দিল্লি, 1 জুন : তিনি সমুদ্র হয়েই ফিরলেন । দায়িত্ব বুঝে নিলেন অমিত শাহ ।
গুজরাতের পর এবার দিল্লি । পথ চলা শুরু হল মোদি-শাহ জুটির । শপথ নিয়েছিলেন শুক্রবারই । আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে দায়িত্ব বুঝে নিলেন অমিত শাহ । একাধিক চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে শুরু হল শাহর পথ চলা । প্রথম অবশ্যই কাশ্মীর । উত্তরসূরি রাজনাথ সিংয়ের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা অমিত শাহ কীভাবে কাশ্মীরের জঙ্গি কার্যকলাপ দমন করবেন এটাই এখন প্রধান প্রশ্ন । রাজনাথ ছিলেন আলোচনায় বিশ্বাসী । কিন্তু, অমিতের চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা । এর সঙ্গে রয়েছে 370 ধারা ও 55 (A) ধারা বিলোপের দাবি প্রসঙ্গে কী অবস্থান নেয় সেটাও দেখার । কারণ, বিপুল জয়ের পর সংঘ পরিবার এই দুটি ধারা নিয়ে BJP-র উপর চাপ বাড়ানোর পথেই হেঁটেছেন । স্বাভাবিকভাবেই সংঘের সঙ্গে সংঘর্ষ না সমঝোতা কোন পথে হাঁটবেন অমিত শাহ ? মন্ত্রকের দায়িত্ব বুঝে নিয়েই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহ । প্রধানমন্ত্রী তাঁর উপর ভরসা রেখেছেন বলে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন ।
অমিত শাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর আরও যে প্রশ্নটি তীব্র হয়েছে সেটি হল বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক । এতদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সামলে এসেছেন রাজনাথ সিং । যাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক সর্বজনবিদিত । এমন কী, মোদির বিকল্প হিসেবে রাজনাথই ছিল মমতার পছন্দের । সময় পালটেছে । অমিত শাহর সঙ্গে কিন্তু মমতার সেই মধুর সম্পর্ক নেই । এতদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মমতার অন্যতম প্রধান অভিযোগ ছিল রাজ্যের নিজস্ব বিষয়ে হস্তক্ষেপের । বিষয়টি অমিত শাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর আরও বাড়তে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের ।
সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ এখন নির্মলা সীতারমনের কাছে । প্রথম দফার মোদি মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় ঘোষণা ছিল নোটবাতিল । যা নিয়ে একাধিক বির্তকের মধ্যে পড়তে হয়েছিল অরুণ জেটলিকে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিরোধী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে বারবার আসরে নামতে হয়েছিল তাঁকে । নির্মলা যখন প্রথম পর্বে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন তখন তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল রাফাল ইশু । নিজের সাধ্যমত চেষ্টাও করেছিলেন নির্মলা । এবার নোটবাতিলের পাশাপাশি বাজেট বির্তকও রয়েছে । মাত্র একমাসের একটু বেশি সময় হাতে পাচ্ছেন নির্মলা । পূর্ণ সময়ে প্রথম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে মোদির আশা কতটা পূরণ করতে পারবেন নির্মলা ? দেশের আর্থিক অবস্থাও এই মুহূর্তে খুব একটা মজবুত নয় । বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে আর্থিক ক্ষেত্রে দেশের ভগ্ন চিত্র । আগামীদিনে দেশের অর্থনীতিকে সঠিক দিশা দেওয়াই নির্মলার কাছে একমাত্র লক্ষ্য ।
মন্ত্রিসভার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে রাজনাথ সিং । প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে প্রথমেই সামলাতে হবে রাফাল-হানা । লোকসভা ভোটের আগে যে ইশুতে কিছুটা হলেও মোদিকে চাপে ফেলেছিলেন রাহুল । সন্দেহ নেই বিরোধী মর্যাদা হারালেও এই রাফালই এখন রাহুলের একমাত্র তুরুপের তাস । কিছুতেই এই অস্ত্র হাতছাড়া করতে চাইবেন না কংগ্রেস সভাপতি । কীভাবে সামলাবেন রাজনাথ ?
আজ দায়িত্ব বুঝে নেন নরেন্দ্র মোদির অন্যতম কাছের পীযূষ গোয়েল । তাঁর কাছেও আগামীদিনটা মোটেই সুখের নয় । প্রথম সমস্যাই চাকরি । রেলমন্ত্রকে চাকরির স্বচ্ছতা আনতে হবে । গত মন্ত্রিসভায় একাধিক রেল দুর্ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল মোদি সরকারকে । নিজের পছন্দের পীযূষকে এই মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী । পীযূষ কি পারবেন ? আগামী বাজেটের আগে ঘর গোছানোর কাজটা করতেই হবে পীযূষকে ।
অর্থাৎ বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মোদি । স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে প্রত্যাশা । নিজের মন্ত্রিসভায় 'বিগ ফোর'কে পছন্দমতো সাজিয়েছেন তিনি । অতি ঘনিষ্ঠদের এখানে দায়িত্ব দিয়েছেন । মন্ত্রিসভায় 'ম্যান-2' হয়েছেন অমিত শাহ । যিনি জেলবন্দী দশা থেকে মুক্তির পর কথা দিয়েছিলেন সমুদ্র হয়ে ফিরবেন । ফিরলেনও তাই । আর অন্যদিকে, বিরোধীরাও যে আক্রমণ থেকে পিছপা হবে না তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে । বিরোধী আক্রমণকে সামলে না উড়িয়ে দিয়ে পথ চলবে নতুন সরকার ? প্রশ্ন-জল্পনা এখন সেদিকেই ।