কলকাতা, 20 নভেম্বর: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ও শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ বেশ কয়েকজনের জামিন নিয়ে ভিন্ন মত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের। ফলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহার জামিনের আবেদন ঝুলে রইল ৷
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মোট 9 জনের জামিন মঞ্জুর করলেও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় 5 জনের জামিন মঞ্জুর করেননি ৷ 4 জনের মঞ্জুর করেছেন। এরা হলেন কৌশিক ঘোষ, আলি শাহিদ ইমাম, চন্দন মণ্ডল, সুব্রত সামন্ত ৷ ফলে এরা সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেলেন৷ বাকি 5 জনের জন্য মামলা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতির কাছে ৷ গঠিত হবে তৃতীয় বেঞ্চ ৷ সেখানেই নির্ধারিত হবে পার্থ-সুবীরেশ-কল্যাণময়দের ভাগ্য ৷
সাংবাদিকদের মুখোমুখি আইনজীবী (ইটিভি ভারত) স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ- ডি, গ্রুপ-সি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে দুর্নীতির অভিযোগে 2022 সালে একে একে সিবিআই ও ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবিরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়রা ৷ দীর্ঘ 2 বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন তাঁরা । দীর্ঘদিন শুনানির পর মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপুর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ এই আধিকারিকরা কেউ পেশায় ছিলেন কলেজের অধ্যাপক, কেউ অধ্যক্ষ আবার কেউ শিক্ষা দফতরের কর্মী ৷ কিন্তু রাজ্যের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ দুর্নীতির বড়সড় চক্র সামনে আসে কলকাতা হাইকোর্টের তদন্তের নির্দেশের পর ৷ প্রথমে 2018 সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি ও গ্রুপ-সি তে কয়েকজন প্রার্থীকে প্যানেলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছিল।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশে পর পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির ঈঙ্গিত পায় সিবিআই ৷ পরে আর্থিক দেনদেনের ঘটনা সামনে আসায় তদন্ত যায় ইডি-র হাতেও । যদিও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য আধিকারিকদের অভিযোগ ছিল সিবিআই বা ইডি এতদিনে তদন্তে কি উদ্ধার করেছে ? তদন্তের নামে বছরের পর বছর এভাবে আটকে রাখা ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরোধী। যা ন্যায়ের পরিপন্থী। সিবিআই এঁদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করলে রাজ্যের অনুমতি না-মেলায় চার্জ গঠন করে এখনও বিচারপর্ব শুরু করতে পারেনি ৷ এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে কাজিয়া চলেছে সিবিআই আর রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিচারে অনুমতি না-দেওয়া নিয়ে ৷
কেন এতদিনেও অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিব কন্সেন্ট সংক্রান্ত পদক্ষেপ করেননি ৷ শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছিল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলাকারীদের তরফে বলার চেষ্টা করা হয়, জামিনের আবেদনকারীদের প্রায় সকলেই সিনিয়র সিটিজেন। আদালতের কটাক্ষ, "দুর্ভাগ্যক্রমে তারা সিনিয়র সিটিজেন আর প্রতারিতরা সকলেই যুবা !"
আইনজীবীরা সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কনসেন্ট আদায়ের ক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে না-পরায়। মামলাকারীদের আইনজীবীদের কাছে আদালতের পাল্টা প্রশ্ন," যদি না সরকার ধৃত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেমের ক্ষেত্রে সন্মতি দেয়, তাহলে আদালত বা সিবিআই কী করতে পারে ! আদালত নিজে থেকে কন্সেন্ট দেওয়ার কথা বলবে না," স্পষ্ট মত ছিল ডিভিশন বেঞ্চের।