যে কোনও প্যানডেমিকের মূল কারণ খুঁজে বের করতে 114 টি দেশের 153 টি সংগঠন পরিচালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রয়েছে । 2019 সালে তারা সতর্ক করে দিয়েছিল যে ইবোলা, জিকা, নিপা, এমইআরএস এবং সারসের মতো ভাইরাসের সঙ্গে আরও একটি বিপজ্জনক রোগ জীবাণু বিশ্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য চূড়ান্তভাবে চেষ্টা করছে । এই পূর্বাভাসকে সত্যি বলে প্রমাণ করেছে কোরোনা । যা বিশ্ব জুড়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে । যার ফলে 23.22 লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে । ভারতে 1.08 কোটি মানুষকে সংক্রামিত করার পরে এবং 1.55 লাখ মানুষের মৃত্যুর পর এই প্যানডেমিকের শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ ক্রমশ দেখা যেতে শুরু করেছে । যদিও মৃত্যুর ঘটনা সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে । অ্যামেরিকা ও ইউরোপে কোরোনায় মৃত্যুর যে ধ্বংসলীলা চলেছে, তার প্রেক্ষিতে এই টিকাকরণে কোনও রকম শিথিলতা করা উচিত নয় । সেই কারণেই টিকাকরণ অভিযানকে আরও তীব্র করার সম্ভাবনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রাজ্য সরকারগুলিকে সতর্কতার ইঙ্গিত দিয়েছে ।
প্রথম পর্যায়ে কেন্দ্র শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী এবং সামনের সারির কোরোনা যোদ্ধাদের মধ্যে টিকা দেওয়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রেখেছে । যদিও 55 শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী টিকাগ্রহণ করেছেন । পুলিশ ও সাফাই কর্মীদের মধ্যে মাত্র 4.5 শতাংশ টিকা নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিৎকার করে বলেছে যে, বিশ্বের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে মুখোমুখি হওয়া দশটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হল টিকা নিতে দ্বিধাবোধ করা । কেন্দ্রের উচিত এই নিয়ে একটি শক্তিশালী কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা, যা টিকাকে ঘিরে তৈরি হওয়া সমস্ত দ্বিধা দূর করবে । কারণ, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয় ।
কেন্দ্রের কথায়, এখন যে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, এটা ছাড়া আরও 7 টি ভ্যাকসিন দেশে তৈরি করার কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে । পরের মাস থেকে সরকার 50 বছরের বেশি বয়সের মানুষদের জন্য টিকাকরণের কাজ চালু করতে চলেছে । বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী টিকা দেওয়ার জন্য 35 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের এক সচিব জানিয়েছেন, যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে 50 কোটি লোককে টিকা দেওয়া যেতে পারে । ভারত উদারতা দেখিয়ে 17 টি দেশে টিকার 55 লাখ ডোজ রপ্তানি করেছে । টিকা তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সৌভাগ্যের বিষয় ।
আরও পড়ুন : খুলছে স্কুল, বিস্তারিত গাইডলাইন দিল স্কুল শিক্ষা দপ্তর
যেহেতু একই সঙ্গে 138 কোটি জনসংখ্যার মধ্যে সকলকে টিকা দেওয়া অসম্ভব, তাই কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়ার অভিযান শুরু করেছে । টিকা দেওয়ার প্রথম পর্যায়ে যাঁদের নেওয়ার কথা ছিল, তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় নির্মাতাদের কাছে টিকার পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । ফলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে, যেখানে একটা অংশ টিকার খোঁজ শুরু করেছে, অন্যদিকে অন্য একটি অংশ টিকা নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে । কেন্দ্রের টিকা তৈরি করার সম্পূর্ণ ক্ষমতার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া উচিত । বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও টিকা দেওয়ার কাজে অংশীদার করা উচিত । কোরোনার টিকা প্রতিটি নাগরিকের জন্য উপলব্ধ করা উচিত ।
আরও পড়ুন : মার্চেই তৃতীয় কোভিড টিকা পাবে দেশ! আশা জাগাচ্ছে স্পুটনিক ভি
সরকারি টিকা দেওয়ার কাজের প্রায় 85 শতাংশ 12 টি রাজ্যের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে রয়েছে । বাকি রাজ্যগুলির পিছিয়ে থাকার কারণও খতিয়ে দেখা উচিত । কালোবাজারে যাতে টিকা চলে না যায়, তা রুখতে কড়া নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে । জিপিএসের সাহায্যে টিকার পরিবহণের উপর নজরদারি চালাতে হবে । টিকা দেওয়ার কাজকে সফল করতে গেলে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়কেই একযোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হবে । কোরোনার টিকা নিতে মানুষ যে দ্বিধা বোধ করছে, তা সমূলে উৎপাটিত করতে প্রচারের বিষয়কে নিপুণ ভাবে তৈরি করতে হবে । প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তখনই জেতা যাবে, যখন বিপুল সংখ্যায় মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসবেন । আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এগিয়ে এলে, তাঁরা অন্যদেরও দ্বিধা দূরে সরিয়ে দিতে কার্যকরী হতে পারবেন ।