কলকাতা, 3 জুলাই : মাত্র চারমাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত (Tirath Singh Rawat) ৷ আর এই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি ৷ বিজেপি (BJP) তো প্রকাশ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির তুলনা টানছে ৷ কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্দেশ্যে ৷ যদিও এই নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ তৃণমূল (Trinamool Congress) ৷ তারা এই ঘটনার মধ্যে বিজেপির স্থানীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের দিকেই আঙুল তুলছে ৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের সঙ্গে বাংলার কী সম্পর্ক রয়েছে ? রাজনৈতিক মহল বলছে, পুরো যোগসূত্রটাই নির্বাচনী রাজনীতির অন্তর্গত ৷ ভোটে না জিতে কেউ মন্ত্রী হলে, তাঁকে ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচনে জিতে আসতে হয় ৷ সংসদীয় রাজনীতিতে এটাই নিয়ম ৷ তিরথ সিং রাওয়াত গত মার্চে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ৷ সেপ্টেম্বরের আগে তাঁকে ভোটে জিতে আসতে হত ৷
আরও পড়ুন : তুষার মেহতার অপসারণের দাবিতে সোমবার রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হচ্ছে তৃণমূল
কিন্তু সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন করা কতটা সম্ভব, তা যথেষ্ট চিন্তার ৷ তাই তিরথ সিং রাওয়াত পদত্যাগ করায় বিজেপি হাতে আরও খানিকটা সময় পেয়ে গেল ৷ এখন যদি উপনির্বাচন করা নাও যায়, তাহলেও বিজেপির হাতে আরও ছ’মাস সময় থাকছে উত্তরাখণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে জিতিয়ে আনার জন্য ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তরাখণ্ডে আগামী বছরের গোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন ৷ ফলে ওই রাজ্যে যিনি নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তাঁকে উপনির্বাচনে হয়তো লড়তে হবে না ৷ তিনি সরাসরি ভোটে চলে যেতে পারবেন ৷
আরও পড়ুন : সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতাদের সামনে রেখে বঙ্গ-বিজেপির সংগঠন সাজানোর পরিকল্পনা আরএসএস-এর
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, তাহলে কি করোনা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন পিছিয়ে যাবে ৷ আর আগামী বছর বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় হবে ৷ কারণ, চলতি বছরের শেষের দিকেই করোনার তৃতীয় ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ৷
সেটা যদি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি আসনে উপনির্বাচন সম্ভব হবে না ৷ সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পদত্যাগ করতে হবে ছ’মাসের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার জন্য ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে হেরে যাওয়ার পরও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় বিজেপি এই নিয়ে কটাক্ষ করে প্রায় রোজই ৷ তাই তিরথ সিং রাওয়াতের উদাহরণ টেনে এবারও সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির ৷
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি
দলের জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা (Anupam Hazra) শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন এই নিয়ে ৷ তিনি লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন সম্ভব নয়, তাই ভদ্রতা দেখিয়ে তিরথ সিং রাওয়াত পদত্যাগ করেছেন ৷ এর পরই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অবশ্য সবার কাছ থেকে এরকম ভদ্রতা আশা করা যায় না ৷’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মমতাকে যদি কিছুদিনের জন্যও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যায়, সেটাই বিজেপির কাছে নৈতিক জয় হবে ৷ তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এদিন জানান, পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই ৷
আরও পড়ুন : খুচরো ও পাইকারি ব্য়বসাকে এমএসএমই-র অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী আখ্যা প্রধানমন্ত্রীর
আর উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, তিরথ সিং রাওয়াতকে নিয়ে বিজেপির অন্দরে সমস্যা ছিল ৷ কারণ, ওই নেতা বিতর্কিত মন্তব্য করে দলকে বিপাকে ফেলছিলেন ৷ তাই ভোটের অঙ্ক কষে নির্বাচনের ছ’মাস আগে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বাছা হল ৷
রাজনৈতিক মহলের অন্য একটি অংশ অবশ্য এর পিছনে বিজেপির অন্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছে ৷ তাদের মতে, বিজেপির অবস্থা এখন ভাল নয় ৷ যে মোদিকে (Narendra Modi) সামনে রেখে তারা লড়াই করে, তার ভাবমূর্তিও করোনার পরিস্থিতির জন্য খুব একটা অনুকূল নয় ৷ তাই বিজেপি এখনই নির্বাচনে যেতে চাইছে না ৷ তাদের আশা করোনার তৃতীয় ঢেউ ঠিকমতো সামলাতে পারলে, পরিস্থিতি বদল হবে ৷ তখন বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটের সঙ্গে উপনির্বাচনও করে নেওয়া যাবে ৷ তাতের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে ৷
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিরথ সিং রাওয়াত
যদিও পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে খবর ৷ তাই শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচন কখন হয়, এখন সেটাই দেখার ৷