কলকাতা, 5 অগস্ট:রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি যত তদন্তের গভীরে যাচ্ছে, ততই দিনের পর দিন নিত্যনতুন তথ্য হাতে আসছে তদন্তকারীদের । এবার ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত 30 জুলাই আলিফের একাধিক কোম্পানির সন্ধান পেয়েছিলেন ৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জিপি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড ।
ইডি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা সেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি হলুদ রঙের ফাঁকা চালান উদ্ধার করেছিলেন । সেই সব চালান আটা সরবরাহের জন্য ছিল। তবে রহস্যজনক বিষয়টি হল উদ্ধার হওয়া চালানে কোথায়, কত পরিমাণ আটা পাঠানো হয়েছে, তার কোনও উল্লেখ ছিল না । তবে আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ওই সব চালানেই সরকার অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটারের স্ট্যাম্প ও সই রয়েছে ।
ইডির তদন্তকারীরা অনুমান করছেন যে চালান সেখানে রাখা থাকলেও, কাউকে কোনোদিন কোনও আটা সরবরাহ করা হয়নি । ইডির নজরে রয়েছে এই সব বিষয়েও । অন্যদিকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং আনিসুর ও তাঁর ভাইয়ের অ্যাকাউন্টের মধ্যে এতবার আর্থিক লেনদেন হয়েছিল, যা দেখে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরাই অবাক । সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷
উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে সম্প্রতি উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ এবং তাঁর ভাই আলিফ নুরকে গ্রেফতার করে ইডি । এর আগে উত্তর 24 পরগনার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী বলে পরিচিত বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ।
পরে ইডির তদন্তে জানা যায়, বাকিবুর রহমানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । তিনি সেই সময় আবার রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন । ফলে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেন । পরে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে এই ঘটনায় একাধিক প্রভাবশালীরা যুক্ত ৷ সেই সূত্রেই শেখ শাহজাহানের বাড়িতে চলতি বছরের 5 জানুয়ারি অভিযানে যায় ইডি ৷ সেইদিন আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকরা ৷
তার পর দু’মাস পর শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হয় ৷ তবে তিনি এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন ৷ তাঁকে সন্দেশখালি সংক্রান্ত একাধিক মামলায় প্রথমে পুলিশ গ্রেফতার করে ৷ পরে আদালতের নির্দেশে সিবিআই হেফাজতে যান শাহজাহান ৷ অন্যদিকে বাকিবুরের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করে আনিসুর ও আলিফের সম্বন্ধে তথ্য পায় ইডি ৷
তার পরই দেগঙ্গায় তল্লাশি চালানো হয় ইডির তরফে ৷ দেগঙ্গায় আনিসুর ও আলিফের ফ্ল্যাট চালকলে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা ৷ ইডি আধিকারিকরা আলিফের বেশ কয়েকজন আত্মীয় ও বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলেন । তাঁদের নাম পরিচয় নথিবদ্ধ করে নিয়ে আসেন তদন্তকারীরা । এবার তাঁদেরই নোটিশ পাঠিয়েছে ইডি ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই রেশন দুর্নীতির বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছেন গোয়েন্দারা ।
এছাড়াও তদন্তে নেমে আলিফ ও আনিসুরের একাধিক ব্যবসার হদিশ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ।জানা গিয়েছে যে আলিফ ও আনিসুরের নামে পূর্ব মেদিনীপুরে একটি বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । ইডি আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, সেই হোটেলেই নাকি মাঝেমধ্যেই মিটিং বসত । সেই হোটেলে নাকি একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা আসতেন । খুব সম্ভবত সেখানেই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের নীল নকশা সাজাতেন আলিফ ও আনিসুর । প্রয়োজনে ওই হোটেলেও তল্লাশি চালাতে পারে ইডি ৷