পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

'রাজ্যের রাত্রি সাথী প্রকল্পে পুরুষদের থেকে 200 কদম পিছিয়ে পড়ব', উদ্বিগ্ন মহিলাকর্মীরা - RG KAR DOCTOR RAPE AND MURDER

RG KAR DOCTOR RAPE AND MURDER: আরজি কর-কাণ্ডের পর নারী সুরক্ষার কথা ভেবে রাজ্য সরকার যে রাত্রি সাথী প্রকল্প এনেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন স্বয়ং মহিলারাই ৷ উত্তর দিনাজপুরের মহিলা চিকিৎসক থেকে শুরু করে মহিলা অ্যাম্বুলেন্স চালক - সবারই মত, এই প্রকল্প হলে তাঁরা পুরুষদের থেকে 200 কদম পিছিয়ে পড়বেন ৷

ETV BHARAT
রাত্রি সাথী প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন মহিলাকর্মীরা (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 23, 2024, 7:30 PM IST

Updated : Aug 23, 2024, 11:07 PM IST

রায়গঞ্জ, 23 অগস্ট: আরজি কর মেডিক্যালে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় দেশ ৷ তিলোত্তমার নৃশংস পরিণতি রাজ্যে নারী নিরাপত্তায় নয়া প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ৷ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে অনড় চিকিৎসক পড়ুয়ারা ৷ এই পরিস্থিতিতে মহিলাদের সুরক্ষায় 'রাত্রি সাথী' প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার ৷ তবে এই প্রকল্প নিয়ে মহিলা কর্মীদের মধ্যেই নানা প্রশ্ন রয়েছে ৷

রাত্রি সাথী প্রকল্প (ইটিভি ভারত)

শুধু যে চিকিৎসক, নার্স কিংবা মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরাই মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকেন, এমন নয় ৷ সাফাইকর্মী, আশাকর্মী থেকে শুরু করে মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স চালকরাও মানুষকে সেই পরিষেবা দেন ৷ পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন সংগ্রাম চালান ৷ মাঠে ময়দানে কাজ করা এই নারীদের নিরাপত্তা কে দেবে ? রাত্রি সাথী প্রকল্পে তাঁরা কীভাবে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করতে পারবেন ? এই প্রশ্নে সরব মহিলা কর্মীরা ৷

9 অগস্টের সেই ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে ধরনায় বসে রয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ারা ৷ সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের কাজে যোগদানের আবেদন জানালেও সেই আর্জি তাঁরা এখনও কানে তোলেননি ৷ যদিও আরজি করের ঘটনার পর রাজ্য সরকার রাতে কাজ করা মহিলাদের জন্য ‘রাত্রি সাথী’ প্রকল্প চালু করেছে ৷

ওই প্রকল্পে বলা হয়েছে, রাতে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে ৷ মেয়েদের যতটা সম্ভব নাইট ডিউটি থেকে বিরত রাখা হবে ৷ রাতে মেয়েরা সংঘবদ্ধভাবে ডিউটি করবেন ৷ কিন্তু হাসপাতালগুলিতে রাতে মহিলা চিকিৎসকদের ডিউটি না-দিলে মানুষকে যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাবে কি ? সংঘবদ্ধভাবে ডিউটি করার ক্ষেত্রে কি জটিলতা তৈরি হবে না ? এমন নানা প্রশ্নে রাজ্য সরকারের নতুন এই প্রকল্প ঘিরে বিতর্কও দেখা দিয়েছে ৷

আরজি করের ঘটনার পর এসব প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই মনে ঘোরাঘুরি করছে সেলিনার ৷ পুরো নাম সেলিনা বেগম ৷ তিনি হেমতাবাদের একজন মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স চালক ৷ তাঁর কথায়, “2018 সালের জুলাই মাস থেকে আমি হেমতাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছি ৷ কোভিডের সময়ও মানুষকে দিনরাত পরিষেবা দিয়েছি ৷ কোভিড সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যেতাম ৷ সেখান থেকে বাড়িতেও ফিরিয়ে দিতাম ৷ তার জন্য অনেক পুরস্কারও পেয়েছি ৷ কিন্তু আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা দুশ্চিন্তায় ৷ সেখানে যাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে, তিনি একজন চিকিৎসক ৷ কর্মস্থলে তাঁরই যদি নিরাপত্তা না-থাকে, আমি তো গ্রামগঞ্জে গাড়ি নিয়ে যাই ৷ রাতেও রোগীদের আনতে যেতে হয় ৷ আমার নিরাপত্তা কোথায় ? এটা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে ৷ আমি চাই, আরজি করে নির্যাতিতা বিচার পান ৷"

রাজ্য সরকারের রাত্রি সাথী প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "আমাকে রাতবিরেতে রোগী আনতে যেতে হয় ৷ সেই ডাক এলে নিরাপত্তারক্ষী আসতে আসতে আমি রোগীর বাড়ি পৌঁছে যাব ৷ তাছাড়া আমার গাড়িতে নিরাপত্তারক্ষী বসবেন কোথায় ? আমাকে রাতে ডিউটি না-দিলে আমার সংসার কীভাবে চলবে তাও অজানা ৷ এখনও পর্যন্ত আমাকে সেভাবে রাতে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি ৷ শুধু ঝড়বৃষ্টির এক রাত ছাড়া ৷”

রায়গঞ্জ মেডিক্যালের চিকিৎসক ঐন্দ্রিলা ভট্টাচার্যও রাত্রি সাথী প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, “মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য এই প্রকল্প চালু হলে কিছু বলার নেই ৷ কিন্তু পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা মহিলারা এতে দুশো কদম পিছিয়ে পড়বেন ৷ আমাদের এই দাবি ছিল না ৷ আমাদের দাবি ছিল, মহিলারাও যাতে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করতে পারেন, তার জন্য যথাযথ সুরক্ষা দেওয়া হোক ৷ রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পুরুষদের উপর চাপ আরও বাড়বে ৷ তাঁদেরও তো পরিবার রয়েছে ৷ তাঁদেরও তো বিশ্রামের প্রয়োজন ৷ রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হয়ে যাবে ৷ আমি মনে করি, পুরুষ বা মহিলা, যেই হোক না কেন, যে জায়গাতেই হোক না কেন, তাঁদের নিরাপত্তার ভার সেই প্রতিষ্ঠানের নেওয়া উচিত৷”

একই বক্তব্য রায়গঞ্জ মেডিক্যালের আরেক চিকিৎসক বেল্লোরা দেববর্মারও ৷ তিনি বলছেন, “রাজ্যের নয়া এই সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি ৷ কিন্তু কোনও হাসপাতালে সংঘবদ্ধভাবে মেয়েদের ডিউটি করা সম্ভব নয় ৷ কারণ, একেকজন একেক বিভাগে কাজ করেন ৷ এই সিদ্ধান্তে রাতে কোনও জরুরি বিভাগের রোগী এলে মেয়েরা ওই রোগীর চিকিৎসা করবে না ৷ তাহলে তারা শিখবে কীভাবে ? মেয়েদের ডিউটি কমিয়ে দেওয়া নয়, সরকারের উচিত, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ৷”

Last Updated : Aug 23, 2024, 11:07 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details