বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, মে মাস ভারতের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ । এই মাসই সিদ্ধান্ত নেবে ভারত জিতবে না প্যানডেমিক কোরোনার বিরুদ্ধে দেশের যুদ্ধ নিশ্চিত হবে । নীতি আয়োগের পরিসংখ্যান অনুসারে, 3 মে লকডাউন উঠলে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা চলতি মাসের 15 তারিখের মধ্যে 65 হাজার হয়ে যেত । যা 15 আগস্টের মধ্যে 2.7 কোটিতে পৌঁছে যেত । কোরোনার জেরে দেশের জনজীবন স্তব্ধ । অর্থনীতিতেও ক্ষতি হচ্ছে । তারপরও কেন্দ্রীয় সরকার কোরোনা মোকাবিলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । প্রথমটা, সোমবার থেকে ফের দুই সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের সম্প্রসারণ এবং রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জ়োনগুলির জন্য নির্দেশিকা জারি করা । দ্বিতীয়টি হল, ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের কথা ভেবে, তাঁদের দাবিগুলি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে নিজেদের রাজ্যে ফেরানো ।
এক্ষেত্রে কনটেনমেন্ট জ়োন বাদে বাকি এলাকায়, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা কম, সেখানে বিপণন ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমতি দিলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বস্তি পাবে রাজ্য সরকার । এটা খানিকটা হলেও ভরসা যোগাচ্ছে। দেশের রেড জ়োনের সংখ্যা 15 এপ্রিল থেকে 1 মে-র মধ্যে 170 থেকে কমে 130 হয়েছে । কিন্তু অরেঞ্জ জ়োনগুলির সংখ্যা আবার বেড়ে গেছে । এই 284 অরেঞ্জ জ়োন ইঙ্গিত দিচ্ছে, কোরোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে । গত কয়েকদিন প্রতিদিন গড়ে এক হাজারে বাড়ছিল নতুন সংক্রমণের সংখ্যা । কিন্তু গত কয়েকদিনে তা দু'হাজার ছাড়িয়েছে । সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ভারতে । যা প্রত্য়ক্ষ করা যায়নি ইট্যালি, স্পেন বা অ্যামেরিকার মতো দেশে । সংক্রমণের হার কমাতে ভারতে এখন প্রতিদিন 75 হাজার টেস্ট দরকার । প্রয়োজন 419টি ল্য়াবও । কিছুটা শিথিলতার সঙ্গে দেশের শর্তসাপেক্ষ লকডাউন সরকারের আন্তরিক ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে । এর অন্তর্নিহিত একটি বার্তা হল, প্রত্যেকে নাগরিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে আচরণ করবে ।
দেশের অর্থনীতিতে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে । GDP-র 10 শতাংশই তাঁদের উপার্জনের মাধ্যমে আসে । এই শ্রমিকরা তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যান । এই শ্রমিকদের মাধ্যমে গ্রামের 9.99 কোটি পরিবার এবং শহরে 3.56 কোটি পরিবার চলে । গত 42 দিন ধরে লকডাউন তাঁদের জন্য আক্ষরিক অর্থে খুবই অপ্রত্যাশিত । এভাবে এতদিন বিনা কাজে, বিনা রোজগারে, পরিবার ছেড়ে বাইরে পড়ে আছেন তাঁরা । রয়েছে পরিবার ও সন্তানের চিন্তাও । তাঁদের যন্ত্রণা প্রকাশের কোনও ভাষা নেই ।
মহারাষ্ট্র, কেরালা, ছত্তিশগড়ের পাশাপাশি বিহার, পঞ্জাব এবং তেলাঙ্গানার অনুরোধে কেন্দ্রীয় সরকার ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে । তাঁদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । তবে, এই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে । তবে একসঙ্গে লাখেরও বেশি এমন শ্রমিককে ফেরানোয় কোরোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নানদেদ গুরুদ্বার থেকে তীর্থযাত্রীদের রাজ্যে ফেরায় পঞ্জাব । সেই তীর্থযাত্রীদের মধ্যেই অনেক কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায় । এখন পঞ্জাবে তাঁদের জন্যই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে । বিহারে 20 লাখ ভিনরাজ্যের শ্রমিক বাড়ি ফেরার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন । এত লোকের একসঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা পুরোটাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বের । সমস্ত পদক্ষেপ ঠিকমতো করা নাহলে, এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকবে এবং দেশের জন্য যা মারাত্মক হিসেবে প্রমাণিত হবে ।