মুম্বই, 10 জুলাই : একের পর এক মন্ত্রীদের পদত্যাগে টালমাটাল কর্নাটক সরকার। সংকট গড়াল সুপ্রিম কোর্টে । বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস ও JDS বিধায়করা কর্নাটকের স্পিকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন শীর্ষ আদালতে । বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই হয়ে একেবারে সুপ্রিম কোর্টের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল কর্নাটকের বচসা। স্পিকার রমেশ কুমারের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক কাজের অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ বিধায়করা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে শুনানি হতে পারে।
আজ সকালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি মুম্বইয়ের হোটেলেও । বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলেন ডিকে শিবকুমার। মুম্বইয়ের যে হোটেলে বিধায়করা রয়েছেন সেখানে পৌঁছাতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তিনি ।
অন্যদিকে, কর্নাটক বিধানসভার বাইরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও BJP নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে অন্য BJP নেতারা বিক্ষোভ দেখান। ইয়েদুরাপ্পা বলেন, "এই জোট বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে । এই কারণেই আমরা অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর পদত্যাগ দাবি করছি ।"
রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। ইয়েদুরাপ্পা বলেন, “নির্দল বিধায়ক-সহ ১৫ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে জোট সরকারের বিধায়ক সংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১০৩-এ। সেখানে আমাদের রয়েছে ১০৭-১০৮। রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানিয়েছি, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করতে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার এখন কোনও নৈতিক অধিকার নেই কুমারস্বামীর।” অন্যদিকে , কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া অভিযোগ জানান, তাঁকে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ বাধা দিয়েছে ।
অন্যদিকে, নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে মুম্বই পুলিশকে আগেই চিঠি দিয়েছিলেন বিধায়করা। সেই মতো আজ সকাল থেকেই মুম্বইয়ের হোটেলের সামনে কড়া নিরাপত্তা ছিল। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা যারা করছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কংগ্রেসের শিবকুমার। কিন্তু হোটেলে পৌঁছতেই যে এমন বাধার মুখে পড়তে হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি তিনি।
শিবকুমারকে পুলিশ বাধা দিলে তিনি বলেন, হোটেলে তাঁর ঘর বুক করা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। সারা দিন তিনি অপেক্ষা করবেন বলেও উল্লেখ করেন কংগ্রেস নেতা । হোটেলে তাঁর কয়েক জন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে কফি খাবেন, পুলিশকে এই কথা বলেও বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ পালটা তাঁকে জানিয়ে দেয়, কিছুতেই তাঁকে হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হবে না, প্রয়োজনে পাশেই একটা গেস্ট হাউজ়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে তাঁকে।
পাশাপাশি পুলিশ শিবকুমারকে জানিয়েছে, বিধায়করা যদি অনুমতি দেন, তবেই তাঁকে হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হবে। তাঁকে দেখে গো ব্যাক স্লোগানও তোলা হয়। বিক্ষুব্ধ বিধায়ক বি বাসবরাজ বলেন, শিবকুমারকে অবমাননা করার কোনওরকম ইচ্ছেই তাঁদের নেই । তবে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা একদিকে, আর অন্যদিকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। তাই সেই শ্রদ্ধার ভিত্তিতেই শিবকুমারের বোঝা উচিত কেন আজ তাঁরা দেখা করতে পারবেন না। অন্যদিকে, কর্নাটকের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা শিবকুমারের সঙ্গে দেখা করেন। শিবকুমার, দেওরা-সহ কয়েকজন নেতাকে আটক করে পুলিশ ।
13 জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক মুম্বইয়ে রয়েছেন শনিবার ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই। মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী, শিবকুমার, অন্যান্য কংগ্রেস ও JDS নেতাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সোমবার রাতেই পুলিশকে চিঠি লেখেন বিক্ষুব্ধ বিধায়করা। কুমরাস্বামী এবং শিবকুমার দলবল নিয়ে হোটেলে জোর করে ঢুকে পড়তে পারেন—এমন আশঙ্কার কথা লিখে মুম্বই পুলিশ প্রধানকে চিঠি দেন ১০ বিধায়ক। সেই চিঠি পাওয়ার পরই ১০০ জন পুলিশ হোটেলের বাইরে মোতায়েন করা হয়।
মঙ্গলবার ইস্তফাপত্রগুলি দেখে স্পিকার রমেশ কুমার জানান, আটটি ইস্তফাপত্র "নট ইন অর্ডার"। এর ভিত্তিতে জোট সরকার খানিকটা অক্সিজেন পেলেও মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর পদত্যাগ চেয়ে প্রতিবাদ চলবেই, জানিয়েছে BJP নেতৃত্ব ।