দিল্লি, 20 নভেম্বর : বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেনের বানা পোস্টের নিষ্ঠুর আবহাওয়া মানুষের কাছে কঠিনতম অঞ্চলে পরিণত করেছে । মেরু অঞ্চলের পর এটাই দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ । আদতে এটি একটি মৃত্যু উপত্যকা, যেখানে অক্সিজেন দুর্লভ, মানুষের জীবন ধারণের পক্ষে জায়গাটা অত্যন্ত কঠিন ।
গত সোমবার সেনাবাহিনীর টহলদারির সময় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 20 হাজার ফুট উঁচুতে ভয়ংকর তুষারধস নামে । তাতে চাপা পড়েন আটজন সেনা । তাঁরা সেদিন সেখানে রুটিন টহলদারি করছিলেন ।
এটা বোধ হয় এমন একটা জায়গা যেখানে ঘাস জন্মায় না, কিন্তু এই বানা পোস্ট থেকে সালটারো শৈলশিরা এবং সিয়াচেন হিমবাহ স্পষ্ট দেখা যায় । সেনাবাহিনীর কাছে বোঝানোর দরকার নেই জায়গাটার গুরুত্ব কতটা, দেশের বৃহত্তম স্বচ্ছ জলের সংরক্ষণ এলাকাটিও এখানে ।
প্রায় 21 হাজার ফুট উঁচুতে সুবেদার মেজর এবং অবৈতনিক ক্যাপটেন বানা সিংয়ের অমর কৃতিত্বের কথা স্মরণে রেখেই বানা পোস্টকে স্মরণ করা হয় । 1987-র 26 জুলাই বানা সিং 15 হাজার ফুট উচ্চতায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খুব অল্প সংখ্যক সেনা নিয়ে বীরের মতো লড়াই চালিয়ছিলেন ।
টহলদারির জন্য উত্তর সিয়াচেনে মোতায়েন ছিল আটজনের একটি দল । দুপুর তিনটে নাগাদ আচমকাই বিশাল তুষারধস নামে । তাতে সবাই চাপা পড়েন । খবর পেয়ে সেনার অন্য একটি দল কিছুক্ষণ পরেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে । ঘটনাস্থান চিহ্নিত করার পর শুরু হয় পুরু বরফের স্তর সরিয়ে তাঁদের উদ্ধারকাজ । উদ্ধারের পরে হেলিকপ্টারে করে স্থানীয় সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই 6 জন মারা যান । এর মধ্যে চার সেনা জওয়ান ও দুই মালবাহক ।
মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং কথা বলেন সেনা প্রধান বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে । তদন্তের স্বার্থে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সিয়াচেনে একটি সরকারি সফরে যাওয়ার কথা জানান । সেনা কর্মীদের মৃত্যুর জন্য টুইট করে শোক প্রকাশ করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী । তিনি লেখেন, 'তুষারধসে সেনা জওয়ান ও মালবাহকদের মৃত্যুর খবরে আমি গভীর ভাবে শোকাহত । ওঁদের সাহসিকতা ও দেশের জন্য বলিদানকে কুর্নিশ করি । পরিবারকে জানাই গভীর সমবেদনা ।'
2016 সালের ফেব্রুয়ারিতে সিয়াচেনে 19,500 ফুট উঁচুতে প্রায় একই রকম তুষারধসের কবলে পড়েছিলেন 10জন সেনা জওয়ান। 35 ফুট পুরু বরফের স্তরের নীচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থানে 9 জনের মৃত্যু হলেও জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয় ল্যান্সনায়ক 33 বছরের হনুমানাথাপ্পা কোপ্পাড়কে । যদিও তিনদিন পর হাসপাতালে তাঁরও মৃত্যু হয় । সোমবারের তুষারধস ফের মনে করিয়ে দিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের সেই ঘটনা ।
1984 থেকে 2018 সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, 34 বছরে 869 জন ভারতীয় জওয়ান সিয়াচেনে প্রাণ হারিয়েছেন, এঁরা কিন্তু কেউই যুদ্ধেক্ষেত্রে প্রাণ হারাননি ।
2002 সালের 7 এপ্রিল ভয়ংকর ধসের কারণে 135 জন পাকিস্থানী সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন ।
এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে উচ্চ হিমালয়ে হিমবাহ পতনের হার গত তিন শতকে অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এ পিছনে কাজ করছে বিশ্ব উষ্ণায়ণের কালো ছায়া । এর ফলে তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে তুষার ঝড়ের পরিমাণ বাড়ছে ।
সঞ্জীবকুমার বড়ুয়া