কলকাতা, 25 নভেম্বর: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার জামিন পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'ঘনিষ্ঠ' অর্পিতা মুখোপাধ্যায় । প্রায় দু বছর চার মাস সংশোধনাগারে বন্দি থাকার পর জামিন পেলেন তিনি ৷ উল্লেখ্য, মায়ের মৃত্যু হওয়ায় প্যারোলে দু'দিনের জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন অর্পিতা ৷
এতদিন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায় । বর্তমানে তিনি প্যারোলে মুক্ত ছিলেন । আর এই প্যারোলে মুক্ত থাকাকালীনই তিনি জামিন পেলেন । 5 লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে সোমবার অর্পিতাকে জামিন দিল বিশেষ ইডি আদালত । প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের পর এবার জামিন পেলেন অর্পিতা ।
জামিন পেলেন অর্পিতা (নিজস্ব চিত্র) শর্ত হিসাবে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে অর্পিতাকে । কলকাতা পুলিশের আওতার বাইরে যাওয়া যাবে না । তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে তাঁকে । মামলার তদন্তকারী অফিসার (আইও) যখন ডাকবেন, তখনই তাঁকে দেখা করতে হবে । তথ্যপ্রমাণ ট্যাম্পার করা যাবে না । ইডির মামলায় জামিন পেয়েছেন অর্পিতা । যেহেতু অর্পিতার বিরুদ্ধে কোনও সিবিআইয়ের মামলা নেই, সেই জন্য অর্পিতার জেল মুক্তি হচ্ছে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে ।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 479 ধারার ন্যাচারাল জাস্টিস সুনিশ্চিত করতে বলেছে আদালত । এই ধারা অনুযায়ী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বা এই ধরনের অপরাধী যাঁদের বিরুদ্ধে মূলত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের সর্বোচ্চ 7 বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে । কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা যদি এই সময়ের এক তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যে তদন্তে কিছু প্রমাণ না করতে পারেন, তাহলে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করতে হবে । অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে 2 বছর 4 মাস ধরে সংশোধনাগারে রাখা হয়েছে । কিন্তু এতদিনেও ইডি তাঁর বিরুদ্ধে তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি ।সেই জন্যই এদিন আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে ।
দু'বছর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা । দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধারের পর অর্পিতার উত্তর 24 পরগনায় বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকেও উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর সোনার গয়না এবং কোটি কোটি টাকা । এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর তাঁর বান্ধবীকেও গ্রেফতার করা হয় । পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতার নামাঙ্কিত জমি উদ্ধার হয় । যেমন দক্ষিণ 24 পরগনা থেকে শুরু করে বীরভূমে 'অপা' নামের একাধিক রিসোর্টের হদিশ মেলে । এমনকি জীবনবিমার একাধিক নথিপত্রেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নমিনি হিসেবে নাম ছিল অর্পিতার । গ্রেফতারের পরে অবশ্য তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজের কাকা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন ।
পরে বেশ কয়েক দফায় অর্পিতাকে আদালতে পেশ করার সময় ক্যামেরার সামনে তিনি একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন । মূলত কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি ছিল, শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে একাধিক এজেন্টের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পরিবর্তে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । শুধুমাত্র রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর বান্ধবী নন, বরং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহা-সহ একাধিক সরকারি আধিকারিককেও গ্রেফতার করেছে ।