প্রতিরক্ষা সচিবের (উৎপাদন) নেতৃত্বে অন্তত 15 জন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিক এবং ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রের কিছুু কর্তাকে নিয়ে গঠিত প্রতিনিধি দল রাশিয়ায় ARMY 2020-তে অস্ত্রশস্ত্র এবং সেনা সরঞ্জাম সরেজমিনে দেখতে এবং কিনতে পৌঁছেছে । পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য, রুশ প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যৌথস্তরে অংশীদারিত্বের নতুন নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া । রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে আয়োজিত ARMY 2020 হল আদপে রুশ সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী ৷ যেখানে অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শন করা হচ্ছে যাতে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা ক্রয় করা যায় ।
তবে ভারতের তরফে অস্ত্রের এই অন্বেষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । বিশেষ করে গত মে মাস থেকে উত্তর সিকিমে একবার এবং পূর্ব লাদাখে একাধিকবার ভারত এবং চিনা সেনার মধ্যে যে বিপজ্জনক সংঘর্ষ হয়েছিল তার নিরিখে ৷ পাশাপাশি সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল গত 15 জুন গালওয়ানে ৷ যেখানে ভারতের অন্তত 20 জন জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন । যদিও চিনের তরফে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি । ভারত-চিন সম্পর্কের এই কুৎসিত পতনের জেরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জরুরি ভিত্তিতে সমরাস্ত্র সংগ্রহে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে কারণ দেশের সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার উপপ্রধানই এই বিষয়ে কড়া নজর দিয়েছেন ।
100-র বেশি চুক্তি, যার প্রতে্যকটির ঊর্ধসীমা হল 500 কোটি ৷ চলতি অর্থবর্ষে সীমান্ত সংকটের জেরে ইতিমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য প্রস্তাবিত আছে । এর আগের বছরগুলিতে এই সময় যার সংখ্যা থাকে বড়জোর 12 থেকে 15 । প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (LAC) দু’পাশে অন্তত 100,000 সেনাকর্মী এবং বিপুল সমরাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে । পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে দু’তরফের সেনাই দ্রুতগতিতে শীতকালীন অধিবাসের আয়োজন করছে ৷ যা হিমালয়ের এই উচ্চ পার্বত্য এলাকার নিরিখে অত্যন্ত কষ্টকর এবং অত্যন্ত প্রতিকূল ।
মঙ্গলবার রাতেই যেখানে ভারতীয় আধিকারিকদের নয়াদিল্লিতে ফিরে যাওয়ার কথা সেখানে শেষের কিছু দিন তাঁদের অত্যন্ত ব্যস্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে । কারণ তাঁরা রুশ সরকারের আধিকারিক এবং প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্রের নেতাদের সঙ্গে পরপর বৈঠক করতে ব্যস্ত ছিলেন । সচিব এবং শিল্পক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিরা ছাড়াও ভারতীয় প্রতিনিধিদের তালিকায় ছিলেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO), অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (OFB) এবং বিভিন্ন DPSU যেমন গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেড প্রভৃতির আধিকারিকরা ।
প্রতিনিধিদলের এক সদস্য ETV ভারতকে নাম না জানানোর শর্তে জানিয়েছেন, "রুশ কর্তারা মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং এতেই ধরা পড়েছে ভারতের সঙ্গে তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হতে কতটা আগ্রহী । যৌথস্তরে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে তাঁরা চান ব্রহ্মোস মিজ়াইল অথবা সুখোই 30-MKI-এর মতো সফল সমরাস্ত্র উৎপাদনের পথে হাঁটতে, যা এখন ভারতেই তৈরি হচ্ছে ।"
AK 203 অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ভারত-রাশিয়া চুক্তির ক্ষেত্রে কতদূর কী কথা হল, তা নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করলেও ওই আধিকারিক এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে প্রথমে আমদানি এবং পরে স্থানীয়ভাবে AK 203 অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি করার বিষয়টিও আলোচনার অংশ ছিল । ওই আধিকারিক এও নিশ্চিত করেছেন যে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইরকুট কর্পোরেশনের (যারা সুখোই ফাইটার তৈরি করে) কর্তাদেরও বৈঠক হয়েছে ৷ আর ওই কর্তারা তাদের রপ্তানির জন্য প্রস্তুত বহু প্রতীক্ষিত সুখোই 57 ফিফথ জেনারেশন মাল্টিরোল ফাইটারও এই প্রথম সমরাস্ত্রের প্রদর্শনীতে এনেছেন ।
এখনও রুশ বায়ুসেনায় কাজে লাগানো হয়নি গুপ্তশত্রুঘাতক ক্ষমতাসম্পন্ন SU 57-কে ৷ তবে এর প্রথম ব্যবহার করবে রাশিয়ার ওয়েস্টার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট । বিশ্বজুড়ে US F-22 এবং F-35 এবং চিনা J-20 হল একমাত্র তিনটি পরিচিত গুপ্তশত্রুঘাতক ফাইটার যাদের সেনাবাহিনীতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে । SU-57 হল প্রথম রুশ ফাইটার ।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে চিন তাদের দুটি J-20 ফাইটার হোটান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে মোতায়েন করেছে ৷ যা LAC-এর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থিত চিনা বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলির মধ্যে অন্যতম । মনে করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে ফের খোলাখুলি সংঘর্ষ হলে এই অস্ত্রটি তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
-সঞ্জীবকুমার বড়ুুুয়া