ETV Bharat / bharat

চিনের কাছে ‘হোলি গ্রেল’ মুহূর্ত হতে পারে সাংপোর বাঁধ - Sanjib Kr Baruah

পূর্ব তিব্বতের ইয়ারলাং সাংপো নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে চিন এক ঢিলে একাধিক পাখি মারার পরিকল্পনা করেছে । লিখছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সঞ্জীব কুমার বড়ুয়া ।

Tsangpo may be China's 'Holy Grail' moment
হোলি গ্রেল’ মুহূর্ত হতে পারে সাংপোর বাঁধ
author img

By

Published : Dec 15, 2020, 6:54 PM IST

বাইবেলের সেই ‘হোলি গ্রেল’-এর মতো পূর্ব তিব্বতের ইয়ারলাং সাংপো-ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ চিনের কাছে এক দুর্দান্ত মাইলস্টোন ছোয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ । এই একটি মাত্র পদক্ষেপের মাধ্যমে চিন তাদের একাধিক সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে । অবশ্যই তার জন্য যে ভারত ও বাংলাদেশের প্রবল বাধা এবং প্রযুক্তিগত বিবিধ কঠিন চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

চিন ইতিমধ্যেই ঝ্যাংমোতে ইয়ারলাং সাংপো নদীর উপর একটি 510 মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে ফেলেছে এবং তা কাজ করতেও শুরু করে দিয়েছে । এই দ্রুত গতির নদীর উপর আরও বেশ কয়েকটি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে চিন । ইয়ারলাং সাংপো নদী অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং, অসমে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে পদ্মা হিসাবে বয়ে চলে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে । একাধিক কারণে চিনের এই সব বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে চর্চা চলছে ।

প্রথমত, এর ফলে সেই সব অঞ্চলে নির্মাণকাজ এবং মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাবে যে অঞ্চল মানবতার অন্যতম আদিম অঞ্চল হিসাবে পরিচিত । এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গার মানচিত্র পর্যন্ত সঠিক ভাবে তৈরি করা যায়নি । পাশাপাশি খুলে যাবে সেই অঞ্চলের দরজাও যেখানে নদী যেন হঠাৎই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ভারতে ঢুকে পড়েছে ।

দ্বিতীয়ত, এই ধরনের বিশাল বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে এমন সব জায়গায়, যেগুলি রয়েছে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে । কোনওভাবে যদি এই সব বাঁধ ভেঙে পড়ে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নদীর অববাহিকার দেশগুলি যেমন ভারত ও বাংলাদেশ । ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ ।

তৃতীয়ত, এই ধরনের বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হওয়া বিবিধ চুক্তিকে খণ্ডন করবে যদি না পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তৈরি হয় ।

এত সব চ্যালেঞ্জ এবং বাধা থাকা সত্ত্বেও চিন যেন মনস্থির করেই ফেলেছে এই নদীর উপর বাঁধের একটা জাল তৈরি করবে । এই প্রক্রিয়ার শুরু হচ্ছে এই দুই প্রজেক্ট দিয়ে । এর পিছনে আসল কারণগুলি কিন্তু খুবই সাধারণ :

প্রথমত, এর ফলে তিব্বত এবং প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই সুবিধাজনক হবে । এর ফলে এই সব এলাকায় যেখানে মানুষের বসতি প্রায় নেই, সেই সব জায়গায় হান ভাষাভাষি চিনাদের এনে রাখা যাবে । এর ফলে এই এলাকার উপর, বিশেষত ভারতের সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হবে।

দ্বিতীয়ত, দ্রুত গতির ইয়ারলাং সাংপোর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা গেলে খুব কম দামে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব হবে । আর তা সম্ভব হলে নিজেদের ব্যবহার তো বটেই, নেপাল, মায়ানমার এবং পূর্ব এশিয়ার অন্য বহু দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে চিন ।

চিনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এবং সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ তাদের একটি সাম্প্রতিক সম্পাদকীয়তে দাবি করেছে যে, এই সব জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হবে সেই সব অঞ্চলে যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে । সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়, “এই সব বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথা ভাবছে চিন । এই কাজের জন্য নেপালে উচ্চশক্তির পরিবহণ লাইন‌ তৈরির কাজ চলছে । একবার এই সব জলবিদ্যুৎ প্রক‌ল্প সঠিক ভাবে কাজ করা শুরু করে দিলে চিনের প্রতিবেশি দেশগুলির উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি শক্তি সরবরাহ করা সম্ভব হবে ।”স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে এর ফলে ভারতের ‘পূর্ব তাকাও’ নীতিতে বড় রকম ধাক্কা লাগবে যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়িত করার চিন্তা ভাবনা হচ্ছিল ।

তৃতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য অজীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে চিন একটা খুব বড় পদক্ষেপ করার চেষ্টা করছে । 2030 সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণে নিয়ন্ত্রণ এবং 2060 সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চিন ।

রবিবার চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি)-তে চিনের অন্যতম সেরা আবহবিজ্ঞানী জাই ঝেনহুয়া বলেন, “চিন কীভাবে টাইম টেবিল মেনে এবং স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে এগোচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বোঝাতেও এই পদক্ষেপ ।”

বাইবেলের সেই ‘হোলি গ্রেল’-এর মতো পূর্ব তিব্বতের ইয়ারলাং সাংপো-ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ চিনের কাছে এক দুর্দান্ত মাইলস্টোন ছোয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ । এই একটি মাত্র পদক্ষেপের মাধ্যমে চিন তাদের একাধিক সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে । অবশ্যই তার জন্য যে ভারত ও বাংলাদেশের প্রবল বাধা এবং প্রযুক্তিগত বিবিধ কঠিন চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

চিন ইতিমধ্যেই ঝ্যাংমোতে ইয়ারলাং সাংপো নদীর উপর একটি 510 মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে ফেলেছে এবং তা কাজ করতেও শুরু করে দিয়েছে । এই দ্রুত গতির নদীর উপর আরও বেশ কয়েকটি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে চিন । ইয়ারলাং সাংপো নদী অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং, অসমে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে পদ্মা হিসাবে বয়ে চলে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে । একাধিক কারণে চিনের এই সব বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে চর্চা চলছে ।

প্রথমত, এর ফলে সেই সব অঞ্চলে নির্মাণকাজ এবং মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাবে যে অঞ্চল মানবতার অন্যতম আদিম অঞ্চল হিসাবে পরিচিত । এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গার মানচিত্র পর্যন্ত সঠিক ভাবে তৈরি করা যায়নি । পাশাপাশি খুলে যাবে সেই অঞ্চলের দরজাও যেখানে নদী যেন হঠাৎই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ভারতে ঢুকে পড়েছে ।

দ্বিতীয়ত, এই ধরনের বিশাল বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে এমন সব জায়গায়, যেগুলি রয়েছে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে । কোনওভাবে যদি এই সব বাঁধ ভেঙে পড়ে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নদীর অববাহিকার দেশগুলি যেমন ভারত ও বাংলাদেশ । ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ ।

তৃতীয়ত, এই ধরনের বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হওয়া বিবিধ চুক্তিকে খণ্ডন করবে যদি না পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তৈরি হয় ।

এত সব চ্যালেঞ্জ এবং বাধা থাকা সত্ত্বেও চিন যেন মনস্থির করেই ফেলেছে এই নদীর উপর বাঁধের একটা জাল তৈরি করবে । এই প্রক্রিয়ার শুরু হচ্ছে এই দুই প্রজেক্ট দিয়ে । এর পিছনে আসল কারণগুলি কিন্তু খুবই সাধারণ :

প্রথমত, এর ফলে তিব্বত এবং প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই সুবিধাজনক হবে । এর ফলে এই সব এলাকায় যেখানে মানুষের বসতি প্রায় নেই, সেই সব জায়গায় হান ভাষাভাষি চিনাদের এনে রাখা যাবে । এর ফলে এই এলাকার উপর, বিশেষত ভারতের সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হবে।

দ্বিতীয়ত, দ্রুত গতির ইয়ারলাং সাংপোর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা গেলে খুব কম দামে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব হবে । আর তা সম্ভব হলে নিজেদের ব্যবহার তো বটেই, নেপাল, মায়ানমার এবং পূর্ব এশিয়ার অন্য বহু দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে চিন ।

চিনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এবং সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ তাদের একটি সাম্প্রতিক সম্পাদকীয়তে দাবি করেছে যে, এই সব জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হবে সেই সব অঞ্চলে যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে । সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়, “এই সব বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথা ভাবছে চিন । এই কাজের জন্য নেপালে উচ্চশক্তির পরিবহণ লাইন‌ তৈরির কাজ চলছে । একবার এই সব জলবিদ্যুৎ প্রক‌ল্প সঠিক ভাবে কাজ করা শুরু করে দিলে চিনের প্রতিবেশি দেশগুলির উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি শক্তি সরবরাহ করা সম্ভব হবে ।”স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে এর ফলে ভারতের ‘পূর্ব তাকাও’ নীতিতে বড় রকম ধাক্কা লাগবে যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়িত করার চিন্তা ভাবনা হচ্ছিল ।

তৃতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য অজীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে চিন একটা খুব বড় পদক্ষেপ করার চেষ্টা করছে । 2030 সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণে নিয়ন্ত্রণ এবং 2060 সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চিন ।

রবিবার চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি)-তে চিনের অন্যতম সেরা আবহবিজ্ঞানী জাই ঝেনহুয়া বলেন, “চিন কীভাবে টাইম টেবিল মেনে এবং স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে এগোচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বোঝাতেও এই পদক্ষেপ ।”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.