয়ের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ নয়: অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা কেবল নোটিশে উল্লেখ করা বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয় । সাধারণত, প্রস্তাবক নোটিশে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেন, বক্তারা চাইলে তার থেকে অন্য বিষয়ের উপরও আলোচনা করতে পারেন ৷ এমনকি যে সমস্ত বিষয়ে একই অধিবেশনে পৃথক আলোচনা হয়েছে, তাও উত্থাপন করা যেতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে শেষ আলোচনা হওয়ার পরে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যর্থতা রয়েছে ।

বিতর্কের জবাব: প্রস্তাবে সদস্যরা বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেন । তবে যিনি প্রস্তাব পেশ করেছেন, তাঁর পালটা উত্তর দেওয়ার অধিকার আছে ৷ তার পর অধ্যক্ষ নির্ধারিত সময়সীমা শেষের পর এই প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন তোলেন ৷

কীভাবে সংখ্যা জড়ো করা হয়: এনডিএ (334) এর শক্তি বিরোধীদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ৷ বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের সংখ্যা 142 ৷ ফলে তারা অনাস্থা প্রস্তাবে তারা জিতবে না ৷ তবে বিরোধীরা মনে করছে মণিপুর ইস্যুতে সরকারকে তারা কোণঠাসা করতে পেরেছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই নিয়ে বলতে বাধ্য করতে পেরেছে, এটা তাদের কাছে নৈতিক জয় ৷ তবে মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত নাও বলতে পারেন ৷ কারণ, মণিপুরের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত, যা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে ৷ তা বিতর্কের সময় এই নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷

স্বাধীন ভারতের প্রথম অনাস্থা কবে পেশ হয়: অনাস্থা প্রস্তাব ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ইস্যুতে আলোচনা জোরদার করার জন্য একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বরাবর । 1963 সালে তৃতীয় লোকসভার সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আচার্য জেবি কৃপালানি প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন । প্রস্তাবের উপর বিতর্ক চার দিন ধরে 21 ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল ৷ 40 জন সাংসদ এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

Congress MP Rahul Gandhi
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি (ফাইল)৷ এপি

নেহরুর জবাব কী ছিল: নেহেরু মন্তব্য করেছিলেন, "একটি অনাস্থা প্রস্তাবের লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারে থাকা দলটিকে সরিয়ে দেওয়া এবং তার জায়গা নেওয়া ৷ বর্তমান দৃষ্টান্তে এটা স্পষ্ট যে এমন কোনও প্রত্যাশা বা আশা ছিল না । লাভজনক ও আকর্ষণীয় বিতর্ক হয়েছে বলে মনে করলেও এটা একটু অবাস্তব ছিল । ব্যক্তিগতভাবে, আমি এই প্রস্তাব ও এই বিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছি । আমি অনুভব করেছি যে আমরা যদি এই ধরনের পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা করি তবে সেটা ভালো হবে ।”

সরকারের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কতগুলি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে: ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে সংসদে 27টি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷ এবারেরটা ধরলে সংখ্য়াটা 28 হবে ৷ শেষবার আনা হয়েছিল 2018 সালে । এই 27টি অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে 15টি আনা হয় ইন্দিরা গান্ধি ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ৷

এই 27টি প্রস্তাবের একটিরও নিষ্পত্তি হয়নি ৷ তবে 1979 সালে মোরারজি দেশাইয়ের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে ৷ বিতর্কের শেষে তা নিষ্পত্তিহীন থেকে যায় ৷ কিন্তু ভোটাভুটি ছাড়াই মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন ৷ ফলে সরকারের পতন হয় ৷ এটা একমাত্র নজির ৷

এনডিএ-র দ্বিতীয় অনাস্থা প্রস্তাব: 2014 সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এনডিএ সরকার অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হচ্ছে । প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবটি 2018 সালের 20 জুলাই পেশ করা হয় ৷ এনডিএ-র 325 জন সাংসদ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে জয় পান ৷ আর 126 জন বিরোধী সাংসদ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ৷ 2019 সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসে ৷ তবে 2018 সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার সময় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে 2024 সালে তাঁর দলের জয়কে সহজ করার জন্য 2023 সালে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে ।

26 জুলাই 2023 দুপুরে লোকসভায় অধ্যক্ষ ওম বিড়লা জানান যে সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের উপ দলনেতা গৌরব গগৈ মন্ত্রী পরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে নোটিশ দিয়েছেন ৷ অধ্যক্ষ তখন এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার অনুমতি নিতে কংগ্রেসের ওই সাংসদকে নির্দেশ দেন ৷

এটা কীভাবে গৃহীত হল: গগৈ এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার কাছে অনুমতি চান ৷ তখন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা এই প্রস্তাবের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উঠে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন ৷ যাতে বোঝা যায় ক’জন এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছেন ৷ সেই সময় কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা, ডিএমকে-এর টি আর বালু এবং এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে-সহ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংসদরা উঠে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন । এরপর অনাস্থা প্রস্তাব স্বীকার করেন ওম বিড়লা । এই প্রস্তাবের উপর বিতর্কের জন্য 8 ও 9 অগস্টের দিন ধার্য করা হয় ৷ 10 অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে ।

কেন অনাস্থা প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ: সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি সরকার তখনই ক্ষমতায় থাকতে পারে, যখন এটি সরাসরি নির্বাচিত সদনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । তাই মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে নিম্নকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ । অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক দায়বদ্ধতা দু‘টি নীতির প্রয়োগের দ্বারা নিশ্চিত করা হয় ৷ প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া মন্ত্রী পরিষদে কাউকে মনোনীত করা হয় না ৷ আর দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর বরখাস্তের দাবিতে কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কোনও ব্যক্তিকে বহাল রাখা হয় না । সম্মিলিত দায়িত্বের সারমর্ম হল যে কোনও নীতি আলোচনার পর্যায়ে থাকাকালীন মন্ত্রীকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয় ৷ তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রতিটি মন্ত্রী কোনও দ্বিধা ছাড়াই সেই সিদ্ধান্তের পাশে থাকবেন বলে আশা করা হয় ।

PM Narendra Modi
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী মোদি (ফাইল)৷ এপি

পরাজয় মানে কি: ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 75(3) এই নীতির উপর ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয় যে মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে জনগণের (লোকসভা) কাছে দায়বদ্ধ থাকবে । এটি বোঝায় যে সরকার যদি সদনের আস্থা হারিয়ে ফেলে, তবে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বা লোকসভা ভেঙে দিতে হবে । যাই হোক, পদত্যাগ বা বিলুপ্তি শুধুমাত্র তখনই অনুসরণ করা হবে, যখন অনাস্থার কারণে হার হবে ৷

পদত্যাগ করা বা সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকার কী বিবেচনা করছে ৷ আর তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে । তাই বিরোধীরা চাইলে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট চেয়ে লোকসভার মতামত পরীক্ষা করতে পারে ।

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য সদস্যদের সমর্থন: অধ্যক্ষ যদি মনে করেন যে প্রস্তাবটি ঠিক আছে, তবে তিনি সেটি লোকসভায় পড়ে শোনাবেন ৷ আর যে সদস্যরা এই প্রস্তাবের পক্ষে, তাঁদের উঠে দাঁড়িয়ে সমর্থন করতে বলবেন ৷ যদি 50 জনের বেশি সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে উঠে দাঁড়ান, তাহলে তা অধ্যক্ষ মঞ্জুর করবেন ৷ আর তিনি লোকসভার কাজের উপর ভিত্তি করে একটি দিন ধার্য করবেন আলোচনার জন্য ৷ কতটা সময় বরাদ্দ করবেন, সেটাও অধ্যক্ষের উপর নির্ভর করছে ৷ আর যেদিন প্রস্তাব পেশ হচ্ছে, তার থেকে দশদিনের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে ৷

প্রয়োজনীয়তা: সাংবিধানিক বিধান অনুসরণ করে, লোকসভার কার্যপ্রণালী ও কার্যপদ্ধতি পরিচালনার বিধিতে বলা হয়েছে যে মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে আস্থা প্রস্তাব কয়েকটি শর্তের উপর নির্ভর করে পেশ করা যেতে পারে ৷ সেগুলি হল - অধ্যক্ষ চাইলে কোনও সদস্যের উপর এই প্রস্তাব পেশের বিষয়টি ছাড়তে পারেন ৷ দ্বিতীয়ত যে সদস্য এই প্রস্তাব পেশ করতে চাইছেন তাঁকে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলকে 10 ঘণ্টা আগে এই নিয়ে নোটিশ দিতে হয় ৷

PM Narendra Modi
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ফাইল ছবি)

অনাস্থা প্রস্তাবে বিতর্ক উল্লিখিত বিষয়ের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ নয়: অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা কেবল নোটিশে উল্লেখ করা বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয় । সাধারণত, প্রস্তাবক নোটিশে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেন, বক্তারা চাইলে তার থেকে অন্য বিষয়ের উপরও আলোচনা করতে পারেন ৷ এমনকি যে সমস্ত বিষয়ে একই অধিবেশনে পৃথক আলোচনা হয়েছে, তাও উত্থাপন করা যেতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে শেষ আলোচনা হওয়ার পরে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যর্থতা রয়েছে ।

বিতর্কের জবাব: প্রস্তাবে সদস্যরা বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেন । তবে যিনি প্রস্তাব পেশ করেছেন, তাঁর পালটা উত্তর দেওয়ার অধিকার আছে ৷ তার পর অধ্যক্ষ নির্ধারিত সময়সীমা শেষের পর এই প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন তোলেন ৷

কীভাবে সংখ্যা জড়ো করা হয়: এনডিএ (334) এর শক্তি বিরোধীদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ৷ বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের সংখ্যা 142 ৷ ফলে তারা অনাস্থা প্রস্তাবে তারা জিতবে না ৷ তবে বিরোধীরা মনে করছে মণিপুর ইস্যুতে সরকারকে তারা কোণঠাসা করতে পেরেছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই নিয়ে বলতে বাধ্য করতে পেরেছে, এটা তাদের কাছে নৈতিক জয় ৷ তবে মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত নাও বলতে পারেন ৷ কারণ, মণিপুরের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত, যা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে ৷ তা বিতর্কের সময় এই নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷

স্বাধীন ভারতের প্রথম অনাস্থা কবে পেশ হয়: অনাস্থা প্রস্তাব ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ইস্যুতে আলোচনা জোরদার করার জন্য একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বরাবর । 1963 সালে তৃতীয় লোকসভার সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আচার্য জেবি কৃপালানি প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন । প্রস্তাবের উপর বিতর্ক চার দিন ধরে 21 ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল ৷ 40 জন সাংসদ এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

Congress MP Rahul Gandhi
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি (ফাইল)৷ এপি

নেহরুর জবাব কী ছিল: নেহেরু মন্তব্য করেছিলেন, "একটি অনাস্থা প্রস্তাবের লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারে থাকা দলটিকে সরিয়ে দেওয়া এবং তার জায়গা নেওয়া ৷ বর্তমান দৃষ্টান্তে এটা স্পষ্ট যে এমন কোনও প্রত্যাশা বা আশা ছিল না । লাভজনক ও আকর্ষণীয় বিতর্ক হয়েছে বলে মনে করলেও এটা একটু অবাস্তব ছিল । ব্যক্তিগতভাবে, আমি এই প্রস্তাব ও এই বিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছি । আমি অনুভব করেছি যে আমরা যদি এই ধরনের পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা করি তবে সেটা ভালো হবে ।”

সরকারের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কতগুলি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে: ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে সংসদে 27টি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷ এবারেরটা ধরলে সংখ্য়াটা 28 হবে ৷ শেষবার আনা হয়েছিল 2018 সালে । এই 27টি অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে 15টি আনা হয় ইন্দিরা গান্ধি ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ৷

এই 27টি প্রস্তাবের একটিরও নিষ্পত্তি হয়নি ৷ তবে 1979 সালে মোরারজি দেশাইয়ের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে ৷ বিতর্কের শেষে তা নিষ্পত্তিহীন থেকে যায় ৷ কিন্তু ভোটাভুটি ছাড়াই মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন ৷ ফলে সরকারের পতন হয় ৷ এটা একমাত্র নজির ৷

এনডিএ-র দ্বিতীয় অনাস্থা প্রস্তাব: 2014 সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এনডিএ সরকার অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হচ্ছে । প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবটি 2018 সালের 20 জুলাই পেশ করা হয় ৷ এনডিএ-র 325 জন সাংসদ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে জয় পান ৷ আর 126 জন বিরোধী সাংসদ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ৷ 2019 সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসে ৷ তবে 2018 সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার সময় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে 2024 সালে তাঁর দলের জয়কে সহজ করার জন্য 2023 সালে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে ।

Last Updated : Aug 8, 2023, 10:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.