দিল্লি, 28 ফেব্রুয়ারি : ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফর শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরই দিল্লির হিংসার ঘটনা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করল মার্কিন দূতাবাস । দূতাবাসের ওয়েবসাইটে জারি হওয়া ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, "উত্তর–পূর্ব দিল্লিতে যে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ভারতে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকরা সতর্কতা অবলম্বন করুন । যে যে জায়গায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেগুলি এড়িয়ে চলুন । কোথায়, কখন হিংসা ছড়াচ্ছে বা হিংসার জেরে কোথায়, কোন রাস্তা এবং মেট্রো বন্ধ থাকছে বা কখন কারফিউ জারি হচ্ছে - নানা মুহূর্তের খোঁজখবর পেতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে চোখ রাখুন ।"
নির্দেশিকায় 144 ধারা জারি করার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । এই ধারায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় চার জন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । রবিবার থেকে এই এলাকাগুলিতেই হিংসা, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত 40 জনের কাছাকাছি মৃত্যু হয়েছে । জখম নিরাপত্তারক্ষী-সহ আরও অনেকে ।
এর আগে মঙ্গলবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তার পর সন্ধ্যায় একক সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য পেশ করেন । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিয়ে যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয় তখন ট্রাম্প জানান, CAA ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন । ট্রাম্প বলেন, "আমি এই (CAA) নিয়ে কিছু বলতে চাই না । ভারতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে । আমি আশা করব, দেশবাসীর স্বার্থে ভারত সঠিক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবে ।"
হোয়াইট হাউজ়ের প্রেস পুলের সঙ্গে সফরকারী সাংবাদিকরা যখন ট্রাম্পকে দিল্লির পরিস্থিতি এবং মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করেন তখন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করে ট্রাম্প মোদিরই পক্ষ নিয়ে বলেন, "মোদি ধার্মিক অথচ বলিষ্ঠ নেতা ।" একইসঙ্গে আরও যোগ করেন যে, ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নির্দিষ্টভাবে "মুসলিম এবং খ্রিস্ট-ধর্মাবলম্বীদের" নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে । ট্রাম্প বলেন, "আমরা অবশ্যই ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছি । আমি বলব যে, প্রধানমন্ত্রী এককথায় অসাধারণ । তিনি আমায় জানিয়েছেন যে, তিনি চান, দেশের প্রতিটি মানুষ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করুক । তিনি আমায় বলেছেন যে, ভারতে যাতে বৃহৎ এবং উদারপন্থী ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকে তার জন্য ওঁরা অনেক পরিশ্রম করেছেন । আমরা যদি পিছনে তাকিয়ে দেখি বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের পরিস্থিতি বিচার করি তাহলে বলতেই হয়, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে সত্যিই ওঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন ।"
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই নির্দেশিকা যা দূতাবাসের সাধারণ নিরাপত্তা প্রোটোকলের আওতাতেই পড়ে, জারি করা হয় অ্যামেরিকার ফার্স্ট ফ্যামিলি দিল্লি থেকে DC উড়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পরই । তা-ও আবার সেদিন, যেদিন হিংসা বিধ্বস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল । যে সব মার্কিন নাগরিক ভারতেই বসবাস করেন বা কাজের সূত্রে কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এসেছেন, তাঁদের ওই নির্দেশিকায় সেই সব জায়গা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে যেখানে প্রচণ্ড ট্র্যাফিক রয়েছে বা রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা যেখানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “শান্ত, ধীর–স্থির থাকুন । চারপাশে যা ঘটছে তা নিয়ে সতর্ক থাকুন । খবর পেতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে চোখ রাখুন । স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম-নির্দেশ মেনে চলুন ।"