হায়দরাবাদ, 28 জুলাই : কোরোনা চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ উঠল । 14 দিনে খরচ বাবদ 18 লাখ 22 হাজার টাকার বিল করেছে ওই বেসরকারি হাসপাতাল । কয়েকদিন আগেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে সেখানে ভরতি হয়েছিলেন এক কোরোনা আক্রান্ত । তাঁকে ICU-তে দু'দিন রাখা হয়েছিল ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে দশ লাখ টাকা হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে । তারপর যখন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয় তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পুরো বিল মেটানোর কথা বলা হয় । পরিবার সেই মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে হাসপাতালের বিল মেটায় ।
বেশিরভাগ রোগীরই ব্যক্তিগত জীবন বিমা রয়েছে । তা সত্ত্বেও বেডের জন্য নগদ অর্থ জমা করতে হচ্ছে । সাধারণত কর্পোরেট হাসপাতালগুলিতে ভরতির জন্য প্রথমে এক লাখ টাকা জমা করতে হয় । তারপর চিকিৎসার উপর নির্ভর করে হাসপাতালের বিল। প্রতিদিন বিলের পরিমাণ 50 হাজার থেকে শুরু করে 1 লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
রোগীর মৃত্যু হলে যতক্ষণ না পর্যন্ত হাসপাতালের বিল মেটানো হয় ততক্ষণ নাকি দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হয় না। এমন অভিযোগও করেছেন একাধিক রোগীর পরিবারের সদস্যরা ।
তেলাঙ্গানা সরকার ইতিমধ্যে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে । কোরোনা চিকিৎসার জন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতালে বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা অবিলম্বে এই 91541-70960 নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে । নম্বরটি চালু করার প্রথম 11 দিনের মধ্যে প্রায় খুব কম করে 100টি অভিযোগ আসে । বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগই বেশি এসেছে ।
কৃত্রিমভাবে বেডের ঘাটতি ?
রাজ্য সরকার যখন ঘোষণা করেছে যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রচুর বেড খালি রয়েছে তখন মধ্যবিত্তরাও কোরোনা সংক্রমিত হলে সেখানে ভরতি হতে পারেন । তবে সে ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে কৃত্রিমভাবে বেড সংখ্যার ঘাটতি দেখানো হয়েছে । অভিযোগ, হাসপাতালগুলি ভরতির প্রথম দিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা আদায় করছে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ।
সরকারের তরফে কী ঘোষণা করা হয়েছে ?
- তেলাঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে কোরোনা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খরচ বাবদ তিনটি স্ল্যাবের ঘোষণা করা হয়েছে । আইসোলেশন ( প্রতিদিন 4000 টাকা), ICU ( প্রতিদিন 7,500 টাকা), ভেন্টিলেটরসহ ICU ( প্রতিদিন 9000 টাকা) ।
- উপরিউক্ত নির্ধারিত খরচে রোগীর রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, ECG, 2D echo, এক্সরে, HIV, হেপাটাইটিস B, C পরীক্ষা করাতে হবে । সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে ।
- তবে কিছু ব্যয়বহুল ওষুধ, ডায়াগনস্টিক টেস্ট, PPE কিট এবং N95 মাস্কের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ।
- সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলিতে 31 ডিসেম্বর 2019 পর্যন্ত যে নির্ধারিত রেট নেওয়া হতো সেই রেট নিতে হবে ।
- কোরোনা পরীক্ষা করার জন্য বেসরকারি ল্যাবগুলিতেও স্ল্যাব নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার । 2,200 টাকা নেওয়া হবে যদি ব্যক্তি ল্যাবে এসে থাকেন । বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে 2,800 টাকা দিতে হবে ।
- এই নির্দেশিকা রাজ্যের বেশিরভাগ হাসপাতালগুলি মেনে চলছে না । যদি কেউ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভরতি হয় তাকে লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে । অভিযোগ উঠছে সরকারি নির্দেশিকা মানা হচ্ছে না হাসপাতালগুলিতে ।
কয়েকটি অভিযোগ সরকারের কাছে পৌঁছেছে-
- হায়দরাবাদের ECL এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা । ভরতি হওয়ার আগে কোরোনা রোগীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা চেয়েছিল হাসপাতাল । চারদিন চিকিৎসার পর রোগীর মৃত্যু হয় । দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সময় চার লাখ টাকা দাবি করে ওই হাসপাতাল । স্বাস্থ্য দপ্তর জানতে পেরে ওই হাসপাতালটিকে কোরোনা চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি ।
- কুকাটপল্লির এক বাসিন্দা কিডনির সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন । সেখানে তাঁর কোরোনা পরীক্ষা করা হয় । রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । তারপর তাঁকে মাঝরাতে ভরতি নেওয়া হয় । পরদিন সকালে ছেড়ে দেওয়া হয় । মাত্র 6 ঘন্টায় তাঁর বিল বাবদ 80 হাজার টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । রোগীর পরিজনরা জানিয়েছেন, রোগীকে কোনও ওষুধ, ইনজেকশন কিছুই দেওয়া হয়নি ।
- বানজারা হিলসের এক বাসিন্দা হার্টের ভাল্ব রিপ্লেসমেন্টের জন্য সার্জারি করেন একটি কর্পোরেট হাসপাতালে । তাঁর কোরোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় এক কর্পোরেট হাসপাতালে ভরতি করা হয় । পরে তাঁর ফের কোরোনা পরীক্ষা হয় । রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । সেখানে একদিনে বিল হয় 70 হাজার টাকা ।
- এক রোগীর বিলে PPE কিটের জন্য প্রতিদিন 15 হাজার টাকা এবং MRI-এর জন্য 24 হাজার টাকা নিয়েছে হাসপাতাল । চিকিৎসকের ফি বাবদ ছিল 2.32 লাখ টাকা এবং 52.23 লাখ টাকার ওষুধ রয়েছে । মাধাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিল না দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে ।
- ইতিমধ্যে বানজারা হিলসের আরও একটি কর্পোরেট হাসপাতাল RT-PCR-এর মাধ্যমে কোরোনা পরীক্ষার জন্য 12,000 টাকা ধার্য করে । এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় এবং এর জন্য পৃথক চার্জ আদায় করা হয় ।