দিল্লি, 1 অগাস্ট : রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল মোটর ভেহিকলস (সংশোধনী) বিল ৷ এরপর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের অনুমোদন মিললেই আরও কঠোর হবে দেশের ট্র্যাফিক আইন ৷
পথ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন কড়া শাস্তির দাওয়াই ৷ সেজন্য 2014 সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর 1988 সালের মোটর ভেহিকলস আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনে মোদি সরকার ৷ 2017 সালে তা লোকসভাতে পেশ করা হয় ৷ সংসদের নিম্নকক্ষে সংশোধনী বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় আটকে যায় ৷ 16 তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সংশোধনী বিলটি আর বিলে পরিণত হয়নি ৷
দ্বিতীয়বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে ফের লোকসভায় মোটর ভেহিকলস (সংশোধনী) বিলটি পেশ করেন সড়ক পরিবহন ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি । যদিও বিলটির বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধীরা ৷ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরি, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মিত্ররা দাবি করেন, এর মাধ্যমে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে ৷ তাতে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বেগ পেতে হয়নি ৷ বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও 23 জুলাই লোকসভায় সংশোধনী বিলটি পাশ হয়ে যায় ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর : ট্র্যাফিক আইন ভাঙলেই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে
এরপর গতকাল রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করা হয় ৷ সেখানেও রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে সরব হয় বিরোধীরা ৷ সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রী ৷ রাজ্যের রাজস্বের এক কানাকড়িও কেন্দ্র নেবে না বলে আশ্বস্ত করেন ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর : উন্নত পরিষেবা পেতে হলে টোল ট্যাক্স দিতে হবে : নীতিন গড়করি
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, "যারা ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করে এই বিল তাদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করবে ৷ কারণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে ৷ " পাশাপাশি, তিনি জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া এখন থেকে কম্পিউটিরাইজ়ড করা হবে ৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি সাংসদ বা মন্ত্রীও হোন অনলাইন টেস্ট পাশ করলে তবেই লাইসেন্স পাবেন ৷ যদিও কংগ্রেস অভিযোগ করে, লোকসভায় যে সংশোধনী বিলটি পাশ করা হয়েছে রাজ্যসভায় সেটা পেশ করা হয়নি ৷ বিরোধীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সংসদের উচ্চকক্ষে সহজেই পাশ হয়ে যায় সংশোধনী বিলটি ৷ বিলের পক্ষে পড়ে 108 টি ভোট ৷ বিপক্ষে মাত্র 13 টি ভোট পড়ে ৷ তবে বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেলেও কিছু ছাপাগত ত্রুটির কারণে সেটি ফের লোকসভায় ফেরত পাঠানো হবে ৷
প্রস্তাবিত এই সংশোধনীতে কী কী রয়েছে -
- অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী গাড়িগুলিকে রাস্তা না দিলে 10 হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ।
- বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা এক হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে ৷
- দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ৷
- বিমা ছাড়াই গাড়ি চালালে 2 হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে ৷ আর হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে এক হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স তিন মাসের বাতিল করে দেওয়া হবে ৷
- নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাড়ি চালালে 10 হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ৷ ড্রাইভিং লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে ৷
- ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে আগে 100 টাকা জরিমানা করা হত ৷ সংশোধনী বিলে তা পাঁচ গুণ বাড়িয়ে 500 টাকা করা হয়েছে ৷ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করলে 500 টাকার পরিবর্তে ন্যূনতম 2 হাজার টাকার মাসুল গুনতে হবে ৷
- অপ্রাপ্তবয়স্করা ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে তাদের অভিভাবকরা দোষী বলে বিবেচিত হবে ৷ 25 হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে ৷ আর মোটর ভেহিকেলের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করা হবে ৷
- লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালালে 5 হাজার টাকা জরিমানা করা হবে ৷
- মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে 10 হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ৷
- গাড়িতে ওভারলোডিংয়ের জন্য 20 হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ৷
- পথ দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তা করতে যাঁরা এগিয়ে আসবেন তাঁদের কোনওরকম হয়রানির মধ্যে যাতে পড়তে না হয় তাও সুনিশ্চিত করা হয়েছে ।
- গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃতদের 5 লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের 2.5 লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷