দিল্লি, 12 নভেম্বর : ভয়ঙ্কর জল সংকটের সামনে আমরা । পানীয় জলের ভান্ডার দুর্লভ হয়ে উঠছে বেশ কয়েকটি কারণের জন্য । আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করি তাহলে পরিস্থিতি জটিল আকার নেবে । এবছর গরমে তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে কী পরিমাণ জল কষ্ট হয়েছিল তা সকলেই জানেন । যদি সরকার জল সংরক্ষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না করে, তা হলে 2022 সালের মধ্যে দেশজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে, জল-যুদ্ধ তৈরি হয়ে যাবে । জল সম্পদ মন্ত্রকের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, "এই সমস্যার জন্য সরকার এবং সাধারণ মানুষ সমানভাবে দায়ি ।" তাঁর আরও দাবি, ভারতীয়রা সঠিক কথা বললেও সঠিক কাজ করেন না । শেখাওয়াতের অভিযোগ, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুও শীঘ্রই কেপ টাউনে পরিণত হবে ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হচ্ছে এই শুকনো ভাব । 2017-18 সালে জল সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে 40 লাখ পরিবার জল পায়নি, এটা গোটা বিশ্বের কাছে একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার হয়ে রয়েছে । জল সংকটের কারণে শহরের নাগরিকরা প্রতিদিন মাথাপিছু 50 লিটার জল ব্যবহার করে থাকেন, যা একজন মার্কিন নাগরিক শুধুমাত্র স্নান করতে ব্যবহার করেন । জামা-কাপড় না কেচে যাঁরা জল সংরক্ষণ করেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল । জল খরচ কামানোর জন্য সরকার রেস্তরাঁ, দোকান, সুলভ শৌচালয়গুলিকে অনুরোধ জানিয়েছিল । মাসের শেষ দিনে পৌরসভা জল বণ্টন বন্ধ রাখার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল । জল অপচয় হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য বাড়ি বাড়ি নজরদারি চালাচ্ছিল জল-পুলিশ, জল অপচয় দেখতে পেলেই কঠোর জরিমানা করা হতো ।
ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় উষ্ণতা সাধারণের থেকে বেশ কিছুটা বেড়ে গেলে, সেই জলবায়ুকে এল নিনো বলে । এই এল নিনোর প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ে এবং স্থলভাগে মেঘের সঞ্চার হয় । যার প্রভাব দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকায় । জলাধার কোনওদিনই জলের প্রয়োজন মেটাতে পারে না । একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেপ টাউনে জল সংকটের কথা । জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে জলের চাহিদা মেটানো অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না । জলবায়ু পরিবর্তনের এটা একটা অন্যতম ফল ।
দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার একটি বন্দর শহর কেপ টাউন । বিশ্বের অন্যতম বড় শহর এটি । এখানকার এক জেলে নেলসন ম্যান্ডেলা বন্দী ছিলেন । প্রতি বছর 20 লাখ পর্যটক এই শহরে ঘুরতে আসেন । পর্যটন এই শহরের আয়ের প্রধান উৎস, প্রায় 330 কোটি মার্কিন ডলার । পাঁচতারা হোটেল, সুন্দর সমুদ্র সৈকত, অসাধারণ বন্দর, দ্বীপের মধ্যে রিসর্টের পাশাপাশি সাইকেল রেস, ক্রিকেট, রাগবির মতো খেলা পর্যটকদের বিপুলভাবে আকর্ষণ করে । কিন্তু সমস্যা জল সংকট, সকল ঐশ্বর্যই সেখানে ব্যর্থ । জল সংকট পর্যটন শিল্পে থাবা বসিয়েছে, আঘাত এনেছে অর্থনীতিতেও । জল সংকটের জন্য উন্নয়ন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ।
কেপ টাউনের পরিস্থিতি গোটা দেশের কাছে একটি সতর্ক বার্তা । ব্রাজিলের সাও পাওলো জল সংরক্ষণের কিনারা করে ফেলেছে, বেঙ্গালুরু, বেজিং, কায়রো ও মস্কো এখনও তেমন কিছু ভালো করতে পারেনি । চেন্নাইয়ের জল সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত । আজকের দিনেও বাসিন্দারা জলের ট্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল । স্বাধীনতার সময় মাথাপিছু জল পাওয়া যেত 5,000 কিউবিক মিটার, যা 2018 সালে কমে দাঁড়িয়েছে 1540-তে । উন্নয়নের নামে আমরা গাছ কাটছি, পুকুর বুজিয়ে দিচ্ছি । বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে বৃষ্টি । সঠিক সময় বৃষ্টি না হওয়ায় বৃষ্টির জল ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না । যার ভয়ঙ্কর পরিণতি ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরের হ্রাস পাওয়া । কাকাটিয়া এবং ভাগীরত্রা প্রকল্প নিয়ে তেলঙ্গানা সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ করার চেষ্টা করছে ।
পৃথিবীর 70 শতাংশ জলের মধ্যে মাত্র 3 শতাংশ স্বচ্ছ জল । বিশ্বের জনসংখ্যা 800 কোটি । কমপক্ষে এক কোটি মানুষ বাস করেন জলের পর্যাপ্ত জোগান ছাড়া । 270 কোটি মানুষ সংরক্ষিত জল ব্যবহার করে থাকেন । বিশ্বের 500টি শহর, যার মধ্যে ভারতের বেশ কয়েকটি শহরও আছে, যারা জল সংকটের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে । প্রতি বছরই বৃষ্টির পরিমাণ কমছে । স্বাভাবিক ভাবেই কৃষির উৎপাদন বাধা পাচ্ছে । নদী নর্দমায় পরিণত হচ্ছে । যার ফেলে শুকিয়ে যাচ্ছে লেক । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জল সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে । প্রতিটি নাগরিককে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে ।