জয়পুর, 29 অক্টোবর: রাজস্থানের ভোটে স্বজন-পোষণের অভিযোগে বিদ্ধ যুযুধান দুই পক্ষ কংগ্রেস এবং বিজেপি । ইতিমধ্যেই বিজেপি এবং কংগ্রেস তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে । আর বিধানসভা নির্বাচনে দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রার্থী তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক । এখনও পর্যন্ত দুই দলেরই এমন অন্তত 29 জন প্রার্থীকে চিহ্নিত করা গিয়েছে যারা নেতাদের আত্মীয় বা রাজনৈতিক পরিবারের অন্তর্গত।
রাজস্থানের 200টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে, বিজেপি এখনও পর্যন্ত 124টি আসনে এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস 95টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। উভয় দলের নেতারাই জানিয়েছেন, তারা তাদের নিজেদের দলের মধ্যে কোনও বিদ্রোহ এড়াতে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে চলছে । নির্বাচনে তাদের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সব ক্ষেত্রেই তারা সতর্ক।
124 জন প্রার্থীর দুটি তালিকায়, বিজেপি অন্তত 11 জনকে টিকিট দিয়েছে যারা রাজ্যের বিশিষ্ট নেতাদের পরিবারের সদস্য। কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত 95 জন প্রার্থী ঘোষণা করেছে । যার মধ্যে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য 18 জনকে টিকিট দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির তালিকায় একাধিক নেতাদের ছেলে, মেয়ে, নাতনি ও পুত্রবধূ এবার প্রার্থী হয়েছেন। অনেকেই প্রার্থী তালিকা দেখে কটাক্ষের সুরে জানাচ্ছেন, আসলে দলের মধ্যে বিদ্রোহ দমন করতে মৃত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিয়েছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপি প্রয়াত সাংসদ সানওয়ার লাল জাটের ছেলে রামস্বরূপ লাম্বাকে নাসিরাবাদ আসন থেকে এবং প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যের মন্ত্রী দিগম্বর সিংয়ের ছেলে শৈলেশ সিংকে ডিগ-কুমহের আসন থেকে টিকিট দিয়েছে। 2018 সালের নির্বাচনে জয়ী লাম্বাকে ফের একবার প্রার্থী করেছে দল । তিনি এর আগে আজমেঢ় থেকে লোকসভা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন । যদিও কংগ্রেসের রঘু শর্মার কাছে 80 হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন।
দেওলি-উনিয়ারা আসন থেকে গুর্জর নেতা কিরোদি সিং বেন্সলার ছেলে বিজয়, প্রাক্তন সাংসদ এবং পূর্ববর্তী জয়পুর রাজপরিবারের সদস্য গায়ত্রী দেবীর নাতনি দিয়া কুমারী বিদ্যাধর নগর থেকে, প্রাক্তন সাংসদ করনি সিংয়ের নাতনি সিদ্ধি কুমারী বিকানের পূর্ব লেক থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। শ্রীমাধোপুরের হরলাল সিং খারার ছেলে ঝাবর সিং খারা, মুন্দাওয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক ধরমপাল চৌধুরীর ছেলে মনজিৎ চৌধুরী, নাগৌর থেকে প্রাক্তন সাংসদ নাথুরাম মিরধার নাতনি জ্যোতি মির্ধা, প্রাক্তন বিধায়ক গৌতম লাল মীনার ছেলে কানহাইয়া, প্রাক্তন মন্ত্রী কিরশা ও দীপার রাজওয়ানের ছেলে কানহাইয়া এবং মাকরানা থেকে প্রাক্তন বিধায়ক শ্রীরাম ভিঞ্চারের পুত্রবধূ সুমিতাকে প্রার্থী করেছে দল।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, মূলত দলীয় বিদ্রোহ এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । 2008 সালের বিধানসভা নির্বাচনের মতো ফলাফল এড়াতে চায় বিজেপি । সেবার বিজেপি 15টিরও বেশি আসন দলীয় কোন্দলের জেরে হারিয়েছিল । ফলে ক্ষমতাও হাতছাড়া হয় । 2018 সালে বিজেপি 78টি এবং কংগ্রেস 96টি আসন জিতেছিল। দলের অন্দরের দাবি, বিজেপি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণেই জোর ধাক্কা খেয়েছিল । নয়তো, সেবারও স্বতন্ত্র বিধায়কদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পারত দল। 2018 সালের নির্বাচনে বিএসপি ছ’টি আসন জিতেছিল এবং 14টি নির্দলদের কাছে গিয়েছিল।
ক্ষমতাসীন কংগ্রেসও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট-সহ বেশ কয়েকজনকে প্রার্থী করেছে। তাদের অধিকাংশই 2018 সালের নির্বাচনে জিতে আসা প্রার্থী । কংগ্রেসের 95 জন প্রার্থীর তিনটি তালিকায় এমন 18 জন মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন যারা পরিবারতন্ত্রের শিকার। তাদের মধ্যে রয়েছেন নোখা থেকে বিরোধী দলের প্রাক্তন নেতা রামেশ্বর দুদির স্ত্রী সুশীলা দুদি, সর্দারশহর থেকে প্রাক্তন বিধায়ক ভানওয়ার লাল শর্মার ছেলে অনিল শর্মা, ঝুনঝুনু থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শীশ রাম ওলার ছেলে ব্রজেন্দ্র ওলা, রামগড়ের বর্তমান বিধায়ক সাফিয়া খানের স্বামী জুবের, প্রাক্তন বিধায়ক বর্দিচাঁদ জৈন।
আরও পড়ুন: কাস্তে হাতে ধান কেটে কৃষক মডেলের পক্ষে সওয়াল রাহুলের
এর আগে বরাবরই বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ই পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে । বিজেপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বারবারই রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের উত্থান গণতন্ত্রের জন্য সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজস্থানের এআইসিসি ইনচার্জ সুখজিন্দর সিং রান্ধওয়ারা দলে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
(পিটিআই)