চেন্নাই, 25 মার্চ : ছোট্ট একটা হেলিকপ্টার, বার্ষিক 1 কোটি টাকার সঞ্চয়, বিয়ের জন্য সোনার গয়না, একটা তিনতলা বাড়ি এবং সবশেষে চন্দ্রভ্রমণ ৷ ভোট বৈতরণী পেরোতে স্রেফ এটুকুই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মাদুরাই দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী থুলাম সারাবনন !
আগামী 6 এপ্রিল ভোট হবে দক্ষিণের এই রাজ্য়ে ৷ তাই ভোটপ্রচারে ব্য়স্ত সব রাজনৈতিক দল ৷ প্রচারে লোক টানতে চেষ্টার কোনও খামতি রাখছে না তারা ৷ এমন একটা সময়েই বাকিদের কার্যত উড়িয়ে দিয়ে নজর কেড়েছেন থুলাম ৷ তাঁর নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতির যে মায়াবী পর্বত তিনি গড়েছেন, তা পড়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় সব শিবিরের ৷ মাদুরাই দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বাকি 13 জন প্রার্থীকে ছেড়ে চর্চা চলছে শুধুমাত্র তাঁকে নিয়েই ৷
33 বছরের থুলাম পেশায় সাংবাদিক ৷ তাঁর দাবি, মানুষকে সচেতন করতেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি ৷ তাঁর বার্তা, নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দেন ৷ কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা ৷ ভোট মিটলে তাঁদের আর টিকিও দেখতে পাওয়া যায় না ৷ তাই মানুষকে সতর্ক হতে হবে ৷ নেতাদের প্রতিশ্রুতি ভুলে সৎ এবং সাধারণ প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে ৷
থুলামের নির্বাচনী প্রতীক ডাস্টবিন ৷ যা অনেক ভেবে চিন্তেই তিনি বেছে নিয়েছেন বলে দাবি থুলামের ৷ তাঁর মতে, নেতা যদি ভোটে জিতে প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেন তো ভালো ৷ কিন্তু যদি তাঁরা তা না করেন, তাহলে জনগণ চাইলে ডাস্টবিনেও তাঁদের ভোট ছুড়ে ফেলতে পারেন ৷ যা আদতে ভোট বয়কট করারই বার্তা ৷
আরও পড়ুন : হিসেবের মধ্যে আসে না, তবুও জয়ের মতো পরিস্থিতিতে ওয়াইসি ও দিনাকরণ
গৃহবধূরা যেভাবে বিনা বেতনে সারাদিন ধরে বেগার খাটেন, তাও বন্ধ করতে চান থুলাম ৷ এরজন্য প্রত্য়েক ঘরে ঘরে একটি করে যন্ত্রমানব (রোবোট) পাঠাতে চান তিনি ৷ যারা ঘরকন্নার কাজে মেয়ে-বউদের সাহায্য করবে ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে সকলে মনের আনন্দে পুরো পরিবারকে নিয়ে জলপথে ঘুরে বেড়াতে পারেন, তারজন্য প্রত্য়েক পরিবারকে একটি করে নৌকা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন থুলাম ৷ পাশাপাশি, নিজের বিধানসভা এলাকাকে ঠান্ডা রাখতে 300 ফুট উঁচু একটি বরফের পাহাড় তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে থুলামের ! তাঁর ইচ্ছা, মাদুরাইতেই একটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এবং একটি রকেট লঞ্চ প্য়াড গড়বেন তিনি ৷
প্রসঙ্গত, থুলাম নিজে কিন্তু অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ৷ নির্বাচনী মনোনয়নপত্র দাখিল করার জন্য 20 হাজার টাকা সুদে ধারও নিতে হয়েছে তাঁকে ৷ তাঁর আক্ষেপ, ভারতের রাজনীতিকে বিষিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি ৷ মানুষের ভাল-মন্দ নিয়ে এদের কিছু যায় আসে না ৷ এরা শুধু ভোট কিনতে টাকা ছড়ায় ৷ কিন্তু কর্মসংস্থান, কৃষির উন্নতি এমনকী জলবায়ুকে শুদ্ধ রাখার কথাও এরা ভাবে না ৷ রাজনীতি শুধুই অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ তবে কি সেই বিষাক্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবাদ জানাতেই এমন একটা ব্য়তিক্রমী পথ বেছে নিলেন এই তরুণ ?